সকাল থেকেই আবদুল কুদ্দুস কাকার মেজাজ ও মনটা খারাপ। ওয়াশরুমে গিয়ে ব্রাশ করতে গিয়ে কাকীর কাছে এক বিরাট ধমক খেয়েছে। পরে অবশ্য নাশতাও খেয়েছে! ঘটনাটা হলো কাকা ব্রাশ করছে, করছে, করছে! কাকী ভেতরে এসে দেখলো ঠিক মত ব্রাশ করছে কিনা! এটা কাকী সবসময়ই করে। শুধু ব্রাশই নয়, কাকা যখন এক নম্বরে যায় কিংবা দুই নম্বরে যায় তখনও কাকী দরজা খুলে দেখে কী করছে। কাকার ছিটকিনি আটকানো নিষেধ! একবার হয়েছে কি জানেন, কাকা বাসায় টয়লেটের দরজার ছিটকিনি না আটকাতে আটকাতে ভুলেই গিয়েছিলো টয়লেটে যে ছিটকিনি আটকাতে হয়। ফলে একদিন বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে দুই নম্বর সাড়ার সময় এক ভদ্রলোক দরজা খুলেই ফেলল। কাকাও থতমত খেয়ে গেলো। ভদ্রলোক রেগে গিয়ে বলল, ‘দরজা আটকে নিবেন না! এটা তো আপনার বাসা নয়!’ কাকা ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বলল, অন্যায় কিছু তো করছি না। দেখলে কী হবে! কাকা ভাবল, বাসায় যে দরজা খোলা থাকে এ ব্যাটা জানলো কি করে! তাহলে সেও কি ছিটকিনি আটকাতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নন! আহা! বেচারা! যাইহোক কাকী নাক চেপে হলেও মুখ খুলে রাখে। ওটা অবশ্য সবসময়ই কাকীর খোলা থাকে! অনেকে বলে এটা হলো টেক কেয়ার! কাকী কাকার খুব টেক কেয়ার করে! কোথায় যায়, কি করে, কি করে না, কি খায়, কি খায় না, কার সাথে অফিসে মিশে, কে কাকার সাথে মিশে, মিলেমিশে আবার কি হয়, ফোনে কি বলে, কাকে বলে, কেন বলে, কখন বলে ইত্যাদি ইত্যাদি কাকীর নখদর্পনে! কাকা চাইলেও কাকীর টেক কেয়ারের বাইরে যেতে পারে না। লুকোচুরি করারও উপায় নেই। কাকীর কিছু গোয়েন্দা আছে। তাদের থেকে সব জেনে নেয়। এক নম্বর গোয়েন্দা হলো গাড়ীচালক। কাকা তাকে ‘মীর জাফর’ বলে ডাকে! কাকা মি. জাফরকে কিছু বলতেও পারে না। কারণ সে কাকীর একান্ত কাছের লোক! হিতে বিপরীত হতে পারে! আর কাকী তো টেক কেয়ার করার জন্যই তো এসব করে। নাকি! তবে কাকার এক বন্ধু বলে এসব টেক কেয়ার না রে পাগলা! এসব হলো সন্দেহ! আর তোকে মারার জন্য তথ্যসমৃদ্ধ ওজুহাত খোঁজা! আধুনিক মেয়েরা অনেক চালাক! তারা স্বামীকে দিয়ে বাসন কোসন মাজানোর জন্য নাম দিয়েছে ‘মডার্ন হাজবেন্ড’! অর্থাৎ তাদের ভাষায়, মডার্ন হাজবেন্ডরা অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় এসে রান্না করে, থালা মাঝে, ওভেনে খাবার গরম করে, ছুটির দিনে টয়লেট পরিষ্কার করে ইত্যাদি। তাহলে এখন আপনি কি মডার্ন হাজবেন্ড হবেন নাকি গেয়ো ভুত হবেন? এই শুনে কিছু স্বামী বলে, কি আমি গেয়ো!? দেখ সব কাজ করে দিচ্ছি! আর কিছু লোক তো আছেই মডার্ন শব্দ শুনলেই উত্তেজনায় নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না। হুম! আমাকে ওমন হতেই হবে! কুদ্দুস কাকার বন্ধু বলে, আরে পাগলা মডার্ন হাজবেন্ড বলে কিচ্ছু নেই। সব তোকে দিয়ে কাজ করানোর ধান্ধা! আর সে বসে ‘ বোঝে না সে বোঝে না’ দেখে আর কাঁদে! যাইহোক কাকা কেন কাকীর ধমক খেলো! কাকা শেভিং ক্রিম দিয়ে ব্রাশ করেই যাচ্ছে। কাকী এসে দেখলো পেস্টের গন্ধ অন্যরকম! হাত দিয়ে চেক করে দেখলো শেভিং ক্রিম! কাকার কিন্তু হুশ নেই। সে কাজ চালিয়েই যাচ্ছে! কাকী ধমক দিলো দুই কারণে। যথা- ক) শেভিং ক্রিম দিয়ে কেউ ব্রাশ করে!? খ) মুখে দিয়েও কেন বুঝলো না এটা পেস্ট নয়!! কাকা মনে মনে ভাবে, আমি মাজতেছি অসুবিধা হচ্ছে না। উনি এমন করেন কেন! চল্লিশোর্দ্ধ পুরুষের পেস্টই কি, শেভিং ক্রিমই কি! অফিসগামী সকল পুরুষই সকালবেলা মাঝে মাঝে এমন করে! এটা দোষের কী!
যাইহোক মন খারাপ নিয়েই কাকা অফিস করছে করছে। হঠাৎ শুনলো পাশের বাড়িতে আগুন লাগছে! কাকা তার অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে ছুটে গেলো ঘটনাস্থলে। তখন লাঞ্চ টাইম। আগুনলাগা বাড়ির প্রায় পঞ্চাশজন বেড়িয়ে এলো! আগুন মাত্রই লেগেছে। কাকা হ্যান্ড মাইকে সবাইকে নিরাপদ দুরত্বে সরে আসতে বলল। কাকা এখন ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আহা রে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গিয়েছে। এই মানুষগুলোর তো খাবার নষ্ট হয়ে গেছে বা ভেতরে যেতে পারবে না। কাকা তার প্রধান সাপ্লায়ারকে বলল, এখনই সবার খাবার ব্যবস্থা করো। ভাল মানের খাবার! খন্দকার হোটেল থেকে নিয়ে আসবে! সাপ্লায়ার বলল, স্যার টাকা কোথায় পাব। আমাদের তো এ খাতে কোন বরাদ্দ নেই। কাকা ভাবল ঠিকই তো। আচ্ছা আমি দেখছি। ফোন দিলো ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার রহমান আলী খাঁকে। ব্যবসায়ীও রাজি হয়ে গেল। না হয়েও উপায় নেই। পরে যদি আবার প্যাঁচ দেয়! যদিও সে জানে কাকারা কারো কাছ থেকে চাঁদা বা দান নিতে পারে না! যাইহোক এখন আগুন লেগেছে। খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। সময় নেই। সাংবাদিক ডাকা হলো। আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার দিচ্ছে এটা কত বড় একটা কাজ। ওদিকে আগুন ক্রমেই বাড়ছে। কুদ্দুস কাকা ও তার দলের সেদিকে বা নিভানোর দিকে হুশ নেই। দুই একজন অবশ্য বলছিলো, স্যার আমরা আগুনটা নিভাই। খাবার এখন জরুরী নয়। কাকা তাকে ধমক দিলো। তুমি কি বোঝ! খাবার আসলো। দুই একজনকে দেয়া হলো। ক্ষুধা লাগছে তারা নিলোও। সাংবাদিক ছবি তুললো। একটা প্যাকেট সাংবাদিককেও দিলো। ততক্ষণে পুরো ভবনে আগুনে শেষ। পরদিন পত্রিকায় বিরাট শিরোনাম হলো “আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে খাবার নিয়ে কুদ্দুস!”