পাড়ার সেলুন হোক বা চকচকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ঠাসা সেলুনেই হোক, চুল কাটার পর বা দাড়ি-গোঁফ ছাঁটা শেষ হলে ঘাড়-মাথা ম্যাসাজ না করিয়ে সিট ছাড়তে চান না অনেকেই। সেলুনের ওইটুকু আরাম যেন জীবনে লাখ টাকায় কেনা বিলাসিতা। এটুকু লোভ ছাড়তে না পেরে সেলুন থেকে বাড়ি ফিরেই হাড়ে হাড়ে টের পেতে পারেন সেটুকু আরামের মূল্য। চুল ছাঁটার পর নাপিতের অভ্যস্ত হাতের ম্যাসাজই ডেকে আনতে পারে চূড়ান্ত বিপদ!
তখন মাথায় তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে তড়িঘড়ি ছুটতে হয় হাসপাতালে। ধরা পড়ে, স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন তিনি! সামান্য আরাম দেওয়ার ম্যাসাজ থেকে প্রাণের ঝুঁকি! এও কি সম্ভব?
এ ব্যাপারে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এ ধরনের ম্যাসাজ যারা সেলুনে করে থাকেন, তারা অনেকেই খুব একটা অভিজ্ঞ নন। মানুষের শরীর, সেখানকার শিরা-ধমনি এগুলো সম্পর্কে তাদের ধারণাও খুব স্বাভাবিকভাবেই কম। তাই এ ধরনের ম্যাসাজে ঝুঁকি তো থাকেই। অনেক সময় অনভিজ্ঞ হাতে মস্তিষ্কের ভুল জায়গায় হঠাৎ চাপ পড়ায় মাথা এদিক-ওদিক করতে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান ধমনিটি ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। কখনো-বা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে রক্তসংবহন। স্নায়ুর রোগ তো হতেই পারে, এমনকি সমস্যা গড়াতে পারে স্ট্রোক পর্যন্ত। সাধারণত যেসব কারণে স্ট্রোক হয়, আজকাল সেসবের তালিকায় উঠে এসেছে এই ভুল ম্যাসাজের দিকটিও।’
ভারতের বেঙ্গালুরু স্ট্রোক সাপোর্ট গ্রুপের অন্যতম সদস্য ও স্নায়ুবিশেষজ্ঞ বিক্রম হুডেডের মতে, ‘মধ্য বয়সে স্নায়ুর রোগ ডেকে এনেছেন বা স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন, এমন অনেকের জীবনযাপন খতিয়ে দেখা গিয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই এমন ম্যাসাজ নেওয়ার অভ্যাস ছিল। সেখান থেকেই বেখাপ্পাভাবে কোনো একটা আঘাত ক্ষতি করেছে মস্তিষ্কের। কারো-বা ঘাড়ের শিরা ছিঁড়ে মৃত্যুও হয়েছে। ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন ডেকে আনার মতো ভুলগুলোর সঙ্গে এই স্বভাবকেও জীবনযাপনের অন্যতম একটি ‘দোষ’ হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। এমনিতে স্ট্রোক হওয়ার অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে জীবনযাপনের এই স্বভাবও অন্যতম।’
চিকিৎসকরা বলছেন, সেলুনে নেওয়া এসব ম্যাসাজ বাদ দিতে হবে অবশ্যই। নিজে নিজেও করা যাবে না এসব। ম্যাসাজ করাতে চাইলে বাড়িতে প্রশিক্ষিত কোনো ফিজিওথেরাপিস্ট বা ম্যাসিওরের (ম্যাসাজ বিশেষজ্ঞ) কাছ থেকেই করাতে হবে ম্যাসাজ। আপাতত এটিকে বিপদ ডেকে আনার অন্যতম কারণ হিসেবেই চিহ্নিত করছেন চিকিৎসকরা।