প্রফেসর ডা. আলী আকবর বিশ্বাস দেশের প্রথিতযশা শল্যচিকিৎসক ও শিক্ষক প্রফেসর ডা. এ বি এম আলী আকবর বিশ্বাসকে দাফন করা হয়েছে তার মায়ের কবরের পাশে। গতকাল সোমবার (০৯ নভেম্বর) গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির গ্রামের বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি। চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনে সফল নেতৃত্ব দেয়া এই মহান মানুষটি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত শিশু এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠকও।
রোববার (০৮ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এএমজেড হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন প্রফেসর ডা. আলী আকবর বিশ্বাস (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৬৫ বছর বয়সী ডা. আকবর দীর্ঘদিন ধরে অগ্নাশয়ের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। চিকিৎসক স্ত্রী মিটফোর্ড হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ডা. রওশন আরা এবং একমাত্র ছেলে ইংল্যান্ডের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টএইড মেডিসিনের রেজিস্ট্রার ডা. নেহাল হাসনাইন সার্জা ও পুত্রবধূ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইল্ড মেডিসিনের কনসালট্যান্ট ডা. সাবরিনা মেহতাজ সোমাসহ অসংখ্য গুণি আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন তিনি।
অনন্য মেধাবী এই চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও তৎকালীন আইপিজিএমআর থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি নিয়ে চিকিৎসা পেশায় যোগ দেন। ছাত্র জীবনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন তিনি। বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবনে ছিলেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, ঢাকার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের কনসালট্যান্ট, মুন্নু মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান। ফরিদপুর জেলা বিএমএ, মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ফরিদপুর জেলা শাখারও।
১৯৪৫ সালে ওড়াকান্দির গ্রামে জন্ম নেয়া ডা. আলী আকবর বিশ্বাস সাবেক খ্যাতিমান পুলিশ কর্মকর্তা মরহুম হাজী আব্দুল খালেক বিশ্বাসের দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে মেঝ সন্তান। বড় ভাই ড. আলী আশরাফ বিশ্বাস বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের গীতিকার এবং অবসরপ্রাপ্ত এনজিও প্রধান। বোনদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর এজিবির অবসরপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ারা বেগম, আইসিডিডিআরবি’র অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. সেতারুন নাহার এবং উত্তরা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম খায়রুন নাহার।
তিনি ছিলেন জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের উপদেষ্টা, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, খেলাঘর ফরিদপুর জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা। ছিলেন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা সংসদেরও উপদেষ্টা। বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা সমিতি ও গোপালগঞ্জ সমিতির মাধ্যমে মানবতার কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রমেও নেতৃত্ব দিয়েছেন বহুদিন। চিকিৎসাসেবা ও মানবতার কল্যাণে লাভ করেছেন ফরিদপুরের পদ্মা পুরস্কার, আব্দুস সাত্তার গুমানী স্মৃতিপদক, সুফি মোতাহার হোসেন স্মৃতি পুরস্কারসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য সম্মাননা। বেশকিছু দেশে চিকিৎসা সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাদেশের, গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তার অনেক গবেষণাকর্মও।
খেলাঘর আন্দোলনের দীর্ঘদিনের সংগঠক প্রফেসর ডা. এ বি এম আলী আকবর বিশ্বাসের মৃত্যুতে গভীর শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠনটি। খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপক পান্না কায়সার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রণয় সাহা, ঢাকা মহানগরী কমিটির সভাপতি কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, ফরিদপুর জেলা কমিটির সভাপতি কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আলতাফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক এবং ফরিদপুর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আনোয়ারা নূরুন্নবী ও সাধারণ সম্পাদক আক্তারী জাহান ববি শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
স্বাচিপ ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি ডা. এম এ জলিল এবং সাধারণ সম্পাদক ও বিএমএ ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিটো, স্বাচিপের জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহফুজুর রহমান বুলু, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ডা. রাধেশ্যাম সাহা ও সাধারণ সম্পাদক ডা. পারভেজ তুহিন পৃথক পৃথক শোকবার্তায় বলেন, ‘ফরিদপুরের আপামর চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষের মনে তিনি একটি বিশেষ আসন তৈরি করে নিয়েছিলেন। তার মতো একজন মহৎ মনের মানুষ, একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন বাংলাদেশকে আরো অনেকদিন সেবা দিতে পারতেন। তাই ডা. আকবরের মৃত্যুতে এদেশের চিকিৎসাসেবা ও মানবতার কল্যাণমূলক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’