• ঢাকা
  • বুধবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
ভাঙনে দিশেহারা গ্রামবাসী, মধুমতি গিলেছে সড়ক ভিটা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলা এলাকায় মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত পনের দিনে মধুমতি পাড়ের টগরবন্দ, গোপালপুর, বুড়াইচ, বানা ও পাচুড়িয়া ইউনিয়ন এবং কামারখালী ইউনিয়নে তীব্র আকার ধারণ করেছে মধুমতির ভাঙন।  প্রতিদিনই ভাঙছে নদীর পাড়। এতে পাকা সড়ক, বাড়িঘর, কৃষি জমি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গাছপালা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বাজড়া, চর আজমপুর, চরডাঙ্গা, চাপুলিয়া, চরধানাইড়, শিকিপাড়া, চাপুলিয়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রাম ও মধুখালি উপজেলার গয়েশপুর, চরগয়েশপুর, মছলন্দপুরসহ বীরশ্রেষ্ট মুন্সি আব্দুর রউফের জাদুঘরটি। চরম শঙ্কায় দিন কাঁটছে মধুমতি পারের মানুষের।

ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকে খোলা আকাশের নিচে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এতে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাঁটছে তাদের। কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছনে না বলে অভিযোগ করেছেন নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্হ্য এলাকার বাসিন্দারা।

এদিকে ভাঙন ঠেকাতে অনেক আকুতি, মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও কোনো কাজ হয়নি বলে অভিযোগ স্হানীয় বাসিন্দাদের।

শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গত পনের দিন ধরে মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকশ বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বাজড়া, চর আজমপুর, চরডাঙ্গা, চাপুলিয়া, চরধানাইড়, শিকিপাড়া, চাপুলিয়া, চরনারানদিয়া, বাঁশতলাসহ প্রায় ১২টি গ্রাম এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মাঝে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের আসা যাওয়ার একমাত্র গোপালপুর-চরডাঙ্গা মেইন পাকা সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেছে চাপুলিয়া গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ন কেন্দ্রের ৬৫ টি বাড়ি, বাজড়া পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ, চরআজপুর গ্রামের প্রায় ৩০টি বাড়িসহ নানা স্হাপনা। এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি গ্রামের বসতবাড়ি ও নানা স্হাপনা। ভাঙন ঝুঁকিতে গত এক সপ্তাহে উপজেলার চর আজমপুর গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার তাদের বসতঘর ভেঙ্গে অন্য এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, রাস্তা রক্ষায় ও নদীর ভাঙন রোধে  জিও ব্যাগের যে কাজ হচ্ছে তা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। সেটাও করা হচ্ছে খুব ধীরগতিতে। ফলে প্রতিনিয়ত ভাঙছে নদীর পাড়। এতে হুমকির মুখে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, দোকানপাটসহ অসংখ্য বাড়িঘর। বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে এখন তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।

টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল শেখ জানান, ভাঙন ঠেকাতে এলাকাবাসী কয়েকবার মানববন্ধন করেছে। সময় মতো যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড পদক্ষেপ নিতো তাহলে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হতো না। এখনতো আমাদের মাথা গুজার জায়গাটুকু নেই। এ এলাকাকার অন্তত ৩০টি বাড়িঘর নদীতে খেয়ে ফেলেছে বলে তিনি আরও জানান।

বাজড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, নদী আমার বাড়ি থেকে অল্প কয়েক গজ দূরে। এ বছর বাড়ি মনে হয় আর থাকবে না। আমাদের এলাকায় গত কয়েকদিনে নদীর পাড়ে থাকা ২০-২৫টি পরিবার তাদের বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকেই যাওয়ার জন্য বাড়ি ঘর ভাঙতে শুরু করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্হ্য এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলছে বাজড়া সীমানায়। গত বছর যেখানে বস্তা ফেলা হয়েছে এবছরও সেখানে বস্তা ফেলা হচ্ছে। অথচ এখন নদী ভাঙছে চর-আজমপুর, রায় পানাইল, গোপালপুর-চরডাঙ্গা মেইন সড়ক এবং পাচুড়িয়ার চরনারানদিয়া ও বাঁশতলা এলাকা। এক মাস হলো বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এ বছর চর-আজমপুর মেইন রাস্তার পাশে বস্তা ফেললে আজ এই রাস্তা ভাঙতো না।

টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম হাচান শিপন ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, আমরা বহুবার নদী ভাঙন রোধে স্হানীয় এমপি, প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেছি। ভাঙন রোধে স্হায়ী বাঁধের কোনো ফল পাইনি। বর্ষার মৌসুমে যখন ভাঙনের তান্ডব শুরু হয় তখন মানুষকে সান্তনা দেয়ার জন্য শুধুমাত্র কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিছু কিছু এলাকায় এখনো জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্হায়ী বাঁধের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুর রহমান জানান, ভাঙন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্হ্যদের ১০ কেজি করে চালের ব্যবস্হা করা হয়েছে। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জানান, ক্ষতিগ্রস্হ্য’ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্হ্য’দের তালিকা করা হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। প্রাথমিক অবস্হায় তাদের ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার ব্যবস্হা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার জানান, ভাঙন রোধে বর্তমানে ১৭৫ কেজির ৩০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরো ফেলা হবে। মধুমতির ভাঙন এলাকা আলফাডাঙ্গা ও মধুখালীতে প্রায় ১১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকা।

ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বলেন, ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্হ্য এলাকায় স্হায়ী বাঁধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প তৈরি করছে। এ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আমি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।