জিল্লুর রহমান রাসেল, ফরিদপুর :ফরিদপুরে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে বলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উয়পক্ষের বেশ কয়েক জন আহত হয়, এসময় উভয় পক্ষের ২৫/২৬ টি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ফুরশা গ্রামে জুয়া খেলা নিষেধ করাকে কেন্দ্র করে প্রতি পক্ষের হামলায় ৭ জন আহত। আহত সাত জনের মধ্যে একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, তিনি বয়স্ক ও শারিরিক প্রতিবন্ধী রুস্তম মাতুব্বর (৬৫)। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এনায়েত মোল্লা (৩৫) পিতাঃ জব্বার মোল্লা, এনায়েত মোল্লা (৩৫) পিতাঃ ছদ্দার মোল্লা, মোহাম্মদ (৪০) পিতাঃ আঃ আলী, রাসিন (৩০) পিতাঃ অঙ্গাত ব্যাক্তিরা ফুরশা অচিন গাছ তলায় জুয়া খেলতে থাকায় একই এলাকার মুরব্বী রুস্তম মোল্লাসহ কয়েকজন খেলতে বারন করতে গেলে কথাকাটির জেরে এ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। খেলোয়ার এনায়েত এর পিতা জব্বার মোল্লা আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
বর্তমানে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচিত প্রাণঘাতি নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারনে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া সকল কার্যক্রমই বন্ধ রয়েছে। নিষিদ্ধ রয়েছে জনসমাগমও। কিন্তু আমাদের সমাজের কিছু অতি উৎসাহী লোকজন ঘরে না থেকে এলাকার বিভিন্ন বাগানে বা গাছের নিচে জড়ো হয়ে জুয়া, লুডো, ক্যারম ইত্যাদি খেলায় ব্যাস্ত থাকছে যা সরকারের আদেশের পরিপন্থী আর সেই কাজে আওয়ামীলীগের সভাপতি আক্কাস হোসেনের সমর্থকরা বাধা দেওয়াতেই এমন সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে নাম না প্রকাশে একাধিক এলাকাবাসীর তথ্য মতে জানা যায় গতকাল চার ব্যাক্তি জুয়া খেলতে থাকলে আহত রুস্তম মাতুব্বর, জব্বার মোল্লার পুত্র এনায়েতকে বকা ঝকা করে ও থাপ্পড় দায় এতে জব্বার মোল্লা ক্ষিপ্ত হয় এবং সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে রুস্তম মাতুব্বর ও তার সাথে থাকা লোকজনের উপর দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি সোটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে রুস্তম মাতুব্বর ও তার সাথে থাকা লোকজন গুরুতর আহত হন এর মধ্যে রুস্তম মাতুব্বরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তারা আরো লোকজন নিয়ে আহতদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করে এবং লুটপাট করে।
এ হামলা থেকে রক্ষা পায়নি বোবা প্রাণী গরুও। কুপিয়ে গুরুতর যখম করে দুটি গরুকে। বাড়িতে ব্যবহৃত ফ্রিজ, টিভি, আলমারী, ড্রেসিং টেবিল, শো -কেস, খাট ইত্যাদি ভাংচুর করে, রক্ষা পায়নি হাড়ি পাতিলও। বিভিন্ন বাড়ি থেকে লুট করে নিয়ে গেছে ১০/১২ লক্ষ নগদ টাকা এছাড়া স্বর্নের চেইন, পায়ের নুপুর, কানের দুল সহ জায়গা জমির দলিল পত্রাদি সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র । বাড়িতে থাকা টিভিএস মোটর সাইকেল, বাই সাইকেল, দুইটি পাওয়ার টিলার ভাংচুর করেছে।
ভুক্তভোগী এক বাড়ির গৃহবধু জানান, সে নামাজ পড়তে দাড়াবে এমন সময় তার গায়ে হাত তুলেছে এবং তাকে থাপ্পর দিতে দিতে ঘড় থেকে বের করে দিয়ে ঘড়ের আসবাবপত্র ভেঙ্গেছে।
ভিন্ন আরেক বাড়ির গৃহবধূ জানান তিনি সমিতি থাকে কিস্তি তুলে ও কিছু পিয়াজ বিক্রির টাকা ঘরে রেখেছে লকডাউন এর আগে, বাড়িঘর ভেঙে সে টাকাও নিয়ে গেছে। প্রত্যেক বাড়িতেই ঘড়ের বেড়ার টিন কেটে ফেলেছে। বাড়ির কাজে ব্যবহৃত মোটর, টিউবয়েলও নিয়ে গেছে। ঘরগুলো এখন আর বসবাস করার উপযোগী নেই। এলাকাবাসীর মতে ২০ লক্ষ টাকার বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা।
স্থানীয় প্রায় প্রত্যেকেই বলেন এখনও আমরা আতঙ্কিত। কখন আবার এসে হামলা করে সে ভয়ে আছি। আহত অন্যান্যরা হলেন, হেদায়েত মাতুব্বর হেদো (৪৫), রইচ (৩৫), বাবলু মাতুব্বর (৫০), জাহাঙ্গীর মোল্লা (৪৫), ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আক্কাস (৫০)।
এ বিষয়ে কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির মোঃ বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খবর পেয়ে আমি এবং ওসি সাহেব সহ পুলিশের একটি দল ঘটনা স্থানে যাই এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকটি বাড়িতে যাই। দেখতে পাই প্রত্যেকটি বাড়ির টিভি, ফ্রিজ সহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙা এবং ঘরগুলোও ভাঙা, তখন আমরা উভয় পক্ষকে ডেকে তারা যেন আর কোন প্রকার মারামারি না করে সে মতে নির্দেশ প্রদান করি এবং আগামী ২২ -০৪-২০ তারিখে শালিসের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে বললে তারা রাজি হয় কিন্তু আজ ১৫-০৪-২০ সকাল ৬ টার দিকে রুস্তম মাতুব্বরের লোকজন একত্রিত হয়া জব্বার মোল্লার বাড়িতে হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। তখন পুলিশ এসে রুস্তম মাতুব্বরের দলের ৬ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় যেন মারামারি না বাড়ে। আমরা উভয় দলকে নিয়ে এক দুদিনের মধ্যে বসে বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করবো।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদ আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন ফলে তার পক্ষ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে যতদুর জানা যায় এ বিষয়ে এখনও কোন মামলা হয়নি।