দুর্নীতি ও অর্থপাচারের ঘটনায় বহুল আলোচিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য শিক্ষা শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনকে দুই মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নাকচ করে আবজালকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ।
সংশ্লিষ্ট কোর্ট অফিসার মো. আল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বছরের ২৭ জুন আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ২৮৪ কোটি টাকা পাচার, ৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত বা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও আট কোটি টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা) ঢাকা-১-এ করা মামলা দুটির মধ্যে প্রথমটিতে রুবিনার সঙ্গে তার স্বামীকে আসামি করা হলেও দ্বিতীয়টিতে শুধু আবজালকে আসামি করা হয়।
মামলাগুলো মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনের ২৬ (২) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম।
এক মামলায় বলা হয়, রুবিনা খানম ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা মানিলন্ডারিং (পাচার, স্থানান্তর ও রূপান্তর) করেছেন। আর তথ্য গোপন করেছেন পাঁচ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার ৯২৬ টাকার। এ ছাড়া ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার ৪৪ টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
এজাহারে বলা হয়, আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানম নিজ নামে ট্রেড লাইসেন্স খুলে তার স্বামীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ঠিকাদারি শুরু করেন। তারা কথিত ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সংশ্লিষ্ট মালামাল সরবরাহের নামে অবৈধ প্রক্রিয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন।
রুবিনা তার স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নিজ নামে, তাদের মালিকানাধীন রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও রূপা ফ্যাশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ২৭টি হিসাব খোলেন। ওইসব হিসাবে সন্দেহজনক ও অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে ২৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৩ টাকা জমা হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা তুলে নেওয়া হয়। এসব টাকা পাচার ও পাচারের যড়যন্ত্র করেন আবজাল-রুবিনা।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রুবিনা খানমের নিজ নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে পাঁচ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার ৯২৬ টাকা ছিল জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত। এ ছাড়া অপরাধলব্ধভাবে তিনি আয় করেন ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার ৪৪ টাকা।
অপর মামলায় আবজালের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা মানিলন্ডারিং, দুই কোটি এক লাখ ১৯ হাজার ৭৮৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও চার কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত থেকে একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেন করেন আবজাল, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। তিনি তার অ্যাকাউন্টে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা অবৈধভাবে জমা করে ও তুলে নিয়ে অপরাধ করেছেন। আবজালের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দুই কোটি এক লাখ ১৯ হাজার ৭৮৫ টাকা জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত। তার অপরাধলব্ধ আয় চার কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকা, যা তার ভোগ দখলে আছে।
দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া আবজাল হোসেনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। গত ২১ জানুয়ারি তাকে সম্পদ বিবরণীর নোটিস দেওয়া হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি সম্পদের হিসাব দাখিল করেন।
ওই হিসাবে তিনি ৮৮ কোটি ৪৫ লাখ ৭২৭ টাকার সম্পদ থাকার ঘোষণা দেন। পরবর্তী সময়ে দুদকের দুই সদস্যের অনুসন্ধান দল তদন্ত শেষে এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করে।
এর আগে আবজাল-রুবিনার বিরুদ্ধে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি সরবরাহের নামে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়।