যক্ষ্মা প্রতিরোধে ব্যবহৃত ব্যাসিলাস ক্যালমেট গুয়েরিন বা বিসিজি ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এবং আক্রান্তের পর মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে বলে দাবি করেছে ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট সায়েন্স’ নামের এক দাতব্য সংস্থা।
ওই সংস্থার চালানো গবেষণায় আরও বলা হয় করোনার বিস্তার রোধে অন্তত প্রথম মাস এই বিসিজি ভ্যাকসিন ভূমিকা রাখে।
‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ মেডিক্যাল জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে৷ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের মার্থা বার্গ।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারি ঠেকাতে যখন সম্ভাব্য ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে মরিয়া প্রচেষ্টা চলছে, তখন এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। এতে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রথম ৩০ দিনের মধ্যে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের এত মৃত্যু ও সংক্রমণ হতো না; যদি দেশটির সরকার কয়েক দশক আগে সবার জন্য বিসিজি ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করত। গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিসিজি ভ্যাকসিনের নীতি কার্যকরী হতে পারে।
যক্ষ্মার প্রতিষেধক হিসেবে শিশুর জন্মের ১৫ দিনের মধ্যে বিসিজি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে থাকে। চীন এবং ভারতের মতো দেশে বিসিজি ভ্যাকসিন প্রয়োগকে সরকারি কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে৷ এই দেশগুলিতে মৃত্যু হারও তুলনামূলক ভাবে কম৷ করোনার বিরুদ্ধেও বিসিজি প্রতিষেধক কার্যকরী কি না, এই নিয়ে গত ৮ মাসে কম চর্চা হয়নি৷
চিকিৎসকদের একাংশেরও দাবি, এই দেশগুলিতে বিসিজি ভ্যাকসিনই মানুষকে করোনার প্রাণঘাতী ছোবল থেকে রক্ষা করছে৷
এই গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা ১৩৫টি দেশে নতুন শনাক্তের দৈনিক হার এবং ১৩০টি দেশে সংক্রমণের শুরুতে প্রথম এক মাসে মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বাধ্যতামূলক বিসিজি ভ্যাকসিন কর্মসূচি করোনার বিস্তারের বক্ররেখার সমরূপতার সঙ্গে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
তবে গবেষকরা বিসিজি ভ্যাকসিনকে করোনার বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর বা ম্যাজিক বুলেট হিসেবে তুলে ধরেননি। তারা সতর্ক করে বলছেন, এই বিষয়ে আরও পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিসিজি বাধ্যতামূলক দেশগুলোতেও করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভিন্নতা ছিল। এর অর্থ হলো, করোনা ঠেকাতে বিসিজি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতায় অতিরিক্ত সামাজিক ভ্যারিয়েবলের প্রভাব রয়েছে।
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে গত ২৯ মার্চ পর্যন্ত আমেরিকায় ২ হাজার ৪৬৭ জনের মৃত্যু হয়৷
গবেষকরা দাবি করেছেন, আমেরিকায় যদি কয়েক দশক আগেই বিসিজি ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক থাকত, তাহলে সেই সংখ্যাটা কমে ৪৬৮-এর আশেপাশে থাকতে পারত৷
এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস-এর ডিন শশাঙ্ক যোশী একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিসিজি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ এবং করোনার সংক্রমণকে দমিয়ে রাখতেও এর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়৷’
উদাহরণ হিসেবে ওই চিকিৎসক পর্তুগালের কথা বলেছেন৷ দেশটিতে বিসিজি ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক৷ প্রতিবেশী দেশ স্পেনে করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছে পর্তুগাল৷
শশাঙ্ক যোশী আরও জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার অবনতি রুখতে তাদের শরীরে বিসিজি প্রতিষেধক পুনরায় প্রয়োগ করা যায় কি না, সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রে ২৫০ জন করোনা আক্রান্তের উপরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে মৃত্যু হার কমে কি না, তার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে৷ আগামী তিন মাসের মধ্যে এই পরীক্ষার ফলাফল চলে আসতে পারে৷