সারা পৃথিবী করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে জর্জরিত। সংক্রমণ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানী থেকে চিকিৎসক মহল। কিন্তু কোনও কিছুতেই যেন সামাল দেওয়া যাচ্ছে না এই মারণ ভাইরাসকে। বিশেষজ্ঞদের মতে কোমর্বিডিটি যুক্ত রোগীদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এর মধ্যে একটি হল মধুমেহ বা ডায়াবেটিস। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, কোভিড-১৯ এর বাড়াবাড়ির মূলে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। যার ফলে বহু রোগীই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ডায়াবেটিসের প্রকোপ খুবই বেশি। ৩০ বছর পেরোতে না পেরোতেই বহু মানুষ এই জটিল রোগের কবলে পড়ছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার ১০ বছর বয়সেও ডায়াবেটিস ধরা পড়ছে, যা জুভেনাইল ডায়াবেটিস নামে পরিচিত।
চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ার পাশাপাশি বেড়ে যায় রোগের জটিলতাও। সুতরাং আপনিও যদি ডায়াবেটিস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে সাবধান হন। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি।
করোনা ভাইরাস : দাড়ি থেকেও আপনি ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন, দেখুন এর থেকে বাঁচার পদ্ধতি
১) মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোওয়া, শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি কোভিডের সুরক্ষাবিধি মেনে চলুন।
২) চেষ্টা করুন বাড়ির বাইরে এই সময় না বেরোনোর। বাড়ির কাজ অন্যান্য সুস্থ সদস্যদের দিয়ে করান।
৩) বাইরে বেরোলে ত্রিস্তরীয় যুক্ত মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে। মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব এবং বাড়ি ফিরলেই সঙ্গে সঙ্গে ভালো করে হাত-পা-মুখ সাবান জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিহিত কাপড়গুলি পরিবর্তন করে সাবান জলে কেচে নিতে হবে।
৪) ডায়াবেটিক কিটো-অ্যাসিডোসিস বা ‘DKA’ নামের সমস্যা হলে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এক্ষেত্রে করোনা লক্ষণের সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। কারণ, ‘DKA’ খুবই জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
৫) ধূমপান করা চলবে না। পাশাপাশি মদ্যপানও বন্ধ রাখুন। এগুলিতে রোগের জটিলতা আরও বৃদ্ধি পায় এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৬) অন্যান্য দিনের মতোই রুটিন মেনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিসের ঔষধ খেতে থাকুন। ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা করবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খাবেন।
৭) প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। কারণ সুগারের ঔষধ খাওয়ার পর জল বেশি পরিমাণে না খেলে সমস্যা দেখা দেয়।
৮) সকাল সন্ধ্যা ব্যায়াম করুন, এতে ওজন নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সুগারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৯) সুগার হঠাৎ বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১০) করোনাকে নিয়ে ভয় না করে নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখুন। এতে আপনি আরও সুস্থ থাকবেন। সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
১১) বাড়িতে কোন অসুস্থ ব্যক্তি থাকলে তার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
কোভিডের উপসর্গ দেখা দিলে কী করবেন
১) করোনার সামান্য উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
২) ভয় না পেয়ে, কোভিডের টেস্ট না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী নিজেকে আলাদা ঘরে বন্দি রাখুন।
৩) আইসোলেশনে থাকার সময় ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ডায়াবেটিসের ওষুধ খান। করোনার ভয়ে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না, এতে বিপদ বাড়তে পারে।
৪) করোনা চিকিৎসা চলাকালীন ডায়াবেটিসের কোন কোন ওষুধ আপনি খেয়েছেন তা চিকিৎসককে জানিয়ে দেবেন। এতে আপনার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরও সুবিধা হবে।