নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
ফরিদপুর অফিস
প্রতিপক্ষের হামলায় বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের পর দীর্ঘ প্রায় দুই বছর যাযাবরের মতো জীবনযাপনের পরে বসতভিটায় ফিরেছেন ফরিদপুরের পাঁচটি পরিবারের ২৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু।
শনিবার (০৯ মার্চ) দুপুরে সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের দয়ারামপুর গ্রামে বসতভিটায় ফিরে এসে তারা নিরাপত্তার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তারা সাংবাদিক ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই গ্রামের হারুন শেখের মেয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, পারিবারিক জমিজমা নিয়ে তার বাবার ফুপাতো ভাই মোহাম্মদ শেখ, ভাতিজা আক্কাস শেখ, সাখাওয়াত শেখদের সাথে তার বাপচাচাদের বিরোধ রয়েছে। একাধিক সালিশেও মিমাংসা না হওয়ায় সেটি আদালতে গড়ায়। এদিকে, ২০২২ সালের ৩০ আগষ্ট এনিয়ে দুই পক্ষের মারমারি হয়। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন। তবে আহত মোহাম্মদ শেখ ঘটনার তিনদিন পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর তার বাবা-চাচা ও পরিবারের নারী সদস্য সহ ১৪ জনকে আসামি করে থানায় একটি মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
নাসরিন বলেন, হত্যা মামলায় তাদের পরিবারের লোকেরা যখন বাড়ি ছাড়া, সেই মুহুর্তে রাতের আধারে প্রতিপক্ষ আক্কাস শেখ তার দলবল নিয়ে তাদের বাড়িঘরে হামলা করে। তারা একে একে তার বাবা হারুন শেখের বাড়ি সহ চাচা শহিদ শেখ, লিয়াকত শেখ, জাহিদ শেখ এবং ভাগনে সামসু মৃধার বাড়িতে হামলা করে লুটপট ও ভাংচুর করে। হামলাকারীরা পাকা বিল্ডিংয়ের দরজা, জানালা, ফিটিংস, ফ্যান সহ অন্যান্য মালামাল খুলে নেয়। আসবাবপত্র সহ আলমারীতে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা লুট করে। গরুর খামার ধ্বংস করে। টিউবওয়েলের মুখ খুলে নেয় এমনকি ইরি ব্লকের সেচের পাইপের বোরিং তারা মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়। সকল মালামাল তছনছ ও লুটপাটের পর বাড়িঘরের স্থাপনা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। এতে তাদের প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, এরপর থেকে যাযাবরের মতো এখানে ওখানে ঘুরছেন তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে। পুলিশকে জানিয়েও, অনেক অনুনয় বিনয় করেও বাড়িতে ফিরতে পারেননি। এখন তারা বাড়িতে নতুন করে বসত গড়তে চান। এব্যাপারে তারা সকলের সহায়তা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন শেখ বলেন, ঘটনার সময় তিনি ব্যাংকে ছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে তিনি চায়ের দোকানে বসা তিনটি তরুণ বয়সীর মুখে শুনতে পান তারা বলাবলি করছে আকাশ নামে এক ছেলের নানার মাথায় তারা আঘাত করেছে। তিনি বলেন, ওই তিন যুবক ছিলো গোয়ালন্দ থেকে ভাড়া করে আনা মাস্তান। মারামারির একপর্যায়ে তাদের লোকের আঘাতেই তাদের একজনের মৃত্যু হয়। কিন্তু তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও তাকে সহ তাদের পরিবারের অন্যান্যদের হত্যা মামলার আসামি করা হয়। তারপর তাদের জীবনের সকল উপার্জন লুটপাট করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ ক্ষমতাবান হওয়ায় এতোদিন তারা বাড়িতে ফিরতে পারেননি। এখন নিরুপায় হয়ে ভিটায় ফিরে এসেছেন।
হারুন শেখ বলেন, আমাদের ৫টি পরিবারের সকলে ফেরারি হয়ে এলোমেলোভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটিয়েছি। আমাদের প্রায় ৩০ বিঘা জমি চাষাবাদ করতে পারছি না। কিছু জমি প্রতিপক্ষের লোকেরা জোর করে দখল করে রেখেছে।।হারুন শেখ বলেন, আমরা আমাদেন নিজ নিজ বসত ভিটায় ফিরে নতুন করে ঘরবাড়ি গড়ে তুলতে চাই। শান্তিতে বসবাসের অধিকার চাই। আমরা নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করে ফসল বুনতে চাই। এজন্য ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দীর্ঘদিন পরে বাড়িঘরে ফিরে বসতভিটার ভগ্নদশা দেখতে পেয়ে পরিবারের নারী সদস্যরা আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তাদের সাথে শিশুরাও ছিলো। সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িঘরের চাল, টিন, দরজা, জানালা ও আসবাবাপত্রই লুট করা হয়নি, বরং পাকা বিল্ডিং থেকে ঘরের ফিটিংস, গ্রীল, ফ্যান, ক্ষেতের ফসল, পেঁয়াজ এমনকি বিদ্যুতের স্যুইচ এবং তারও খুলে নিয়ে গেছে। বাড়িতে প্রবেশের মুখে লিয়াকত শেখের বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
#হাসানউজ্জামান ও রাশেদুল হাসান কাজল, ফরিদপুর।