নিরঞ্জন মিত্র (নিরু)(ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
দেশে চিনি, ভোজ্য তেল সহ কয়েকটি পণ্যের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে এবং এ জন্য কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া। এ ধরণের সংকট এড়াতে আমদানি হয় এমন কিছু পণ্য স্বনির্ভর হওয়ার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশে। আমাদের দেশে প্রতিবছরই বিভিন্ন সময়ে চিনি, ভোজ্য তেল, পেয়াজ, রসুন ও ডালের মতো জরুরি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, বিশ্ববাজারে সরবরাহ কম থাকায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে বলেই তার প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারে।
দেশে ভোজ্য তেলের বছরে বর্তমান চাহিদা প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন, যার সত্তর শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি উর্ধগতির কারণে এসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে, (২৯ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও পণ্য বিপণন মনিটরিং কমিটির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন বর্তমানে বিদেশে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম উর্ধগতীতে, যার বাজার ৭ শত ডলার থেকে ১৪০০ ডলার এর মধ্যে। বাংলাদেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা যেখানে ১০ দশমিক ৫১ লাখ মেট্রিন টন, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৩ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এখন ১৮ গ্রাম তেলের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে বছরে চাহিদা থাকলেও দেশে উৎপাদন হচ্ছে কম। সেই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা উচ্চ লাভের আশায় বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে পণ্যের মুল্য উর্ধগতিতে নিয়ে যাচ্ছে। প্রধান অতিথি আরো জানান, সেবাখাত মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্জিত ৪৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের চেয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বা ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পণ্যখাতে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার ও সেবাখাতে ৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্ব মহামারীর ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জনগনের দোড় গোড়ায় ভোক্তা চাহিদা অব্যহত ছিল। এ ছাড়াও দেশ ও দেশের বাইরে কোভিড মহামারি এবং আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি অনুকুলে না আসা পর্যন্ত জনগনের ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার সর্বদা বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের ফল স্বরুপ কৃষি খাতে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। কোভিড -১৯ মহামারি স্বত্তে¡ও বাংলাদেশের রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করলে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে যা অত্যন্ত ইতিবাচক। সেই তুলনায় দেশের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনমাফিক আমদানি কৃত পণ্য ভোক্তার দোড় গোড়ায় পৌছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষকদের মুখে হাসি ফুটানোরসহ তাদের ন্যার্য দাবি আদায়ের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এসময় কৃষকদের ন্যার্য দাবির কথা তুলে ধরে সচিব বলেন উৎপাদিত পণ্যের ন্যার্য মুল্য কৃষরা না পেলে, ভবিষ্যতে ঐ পন্য উৎপাদন হৃাস পাবে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই দেশের স্বার্থ রক্ষাসহ ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে কৃষকদের পন্য উৎপাদনে সরকারি ভাবে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান (বিপিএম সেবা), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায়, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নুরুল্লা আহসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুল আলম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোঃ সোহেল শেখ, করিম গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর, জেলা বাজার কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার আশিক আহম্মেদ, সিভিল সার্জন অফিসের খাদ্য পরিদর্শক মোঃ বজলুর রশিদ খান, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রেজভী জামান, প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, ভোক্তা অধিদপ্তর জেলা কমিটির সদস্য আসমা আক্তার মুক্তা, শিপ্রা গোস্বামী প্রমূখ।
এসময় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও পণ্য বিপণন মনিটরিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, সুশীল সমাজ, জেলার ব্যবসায়ীসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।