• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই মে, ২০২৪ ইং

কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক

দিনাজপুরে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব

ছবি- আক্রান্ত গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় সর্বত্রই গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই৷ রোগের নিদিষ্ট কোন প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় দ্রুত এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ছে।

এতে খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গরু মারা যাওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সুত্রে জানা যায়, বোচাগঞ্জ উপজেলাতে গরু সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭১১ টি। এর মধ্যে লাম্পি স্কিন আক্রান্ত গরুর সংখ্যা প্রায় ৪শ ৫০ থেকে ৫শ টি। মারা যাওয়ার সঠিক কোন তথ্য নেই। জনবল কম থাকার কারনে মাঠ পর্যায়ে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না।

এছাড়াও কৃষকরা আক্রান্ত গরু নিয়ে প্রাণী সম্পদ অফিস না আসার কারণে অনেকটা তথ্য সংগ্রহ করতে সমস্যা পড়তে হচ্ছে। তারা আরো জানান, লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসটি আক্রান্ত গরুর শরীর প্রথমে ফুলে গুটি—গুটি হয়। কয়েকদিন পর গুটিগুলো ফেটে রস ঝড়তে থাকে। ফলে ফেটে যাওয়া স্থানেই ক্ষত সৃষ্টি হয়ে গরুর শরীরে প্রচন্ড জ্বর এবং খাবার রুচি কমে যায়। নাক ও মুখ দিয়ে লালা বের হয়। তারা বলছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ভাইরাস শুধু বোচাগঞ্জ উপজেলা নয়, বিরল, কাহারোল সহ জেলার অনেক উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। মশা, মাছি, গরুর শরীর না পড়ে এজন্য সচেতন থাকতে হবে ।

এই উপজেলার, ৫নং ছাতইল ইউনিয়নের ছাতইল,বনহরা,পলাশবাড়ী,মাহেরপুর, ৬ নং রনগাঁ ইউনিয়নের রনগাও,কনুয়া ,৩নং মুশিদ হাট ইউনিয়নের মতিজাপুর, রতনদা, ২ নম্বর ইউনিয়নের ইশানিয়া গ্রামসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামঘুরে দেখা যায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব। কৃষকেরা বলেন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক গ্রামের গরু মারা যাচ্ছে। ৩ নং মুশিদাহাট ইউনিয়নের মতিজাপুর গ্রামের বাবুল, ৫নং ছাতইল ইউনিয়নের ছাতইল গ্রামের মোজাহারুল, সেতাবগঞ্জ পৌর এলাকার নেংরাকালী পাড়ার আব্দুর রশিদ এর ১টি গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। উপজেলার ২ নং ইশানিয়া ইউনিয়নের ইশানিয়া গ্রামের কৃষক সমেশ চন্দ্র রায় জানান, আমার একটি গরুর বাছুর শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে গুটির মতো চাকা চাকা হচ্ছে। আক্রান্ত গরুটি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছি।

একই গ্রামের কৈলাশ চন্দ্র রায় জানান, তার ২ টি বাছুর গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে একটি ২৮ দিন বয়সের বাছুর গরু মারা যায়। উপজেলার সহষপুর গ্রামের কৃষক রোস্তম আলী জানান, তার একটি গাভী ও ৩ টি বকনা বাছুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একটি বাছুর মারা গেছে। আক্রান্ত গরুগুলো নিয়ে তিনি চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। রামপুর গ্রামের লূতফর একটি বাছুর, ভরলা গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের একটি ষাঁড় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

৫ নং ছাতইল ইউনিয়নের পলাশবাড়ী  গ্রামের কৃষক নাজমুল জানান, তার একটি দেশী গরু শরীরে লাম্পি স্কিন ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তেমন কিছু খেতে পাচ্ছেনা। বোচাগঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো.আব্দুস ছালাম বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ভাইরাস নামে পরিচিত। মশা,মাছি মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়ায়।

সচেতনতার মাধ্যমে এ ভাইরাস থেকে বাঁচা সম্ভব। এ জন্য পরিষ্কার—পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দিতে হবে। কৃষকদের সচেতনতার জন্য আমরা নিয়মিত উঠান বৈঠক করছি। লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসের এখনো পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি বলেও তিনি জানান। এ পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার পরামর্শ দিচ্ছে।অভিযোগ উঠেছে, এ ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য বাজারে পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধের সংকট থাকায় তা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ফলে আক্রান্ত গবাদি পশুকে বাধ্য হয়ে সেফটি অ্যাক্সন জাতীয় এন্টিবায়োটিক বেশি দামে কিনে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে বলেও জানান পশু চিকিৎসকরা। উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। অন্তত কয়েকশ গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত এসব গরুগুলো নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন বলেও জানান ভুক্তভোগী কৃষকরা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন ডা: মো.আব্দুস ছালাম বলেন, ‘গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন ডিজিজ যেহেতু মশা—মাছি থেকে ছড়ায় সেজন্য আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গবাদি পশুগুলো আলাদা করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেইসাথে গবাদি পশু থাকার জায়গা সবসময় শুকনো রাখাসহ মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে খামারি ও কৃষকদের।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।