হংকংয়ের বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের পুনরায় সংক্রমণের প্রথম নিশ্চিত হওয়াও ঘটনার কথা জানিয়েছেন। ৩৩ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি গত মার্চ মাসে প্রথমবার এবং চলতি মাস আগস্টে দ্বিতীয়বারের মতো ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এ খবরে মানুষ নতুন করে উদ্বিগ্ন। তবে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা বলছেন বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণের প্রায় নয় মাস পেরিয়ে গেলেও পুনরায় সংক্রমণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের হাতে শক্ত প্রমাণ নেই। তবে ভাইরাসবিদরা বুঝতে পেরেছেন যে করোনাভাইরাসের পুনরায় সংক্রমণ সাধারণ বিষয়। ভাইরাসটি থেকে সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে প্রতিরক্ষামূলক ইমিউনিটির বৈশিষ্ট্য কতদিন স্থায়ী হবে, তা নির্ধারণের জন্য ইমিউনোলজিস্টরা কঠোর পরিশ্রম করছেন।
সংক্রমণ থেকে সেরে উঠলে আমাদের শরীর ভাইরাসটির প্রতি অভেদ্য হয়ে ওঠে না, পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে তারা ইনহসপিটেবল হোস্টে পরিণত হয়। অর্থাৎ ভাইরাসটি ওই শরীরে আর বসবাস করতে পারে না। সেরে ওঠার বিষয়টি বিবেচনা করলে আমাদের শরীরে প্রায়ই এ রকম ঘটনা ঘটে। যেমন শ্বাসনালির কোষ, ভাইরাসটি এখানে প্রবেশ করে আরামদায়ক আশ্রয়স্থল লাভ করে এবং আরো ভাইরাস উৎপাদন শুরু করে। প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়ায় ভাইরাসটি মারা যাওয়ার পর কয়েক মাস পরের ভবিষ্যৎ সংক্রমণ রোধে এই টার্গেট কোষগুলো যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্তিত হয় না। অ্যান্টিবডি ও মেমরি কোষগুলো (বি ও টি কোষ) যদি সাম্প্রতিক সংক্রমণ থেকে এগিয়ে থাকে তবে পুনরায় সংক্রমণ স্বল্পস্থায়ী হয় এবং হোস্ট খুব বেশি ভোগার আগেই বা হোস্ট বুঝতে পারার আগেই সংক্রমণটি দমন করা হয়।
এটাই হংকংয়ের রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে। দ্বিতীয় সংক্রমণের কোনো লক্ষণ তার মধ্যে দেখা যায়নি এবং বিমানবন্দরে নিয়মিত পরীক্ষার পরেই বিষয়টি আবিষ্কার হয়েছে। ভ্রমণ না করলে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার ব্যাপারে তিনি কি কখনো জানতে পারতেন? উত্তরটি সম্ভবত না। আরো মজার প্রশ্ন হলো দ্বিতীয় সংক্রমণের সময় তিনি কি সংক্রামক ছিলেন?
এ বিষয়ে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাল ইমিউনোলজির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক জানিয়া স্টমাটাকি বলেছেন, প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে লক্ষণহীন লোকেরা সংক্রামক এবং এ কারণে সঠিক পরামর্শ হলো অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়া এড়াতে এবং নিজে সংক্রমিত হওয়া রোধে আমাদের দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে। পূর্ববর্তী সর্দি থেকেও করোনাভাইরাস কিছু মানুষকে মেমরি টি সেল প্রদান করেছে, যা কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে এবং এটা ব্যাখ্যা করতে পারে কেন কিছু মানুষ মারাত্মক এ রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রথম সংক্রমণের ফলে একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা, যা অ্যান্টিবডিগুলো এবং মেমরি বি ও টি কোষের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তবে এ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভিন্ন লোকের মধ্যে বিভিন্ন হতে পারে। অবশ্যই এটা হার্ড ইমিউনিটি ক্ষমতা ও সময়কালের জন্য প্রভাব ফেলে। সুতরাং দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরক্ষামূলক ইমিউন প্রতিক্রিয়াকে প্ররোচিত এবং বজায় রাখার জন্য টিকা জরুরি। টিকা প্রাকৃতিক সংক্রমণের তুলনায় আরো শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী ইমিউন প্রতিক্রিয়া দিতে পারে এবং প্রয়োজনে বুস্টার টিকা দেয়ার মাধ্যমে এটাকে টিকিয়ে রাখা যেতে পারে। এ কারণে পুনরায় সংক্রমণের খবরে বিজ্ঞানীরা অবাক হননি।
গার্ডিয়ান