• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা মে, ২০২৪ ইং
ভীত না হয়ে করোনা মোকাবিলা করতে হবে – প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

ভীত না হয়ে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে করোনা মহামারি মোকাবিলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই আমাদের মানুষের ভেতরে যেন একটা আস্থা থাকে, বিশ্বাস থাকে। সেই বিশ্বাস, আস্থাটা ধরে রাখতে হবে। কারণ আমরা হার মানব না। মৃত্যু তো হবেই, মৃত্যু যেকোনো মুহূর্তে, যেকোনো কারণেই হতে পারে। কিন্তু তার জন্য মৃত্যু নিয়ে ভীত হয়ে হার মানতে হবে এধরনের একটা অদৃশ্য শক্তির কাছে! এটা তো না। সেজন্য আমাদেরও সেভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

দেশবাসীর উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যা যা নির্দেশনা, সেগুলো মেনে চলে নিজের জীবনকে চালাতে হবে। কিন্তু আবার নিজেকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি অন্যকেও সুরক্ষিত রাখা… সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এটা যেন সবাই করে।
এই সঙ্কটের মধ্যে নিজের কার্যালয়ে উপস্থিত হতে না পারলেও গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের ইশতেহারে সেই ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজ সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা (ভিডিও কনফারেন্স) করতে পারছি। আর এই ডিজিটাল করেছিলাম বলে আজকে করোনা নামে যে একটা ভাইরাস সারা বিশ্বকে একেবারে স্থবির করে দিয়েছে, তারপরও আমরা আমাদের দেশের মানুষের সেবা করতে পারছি। তাদের জন্য কাজ করতে পারছি। তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া থেকে শুরু করে, আর্থিক সহায়তা দেওয়া থেকে শুরু করে সবধরনের সুযোগ আমরা দিতে পারছি। আজকে সত্যিই বাংলাদেশকে ডিজিটাল করেছি, আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, এটা আমাদের আনন্দের বিষয়।
এসএসএফের সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মাঝেমধ্যে এটা মনে করি আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন বা আমার নিরাপত্তায় যারা, তাদের জীবনটাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর আমাদের এসএসএফের প্রত্যেকটি সদস্য আমি দেখেছি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে।
এসএসএফ সদস্যদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণে জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রশিক্ষণটা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ নিজেকে সুরক্ষিত করতে হলে অথবা যে ভিআইপিদের সুরক্ষা দিতে হবে, তার জন্য প্রশিক্ষণ সবসময় দরকার, প্রতিনিয়ত। সেজন্য আমি যতটুকু যা সম্ভব করে দিয়েছি। কাজেই তোমরা নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখ এবং ফিট রাখ, প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখ এবং আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন একজন হিসেবে তোমরা তৈরি হবে, সেটাই আমি আশা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ ছিল, সেটা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা গেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.১ ভাগে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৫.৫৬ শতাংশের মধ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছে সরকার। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, গ্রামের অর্থনীতির উন্নতি হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে সবাই সচ্ছলভাবে চলতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাস এসে দেশের সেই অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়ায় নিজের কষ্টের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, এই একটা ভাইরাস, যেটা সারা পৃথিবীর যত শক্তিধর দেশ হোক, কত শক্তিধর দেশ তারা কথায় কথায় বম্বিং করত বা গুলি করত, মারত, আজকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে একবারও বম্বিং করতে পারে না, গুলি করতে পারে না, কিছুই করতে পারে, তারা আজকে স্থবির। আজকে কোথায় সেই ধনী দেশ, তাদের অর্থ-সম্পদ কোনো কাজে লাগছে না। কারণ করোনাভাইরাস। আজকে এই একটা ভাইরাস, যাকে দেখা যাচ্ছে না, অদৃশ্য একটা শক্তি, জানি না আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কী খেলা। সেই অদৃশ্য শক্তির ভয়ে সারা বিশ্ব আজকে স্থবির, সারা বিশ্ব স্তম্ভিত। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মৃত্যু।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পর উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। তিনি যখন সেটা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই হত্যার পর একটার পর একটা ক্যু, বাংলাদেশে ১৯টা ক্যু হয়েছে। প্রতিনিয়ত ওই সেনাবাহিনীতে বিধবার কান্না, সন্তানহারা পিতা-মাতার কান্না, পিতাহারা সন্তানের কান্না। এ রকম একটা দুর্বিষহ অবস্থা ছিল।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ৬ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বৈরী পরিবেশে দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন বাংলাদেশে এসেছিলাম, আমি জানতাম সে সময় আমার মা-বাবা, ভাইয়ের খুনিরা তারা ক্ষমতায়। তারা দল করছে, তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, তারা অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি করে। খুব একটা অন্যরকম চিন্তা তাদের। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় যারা গণহত্যা চালিয়েছে, নারী ধর্ষণ করেছে, লুটপাট করেছে, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ছিল তারা তখন ক্ষমতায়। স্বাভাবিকভাবে একদিকে যেমন যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়, আরেকদিকে খুনিরা ক্ষমতায়। সেই পরিবেশে বাংলাদেশে যখন ফিরেছি, তখন তো আমার কিছুই ছিল না। আলাদা গাড়িও ছিল না। আমি এটা চিন্তাও করিনি। বাস ভাড়া করে চড়েছি, রিকশা-ভ্যানে চড়েছি, নৌকায় চলেছি, সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, একটাই কারণ। এদেশের জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। আমার বাবা যে কাজটা সম্পূর্ণ করতে পারেননি, সেটা আমাকে সম্পন্ন করতে হবে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে, তারা আমাকে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে, সুযোগ দিয়েছে তাদের সেবা করার।
শেখ হাসিনা বলেন, আমারও লক্ষ্য এই বাংলাদেশের মানুষের ক্ষুধার অন্ন নিশ্চিত করা, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, তাদের জন্য একটা সুন্দর জীবন দেওয়া। সেখানে কোনো শোষণ-বঞ্চনা থাকবে না। শিক্ষায়-দীক্ষায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানে এই জাতি সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। যে রাষ্ট্র আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি, সেই রাষ্ট্র বিশ্ব দরবারে মর্যাদার সঙ্গে চলবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রতি পদে পদে বাধার মুখে পড়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাধা অতিক্রম করেই চলতে হয়েছে, এটা খুব স্বাভাবিক। এর জন্য জীবনের ঝুঁকিও নিতে হয়।
অনুষ্ঠানে এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখার পর এসএসএফের একদিনের বেতন ও বাহিনীর তহবিল থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও দুস্থদের সাহায্যার্থে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে একটি চেক হস্তান্তর করেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।