নিরঞ্জন মিত্র ( নিরু)
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ( সগবি) ফরিদপুর কর্তৃক আয়োজিত গত ১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাঘিয়া গ্রামে উচ্চ ফলনশীল ও পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী বারি সরিষা-১৮ জাতের উৎপাদন কার্যক্রমের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী সদরের মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ মিয়া। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ।
এসময় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন বর্তমানে দেশে প্রায় ৫.৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয় যা থেকে প্রায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন তেল পাওয়া যায়। এদেশের কৃষকরা সাধারণত স্থানীয় জাতের সরিষার আবাদ করে থাকে যার হেক্টর প্রতি গড় ফলন মাত্র ৮৫০ কেজি বা প্রতি শতাংশে ৩.৫ কেজি। যেসব কৃষকেরা দীর্ঘমেয়াদী (১০০-১২০ দিন) সরিষার জাত ব্যবহার করতে চান, তারা ঝাঁঝমুক্ত বারি সরিষা-১৮ (ক্যানোলা জাত) ব্যবহার করতে পারেন যা রান্নার তেল হিসেবে ব্যবহার হয়। বারি সরিষা-১৮ জাতের তেলে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ১.০৬% যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশে চাষকৃত অন্যান্য উন্নত সরিষার জাতে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ৪০%-৪৫%। পরিমাণ মত সার ও সেচ প্রয়োগে এ জাত ২.০-২.৫ টন/হেক্টর (৮-১০ কেজি/শতাংশ) পর্যন্ত ফলন দেয়। বারি সরিষা-১৪ চেয়ে বারি সরিষা-১৮ শতাংশে প্রায় ২ থেকে ৬ কেজি বেশী ফলন দিয়ে থাকে। তাই, নতুন জাত আবাদে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হয় ও খুব সহজে তাদের প্রচলিত ফসল ধারায় খাপ খাওয়াতে পারেন। ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ( বারি) তত্তাবধানে প্রায় ৯ বিঘা জমিতে বারি সরিষা-১৮ এর আবাদ করা হয়েছে। কৃষকদের নতুন জাত ও প্রযুক্তি দ্বারা সরিষা আবাদের জন্য প্রধান অতিথি অনুরোধ করেন। এর ফলে দেশে তেলের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হবে।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বারি) অঞ্চল প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বারি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এ.এফ.এম. রুহুল কুদ্দুস।
এসময় মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আগত অর্ধশতাধিক চাষী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সগবি, বারি, ফরিদপুরের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত বৈজ্ঞানিক সহকারীবৃন্দ এবং স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাজবাড়ীর এমএলটি সাইটের বৈজ্ঞানিক সহকারী রেজাউল করিম।
মাঠ দিবস সমাবেশে বারি সরিষা-১৮ জাত সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা দেন উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। অংশগ্রহনকারী কৃষকগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ প্রদান করেন। তাঁদেরকে সহায়তা করেন বৈজ্ঞানিক সহকারী। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী কৃষকগণ বারি সরিষা-১৮ এর প্রতি কৌতুহলী হন এবং এর আবাদে সুবিধা-অসুবিধা, আয়-ব্যয় ইত্যাদি সম্বন্ধে সম্যক ধারনা লাভ করেন। তাদের আবাদকৃত প্রচলিত তিন ফসল ভিত্তিক ফসল বিন্যাসে এ বারি সরিষা-১৮ জাতটির সন্নিবেশনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন।