ডায়াবেটিসে যে ফল খেতে নেই মানা নেই
দুঃখজনক হলেও ডায়াবেটিস এখন বহুল পরিচিত একটি রোগ। আপাতদৃষ্টিতে খুব ক্ষতিকর কোনও অসুখ বলে মনে না হলেও যেহেতু এইটি একটি দীর্ঘমেয়াদী অসুখ, যা কখনওই নিরাময়যোগ্য নয়, তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আর নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের একটি বড় নিয়ামক হল পরিমিত পরিমাণে সঠিক খাবার গ্রহণ। যেহেতু এই রোগে রক্তে চিনি বা শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাই মিষ্টি বা শর্করা জাতীয় যেকোনও খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশেষ সাবধানতা মেনে চলতে হয়। শরীরের জন্য ফল-ফলাদি খুব উপকারী হলেও, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল খাবার ব্যাপারেও থাকে বেশ বাধা-নিষেধ। আমাদের আজকের লেখাটি তাই আমরা সাজিয়েছি এমন সব ফল নিয়ে যা ডায়াবেটিস নিয়েও আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন।
কিউই: মজাদার এই ফলটি বিদেশি হলেও আজকাল আমাদের দেশে সহজেই কিনতে মেলে। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফলটি দেহের সুগারের স্তরকে কমিয়ে আনতে সহায়তা করে, তাই এই ফলটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ কার্যকরি।
কালো জাম: গ্রীষ্মের ফল কালোজাম ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপকারী একটি ফল। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে তাই ডায়াবেটিক রোগীরা একদম চিন্তামুক্তভাবে এই ফলটি খেতে পারেন। শুধু ফলই নয়, কালোজামের বীজকে গুঁড়ো করে দিনে একবার যদি হাফ চামচ খাওয়া যায় সেটিও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
অ্যাভোকাডো: মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ বিদেশি ফল অ্যাভোকাডো হজমক্রিয়াকে ধীর করে এবং রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যাভোকাডোতে থাকা ভাল ফ্যাট ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
কামরাঙ্গা: বিশেষ করে টক কামরাঙ্গা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কালো জামের মতো এটিও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে ফলে ডায়াবেটিক রোগীরা তাদের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই ফলটি তাদের খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
পেয়ারা: প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে পেয়ারায়। ডায়েটারি ফাইবার থাকার কারণে জিআই খুবই কম পরিমাণে থাকে যা রক্তের শর্করা না বাড়িয়েই শরীরে দেয় বাড়তি পুষ্টি। এছাড়া ডায়েটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও সহায়তা করে।
আনারস: আনারস অ্যান্টি ভাইরাল, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটরি এবং অ্যান্টি ব্যাকটরিয়াল একটি ফল, যা খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়, ফলে সাধারণত ভাইরাল জ্বরে আনারস অনেক বেশি কাজে দেয়। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও আনারস বেশ কার্যকরি।
পেঁপে: পেঁপেতে রয়েছে ভিটামিন এবং মিনারেল, যার কারনে পেঁপে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। কাঁচা ও পাকা দুই রকম পেঁপেই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। খিদে পেলে পেট ভরাতেও অনন্য এই খাবার, তবে পাকা পেঁপে মিষ্টি হলে খাবেন পরিমিত পরিমাণে।
তরমুজ: যত ইচ্ছা তত পরিমাণে যে ফলটি খেতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীরা, সেটা হচ্ছে তরমুজ। খিদে মেটানো, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগানো ছাড়া পানি শূন্যতাও রোধ করে এই ফলটি।
ডালিম: ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে ডালিম। ডালিম এমনিতেই অনেক রোগের কার্যকরি ওষুধ হিসেবে কাজে দেয়, তবে ডায়াবেটিস রোগটি নিয়ন্ত্রণে এটি বেশ সহায়তা করে।
জামরুল: তরমুজের মতো জামরুলেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি, তাই ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত জামরুল খেতে পারেন। জামরুল রক্তের চিনির পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও জামরুলে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী।
আমলকী: আমলকীতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি আছে। ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত আমলকী খেলে রক্তের চিনির পরিমান নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
আমড়া: আমড়া একটি পুষ্টিকর টক ফল। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি খুবই উপকারী।
টক বড়ই: টক বড়ইতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
তাই দেরি না করে মৌসুমী এই ফলগুলো নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন। এখন বাজারে টক বড়ই ও আমলকী প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। বড়ই দিয়েই শুরু হোক ফল খাওয়া।