সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল গ্রাম। জামশেদপুর, ধলীপাড়া, মাখরগাঁও ও আমতৈল নিয়ে গঠিত বৃহত্তর আমতৈল গ্রামের মোট জনসংখ্যা পাঁচ হাজার ৫০০। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্য মতে, ঘনবসতিপূর্ণ এ গ্রামের প্রায় সাড়ে তিনশ মানুষ প্রতিবন্ধী, সিংহভাগই আবার শিশু।
গ্রামটির প্রতিবন্ধিতার এই হার সিলেটের সামগ্রিক হারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। মানবিক এ বিষয়টি নজরে আসে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার। তিনি বিষয়টি বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আনেন। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমলে নেন। তিনি আমতৈল গ্রামের প্রতিবন্ধীদের জন্য জনপ্রতি অর্থসহায়তা এবং উপহার সামগ্রী পাঠানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের সুস্থতা এবং ভবিষ্যতে সুস্থ প্রজন্ম নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমতৈল গ্রামের প্রতিবন্ধীদের দুর্দশার কথা প্রধানমন্ত্রীর গোচরে আনেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি তৎক্ষণাৎ আমলে নেন। তিনি রামপাশা ইউনিয়নের ৪৬১ জন প্রতিবন্ধীকে জনপ্রতি দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রতি পরিবারের জন্য একটি লুঙ্গি ও একটি শাড়ি উপহার হিসেবে বরাদ্দের জন্য ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করেন।’
এছাড়া আমতৈল গ্রামের প্রতিবন্ধী শিশুদের সুস্থতা এবং ভবিষ্যতে সুস্থ প্রজন্ম নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু নির্দেশনা দেন। গ্রামের সব প্রতিবন্ধীর সমস্যা যথাযথভাবে চিহ্নিত করে বিশেষ প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনতে বলেন। এছাড়া ওই গ্রামের সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউন্সেলিং করা; নিজ বাসস্থানসহ আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা; খাদ্যের সকল পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারি ওষুধ সরবরাহ এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে গ্রামটির সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় মাটি ভরাট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ সিস্টেম চালু এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের নির্দেশনা দেন। প্রতিবন্ধীদের চাহিদা মোতাবেক বহুমাত্রিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করে প্রতিবন্ধী স্কুল স্থাপন ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ, চাহিদামাফিক প্রয়োজনীয় সহায়ক উপকরণ যেমন- হুইল চেয়ার, ট্রাইসাইকেল, হেয়ারিং ডিভাইস ও দৃষ্টি সহায়ক উপকরণ সরবরাহের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
এক গ্রামে এত বেশিসংখ্যক প্রতিবন্ধী কেন— এমন প্রশ্নে বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস জানায়, এটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম। গ্রামের পরিবেশ খুবই অস্বাস্থ্যকর। দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, মাতৃকালীন স্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে এখানকার অনেক শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নিচ্ছে। কেউ বা আবার জন্মের পর বিভিন্ন অসুখে ভুগে প্রতিবন্ধী হচ্ছে। এছাড়া এখানে জন্মহারও অনেক বেশি।
তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীরের কাছ থেকে জানা যায় ভিন্ন তথ্য। তিনি বলেন, এ গ্রামের প্রায় সবাই একে-অন্যের আত্মীয়কে বিয়ে করছেন। বংশগত কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। গ্রামটিতে নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কের প্রবণতা বেশি। এ তথ্যের সত্যতাও মিলেছে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে।
বিশ্বনাথ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী শনাক্ত করতে সর্বশেষ ২০১৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপ করেছিল জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। এর পর থেকে সমাজসেবা কার্যালয়ে এসেই প্রতিবন্ধীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কার্যালয়ে এনে নাম তালিকাভুক্ত না করালে তাকে গণনায় ধরা হয় না। এ পর্যন্ত উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী হিসেবে জরিপের আওতায় এসেছে ৫৯৯ জন। জরিপের আওতার বাইরেও কিছু প্রতিবন্ধী থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। তারা জানান, এ ইউনিয়ন তথা পুরো উপজেলার মধ্যে আমতৈল গ্রামেই সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী রয়েছে। জরিপের আওতায় আসাদের মধ্যে ৩৫০ প্রতিবন্ধীই আমতৈল গ্রামের বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে আমতৈল গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল খায়ের ও রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীরের ভাষ্য, এ গ্রামে প্রতিবন্ধী লোকের সংখ্যা প্রায় ৪০০। এর মধ্যে তিন শতাধিকই শিশু।