• ঢাকা
  • রবিবার, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মে, ২০২৪ ইং
ক্ষমিও হে শিক্ষাগুরু!

ছবি - রেজাউল করিম

ক্ষমিও হে শিক্ষাগুরু!

চমৎকার ইংরেজি জানতেন তারাপদ স্যার। শিক্ষকতার পাশাপাশি সুদীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সময় ইংরেজি দৈনিক ‘দি অবজারভার’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। ইংরেজির জটিল ও খুটিনাটি সব সমস্যার সমাধান দিতে পারতেন তিনি। বই পড়তে ভালোবাসতেন। রবীন্দ্রনাথ এর অনেক কবিতা মুখে মুখে আওড়াতেন । শিক্ষকতার প্রথম জীবনে উচ্চতর গণিত করালেও পরবর্তীতে ইংরেজি হয়ে ওঠে তাঁর ধ্যান জ্ঞান । হাজার,হাজার শিক্ষার্থীদের কাছে অকাতরে বিলিয়েছেন দেশপ্রেমের মন্ত্রণা।

স্যারের কাছ থেকে সুশিক্ষা গ্রহন করে স্যারের ছাত্ররা সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিচরণ করছেন। বড় আমলা, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সমাজের নানা স্তরে স্যারের ছাত্ররা বুক চিতিয়ে বলে আমরা তারাপদ স্যারের ছাত্র। আজীবন অকৃতদার থাকায় ছাত্ররাই ছিলো তাঁর সন্তান। সবাইকে দেখতেন সমান চোখে,ভালোবাসতেন হৃদয় ভরে। আমিও স্যারের অকৃতিত্ব অধম ছাত্র হওয়ায় স্যারের স্নেহাশিস, বুকভরা ভালোবাসা ও আনুকূল্য পেয়েছি। ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে স্যারের বাসায় গিয়ে হাজির হলে স্যার তাঁর জীবনের অনেক গল্প শুনিয়েছেন। জীবন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন।

সেদিন রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা শোনাতে গিয়ে ভুলে যাচ্ছিলেন, খাট থেকে নেমে বুকশেলফ থেকে টেনে বের করে আনলেন মলাটবিহীন ‘সঞ্চয়িতা’।পড়ে শোনালেন। বড়ই মুগ্ধ হলাম স্যারের কবিতা পাঠের অনুরাগ দেখে। ছবিও তুললাম। তারপর বিদায় বেলায় কষ্ট হচ্ছিল স্যারকে ছেড়ে আসতে। আজ স্যার আমাদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন…। ভাবতেও পারিনি আজই চলে যাবেন। সকাল ১১ টায় তাঁর খবর জানার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। তাঁর ঘনিষ্ট আত্মীয় বাদল ঘোষের সাথে কথা হয়। তিনি জানালেন স্যার ভালো আছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ১০০%। চিত্ত দা,শিপ্রাদি, বাদল দা আমাকে একজন লোক ঠিক করে দেয়ার কথা বলেছিলেন। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জনকে ফোন করে একজন লোক ঠিক করেছিলাম স্যারের দেখভাল করার জন্য। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাদলদাকে ফোন করে আবারো জানলাম স্যার ভালো আছে। কিন্তু হায় ১ ঘন্টা বাদে বাদল দা জানালেন স্যার নেই।

মৃত্যুর ১০মিনিট আগেও তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিলো ৯৭%। স্যার বাথরুম থেকে এসে কেবিনের বিছানায় বসে বললেন- “আই এ্যাম রেডি নাও” তারপর বিষাদ ঘোরে ভাসিয়ে গেলেন সবাইকে ।

করোনার মহামারিতে আমরা সবাই অসহায় হয়ে পরলাম যে…। ক্ষমিও হে শিক্ষাগুরু।

লেখক :- রেজাউল করিম,সাংবাদিক ( বাসস) ও ইংরেজি শিক্ষক (ফরিদপুর সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) এর ফেইসবুক থেকে সংগৃহিত।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।