মাহবুব হোসেন পিয়াল,২০ এপ্রিল,ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি ঃ
আজ ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দর রউফ এর ৫০ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। ২০ এপ্রিল এই দিনে ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদের সাথে সম্মুখ সমরে তিনি সাবেক পাবর্ত্য চট্রগ্রাম বর্তমান রাংগামাটি জেলার নানিয়ারচর থানার বুড়িঘাট নামক স্থানে শহীদ হন।
মুন্সী মেহেদী হাসান ও মকিদুননেছার একমাত্র পুত্র সন্তান মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের মে মাসে বর্তমান ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের রউফ নগর (সালামাতপুর) গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১১ বছর বয়সে তার বাবার মৃত্যু হয়। এর পর আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া সম্ভব না হওয়ায় তিনি তৎকালীন ইপিআর এ ১৯৬৩ সালের ৮ মে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ১৩১৮৭।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি তার উইংয়ে কর্মরত অবস্থায় ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মেশিন গানার হিসেবে ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডারের অধীনে রাঙ্গামাটির মহালছড়ি নৌপথ অঞ্চলে বুড়িঘাট নামক স্থানে চিংড়িখালের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। ‘৭১ এর ২০ এপ্রিল পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে মুন্সী আব্দুর রউফের মেশিন গানের গুলিতে পাকবাহিনীর দুটি লঞ্চ, একটি স্প্রীডবোড ডুবে পাকবাহিনীর দুই প্লাটুন সৈন্যের সলিল সমাধি ঘটে। এ সময় হঠাৎ প্রতিপক্ষের নিক্ষিপ্ত মটার সেলের আঘাতে তিনি শহীদ হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ন কৃতিত্তের জন্য সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধীতে ভূষিত করেন।
ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ শহীদ হবার দীর্ঘ ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে বুড়িঘাট নিবাসী জ্যোতিষ চন্দ্র চাকমা ও দয়াল কৃঞ্চ চাকমার সহায়তায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ এর কবরের স্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হন। ১৯৯৭ সালে সেখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়।
বিগত ২০০৮ সালে ২৮ মে তার নিজ গ্রাম সালামাতপুরের নাম রউফ নগর রাখা হয়। ওই বছরেই তঁার নামে নিজ গ্রাম রউফ নগরে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ফরিদপুর জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৬৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থগার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া তঁার নামে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজ, গন্ধখালী বীরশ্রেষ্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়, সাভারে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ গেট, ঢাকায় বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আব্দুর রউফ রাইফেলস স্কুল এন্ড কলেজ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
এদিকে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দর রউফ এর ৫০ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী মঙ্গলবার ফরিদপুরে মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের রউফ নগর (সালামাতপুর) গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থগারে নানা কর্মসুচি গ্রহন করা হয়। দুপুর ১টার দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মধুখালী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ মোস্তফা মনোয়ার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় মধুখালী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মুরাদুজ্জামান মুরাদসহ স্থানীয় গন্যমান্যব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।পরে এক মিনিট নিরবতা পালন,দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদুর রহমান বাবু বিশ্বাস। এর আগে সকাল সাতটায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বীরশ্রেষ্ঠের বোন জোহরা বেগম। এ ছাড়া বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের উদ্যোগে কোরআন খানী ও রাতে তারাবির নামাজের পর স্থানীয় সালামতপুর জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।