• ঢাকা
  • শনিবার, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মে, ২০২৪ ইং
চরভদ্রাসন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে গলাকাটা ফিস আদায়ের অভিযোগ

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে জমিজমার দলিল সম্পাদনের নামে দীর্ঘদিন ধরে গলাকাটা ফিস আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে চলেছেন ভুক্তভোগীরা। উক্ত অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী, পেশকার, মহুরী, বা সংশ্লিষ্টদের সিন্ডিকেটের পাকে পড়ে উপজেলার কৃষক শ্রমিক মজুর ও সাধারন পরিবারগুলো সরকার নির্ধারিত ফিসের অতিরিক্ত মোটা অংক ব্যায় করে দলিল সম্পাদন করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অফিসের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ফিস আদায়ের তালিকা টানানো থাকলেও তা কেউ মানছেন না। উক্ত তালিকায় বিভিন্ন প্রকৃতির দলিলের মধ্যে সাফ-কবলা, হেবা ঘোষনাপত্র, দানপত্র ও বন্ধকি দলিল সম্পাদনের জন্য পৃথক ফিস উল্লেখ রয়েছে। তারপরও উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের স্বেচ্ছাচারীতায় জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত মোটা অংকের টাকা। ফলে উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে মোটা অংক অর্থদন্ড দিয়ে চলেছেন জমি ক্রেতারা।

জানা যায়, প্রতিটি হেবা-ঘোষনাপত্র দলিল রেজিষ্ট্রির জন্য সরকার নির্ধারিত ফিস রয়েছে মাত্র ১২৩০ টাকা। কিন্ত ৫০ লাখ টাকা মূল্যমানের হেবা-ঘোষনাপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য উক্ত অফিসে গিয়ে একজন জমি ক্রেতার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্ততঃ ৬০ হাজার টাকা। এ ব্যপারে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গেলে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের এক মহুরী জানান, “প্রতিটি দলিল সম্পাদনের বিপরীতে দলিলে উল্লেখিত জমির মোট মূল্যের উপর ১% টাকা অফিসকে দিতেই হবে। এই ১% টাকা অফিসকে না দিলে দলিল সম্পাদন হয় না। এছাড়া অফিসের মহুরী ও অন্যান্য কর্মচারীদেরও খরচ রয়েছে। তাই ৫০ লাখ টাকা মূল্যমানের একটি হেবা-ঘোষনাপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ লেগে যায়। তিনি আরও জানান, অত্র সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস একটি সিন্ডিকেট করে রাখা হয়েছে বিধায় জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে মোটা অংক না নিয়ে দলিল সম্পাদন করা সম্ভব হয় না”।

এছাড়া সাফ-কবলা দলিল সম্পাদনের জন্য সরকারি ফিস হচ্ছে জমি মূল্যের প্রতি লাখে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে। সেখানে ওই অফিসের মহুরীরা জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতি লাখে প্রায় ১০ হাজার টাকা করে। আবার অফিসকে দিতে হচ্ছে জমির মোট মূল্যের আরও ১% টাকা। এতে উপজেলার জমি ক্রেতারা প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত অর্থদন্ড দিয়ে চলেছেন। ওই দিন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদন করতে এসে উপজেলার কেএম ডাঙ্গী গ্রামের শেখ আক্কাস জানায়, “ ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জমির দলিল সম্পাদন করার জন্য সরকারি ফিস বাবদ এক মহুরী আমার কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়া অফিস ও অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ২০ হাজার টাকা সহ দলিল সম্পাদনের জন্য আমার প্রায় ২ লাখ টাকা লেগে গেছে”। কিন্ত উক্ত দলিলটি সম্পাদনের জন্য ৭৫ হাজার টাকা সরকারি ফিস আদায়ের বিধান রয়েছে।

আরেক জমি ক্রেতা শহিদুল ইসলাম প্রামানিক জানায়, “দানপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য ২% উৎস্যকর নেওয়ার কোনো বিধান নাই। কিন্ত অত্র সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মহুরীরা আমাদের কাছ থেকে ২% উৎস্যকরের টাকা সহ অফিস খরচ বাবদ অতিরিক্ত ১% এর টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর এসব অতিরিক্ত অর্থ না দিলে বিভিন্ন আইনী জটিলতা দেখিয়ে দলিল সম্পাদন বন্ধ রাখা হয় বলেও তিনি জানান”।

এ ব্যপারে উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার কামরুল হাসানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “আমি মাত্র চার সপ্তাহ ধরে অত্র অফিসের দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিটি দলিল সম্পাদনের জন্য অফিসকে অতিরিক্ত ১% টাকা দিতে হয় বলে আমার জানা নাই। তবে অত্র অফিসে যদি এরকম কোনো কিছু চলতে থাকে তাহলে আমি তা বন্ধের জন্য ব্যাবস্থা নেব”। এ সময় উক্ত অফিসের পেশকার পান্নু মিয়া জানান, “ দলিল লেখকরা পার্টির কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে পারে, কিন্ত আমাদের দেইমেই করে বুঝ দেয়”। এছাড়া উক্ত সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিলের একটি নকল উঠাতে সরকারি ৩৩০ টাকা ফিসের স্থলে জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
#
মোঃ মেজবাহ উদ্দিন
চরভদ্রাসন, ফরিদপুর
তাং-২৫/১১/২০২৩খ্রি.

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।