করোনায় আক্রান্ত এক চিকিৎসকের কথোপকথন
করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ দিন ধরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এক চিকিৎসক। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। সেখানে শ্বাস কষ্ট নিয়ে আসা এক রোগীর মাধ্যমে তিনি সংক্রমিত হন। পরে পরীক্ষায় সেই রোগীর করোনা ধরা পড়ে এবং মারা যান।
মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আক্রান্ত ওই চিকিৎসকের।
আক্রান্ত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত ১৮ মার্চ শ্বাস কষ্ট নিয়ে একজন রোগী আসেন, তার অন্যান্য সমস্যা ছিলো। ওই রোগী অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বয়স ৭০ এর মতো। কম-বেশিও হতে পারে। তার আইসিইউ দরকার হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালে বেড খালি ছিলো না। সে কারণে আমাদের এখানে আসে। আমাদের এখানে আইসিউইতে বেড ছিলো।’
ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের হাসাপাতালে আসার আগে রোগীর স্বজনরা আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রোগী বিদেশ থেকেও আসেনি। আর তার বিদেশে কেউ ছিলো না। কন্ট্রাক না থাকায় আইইডিসিআর তখন ওই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেনি।’
এর মধ্যে গত ১৮ মার্চ আমাদের হাসপাতালে আসার পর ওই রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয় জানিয়ে চিকিৎসক বলেন, ‘প্রথমে করোনা সন্দেহ ছিলো না। তারপরও এখানে তাকে যে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে, তা আইইডিসিআরে জানানো হয়। পরে যখন রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে বারবার আইইডিসিআরে জানানো হলে তারা ১৯ মার্চ সকালে এসে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। ২০ মার্চ জানায় ওই রোগীর করোনা পজেটিভ। পরে ওই রোগী মারা যায়। এদিকে ২০ মার্চ আমারও জ্বর আসে।’
আক্রান্ত চিকিৎসক জানান, ‘২১ মার্চ জ্বরের সঙ্গে আমার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। ওই দিনই আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে করোনা টেস্ট করানো হয়। সন্ধ্যায় জানানো হয় আমার করোনা পজেটিভ।’ তিনি বলেন, ‘আমার অবস্থা যেহেতু ভালো ছিলো, সেকারণে পজেটিভ আসার পরও বাসাতেই আইসোলেশনে ছিলাম।’
‘বিপত্তি ঘটে একদিন পর ২২ মার্চ। ওই দিন শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়। প্রচণ্ড শ্বাস কষ্ট। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আইইডিসিআরে জানানো হয়। তারা রাত ১০টার দিকে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে এনে আমাকে অক্সিজেন দেয়, নেবুলাইজার দেয়। সারারাত অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। পরদিন থেকে অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হতে থাকে। আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম আর অক্সিজেন লাগবে না। সকালে অক্সিজেন খোলা হয়। আরও একদিন পর থেকে শারীরিক অবস্থা উন্নতি হতে থাকে। এখন আমি সুস্থ আছি। তবে করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসছে। নিজের কাছে সুস্থ মনে হলেও পরীক্ষায় নেগেটিভ না আসায় হাসপাতাল থেকে ছাড়ছে না। পরপর দুটি পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে তারপর ছাড়বে।’
হাসপাতালের আইসিইউ প্রধানও করোনায় আক্রান্ত হয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার জ্বর এসেছিলো সপ্তাহ খানেক পরে। তিনিও এখন সুস্থ আছেন। তবে তারও করোনা পজেটিভ আসছে। আজকে আবার নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। আগামীকাল রিপোর্ট জানা যাবে। ’
করোনার কী কী লক্ষণ-উপসর্গ আপনার (চিকিৎসক) মধ্যে দেখা গেছে জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমার লক্ষণ ছিলো প্রথম দিন জ্বর, পরদিন পাতলা পায়খানা, তারপর দিন শ্বাসকষ্ট। তিন-চার দিন পর জ্বর কমলে সর্দি দেখা দেয়।’
সংবাদসুত্রঃরাইজিংবিডি