স্বাস্থ্যের আলোচিত শত কোটি টাকার কেরানি আবজালের আরও হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। শুধু অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় খোঁজ পাওয়া গেছে তার বিলাসবহুল ২টি বাড়ি, ১৮টি অ্যাকাউন্ট ও ৩টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে দেশে-বিদেশে আবজালের আরও হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে। দুদক সূত্রে জানা যায়, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় শুধু বিলাসবহুল বাড়িই নয়, বিদেশে রয়েছে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আছে ১৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আলোচিত কেরানি আবজালের বিদেশে এরকম বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। তদন্তকারী কর্মকর্তারাও এখন হিমশিম খাচ্ছেন তার সম্পদের হিসাব কষতে।
কানাডার অন্টারিওতে একটি বাড়ি ছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বহিষ্কার হওয়া আলোচিত কেরানি আবজাল হোসেনের। গত বছরের ২৬ মার্চ বাড়িটি ৩ লাখ ৮৩ হাজার কানাডিয়ান ডলারে বিক্রি করে দেয় সে। অস্ট্রেলিয়ার প্রেস্টনের নিউ সাউথ ওয়েলসেও একটি রাজকীয় বাড়ি আছে আবজালের। কানাডার বাড়ি বিক্রির পর এ বাড়িটিও বিক্রি করতে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল সে। কিন্তু দুদক গোপনে তার এই চেষ্টার বিষয়টি জানতে পেরে তা আটকাতে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে।
দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান এ ব্যাপারে বলেন, সে দুটি বাড়ির মধ্যে একটি বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে। আরেকটি বিক্রির অপেক্ষায় আছে। আমাদের আইনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাড়িটি যাতে সে বিক্রি করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আমরা অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি।
শুধু বাড়ি নয়, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় তার ১৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে দুদক। দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সে তথ্য অনুযায়ী আমরা আমাদের তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তার অবৈধ সম্পদ যাতে সে বেহাত, বিক্রি এবং হস্তান্তর করতে না পারে সে ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে।
বিদেশে শুধু বাড়ি আর ব্যাংক অ্যাকাউন্টই নয়, রয়েছে তার বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ফাইভ ইন্টারন্যাশনালসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছে দুদক। সংস্থাটি মনে করছে, তাদের পাওয়া তথ্যের বাইরেও আরও সম্পদ থাকতে পারে আবজালের।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আলোচিত অফিস সহকারী আবজাল গত ২৬ আগস্ট সকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করে। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা দুই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিল আবজাল।
গত বছরের ২৭ জুন বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে আবজালের বিরুদ্ধে মামলা দুটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। দুই মামলার একটিতে তার স্ত্রী রুবিনা খানমও আসামি। প্রথম মামলায় রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার টাকার মানি লন্ডারিংসহ ২৮৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় বলা হয়, আবজালের অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্বপরিকল্পনায় নিজ নামে ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও রূপা ফ্যাশনের নামে তফসিলি ব্যাংকের ২৭টি হিসাবের মাধ্যমে ২৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও মানি লন্ডারিং করে, যা সন্দেহজনক অস্বাভাবিক লেনদেন হিসেবে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া রুবিনা খানম নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব দুদকে দাখিল করে, তাতে সে ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে। আর দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, সে ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে। এ কাজে স্ত্রীকে সহায়তার জন্য স্বামী আবজাল হোসেনকেও আসামি করা হয়।
আরেক মামলায় আবজালের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা মানি লন্ডারিং এবং ২ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ আনা হয় মামলায়।
সংবাদ সুত্র ঃ সময়েরআলো