সুমন ভূঁইয়াঃ সাভার উপজেলা শিল্প অধ্যুষিত এলাকা এবং এখানে আনুমানিক সত্তর লক্ষ মানুষের বসবাস। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুবই অপ্রতুল। যদিও সম্প্রতি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে, এরপরও এত মানুষের জন্য তা যথেষ্ট নয়।
এমন পরিস্থিতিতে আশার খবর হলো শীঘ্রই সাভার বাসীর জন্য উদ্বোধন হতে যাচ্ছে গার্মেন্টস মালিকদের উদ্যোগে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির পরামর্শ ক্রমে নমুনা সংগ্রহের নতুন বুথ ও আইসোলেশন সেন্টার।
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের উদ্যোগে ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরে সিঙ্গাইর রোডে অবনী ফ্যাশন ফ্যাক্টরির পাশে সাবেক হিলিং এইড হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারটি এখন করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের বুথ এবং আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং সাভার উপজেলা করোনা ভাইরাস কমিটির সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা সরেজমিন ওখানে গিয়ে পরিদর্শন করে এসেছেন।
এব্যাপারে ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা জানান, আমরা কথায় নয় কাজে বিশ্বাস করি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমাদের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির প্রস্তাবে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস এর উদ্যোগে সাভারবাসীর জন্য নতুন একটি নমুনা সংগ্রহের বুথ ও একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। খুব শীঘ্রই জনবল নিয়োগ প্রদান করবেন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি সরজমিনে গিয়ে এই সেন্টারটির শুভ উদ্বোধন করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, ওখানে গিয়ে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষকে আমরা পরামর্শ দিয়েছি। এসময় কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক, সিনিয়র স্টাফ নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া এবং তাদের খাবার, কর্মস্থলে অবস্থান করার ব্যবস্থা, পিপিই ও লজিস্টিক সাপোর্ট সবকিছু নিশ্চিত করবার জন্য আমার সাথে সহমত পোষণ করেছেন।
ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, এই নতুন বুথ ও আইসোলেশন সেন্টারটি চালু হলে এই অঞ্চলের শ্রমিকদের এক বিরাট অংশ সুন্দরভাবে নমুনা প্রদান করতে পারবেন এবং এতে করে যথাযথভাবে করোনা আক্রান্ত কিনা তা নির্ণয় সহ সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপর থেকেও চাপ অনেক কমে আসবে। ফলশ্রুতিতে বর্তমান মহামারি সংক্রমণের হারও হ্রাস পাবে। সকলে আন্তরিক হলে এ মহামারী থেকে দ্রুত রক্ষা পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
মুঠোফোনে এব্যাপারে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস এর জেনারেল ম্যানেজার (পিসিএল-টু এন্ড ওভেন) মোঃ সানোয়ার হোসেন জানান, সাভারের হেমায়েতপুরে একটি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি সহ আমাদের আরও দুইটি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। একটি কলমা এলাকায় এবং অপরটি সাভার বাজারের সাথে।
এছাড়াও ঢাকার কালশি এবং তেজগাঁও এলাকায়ও আমাদের কারখানা রয়েছে। কোনাবাড়ি থেকে কাজীপুর এরিয়ার জন্য আমাদের একটা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে। আমাদের কোনো স্টাফ কিংবা শ্রমিক যদি দীর্ঘদিন অসুস্থ হন, তার পজিটিভ বা নেগেটিভ যাই শনাক্ত হোক না কেনো, তাকে ওই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়। পরে ওখান থেকে তাকে হাসপাতালে পাঠাই আমরা।
তিনি আরও জানান, তবে সমগ্র সাভারের জন্য আমাদের এরকম কোনো বুথ ও আইসোলেশন সেন্টার নেই। ফলে সাভারে কর্মরত আমাদের অসংখ্য শ্রমিকদের অন্তত নমুনা সংগ্রহ যাতে সহজে করতে পারি ও তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারি, এজন্যই হেমায়েতপুরে এই নতুন বুথ ও সেন্টারটি চালু করতে যাচ্ছি আমরা।
কারণ আমাদের কোনো শ্রমিকের নমুনা সংগ্রহের জন্য ধরুন পিজিতে কিংবা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালাম, তারা দীর্ঘ লাইনে থেকেও অনেকদিন পরে সিরিয়াল পেলো কিংবা নমুনা প্রদানই করতে পারলো না। এই সমস্যা থাকবে না যদি আমাদের নিজেদের একটা বুথ থাকে। এতে করে সহজে আমাদের শ্রমিকদের নমুনা সংগ্রহ করে নিজেদের আইসোলেশন সেন্টারে ভালোভাবে ‘ট্রিটমেন্ট’ করতে পারবো।
তবে নতুন এই বুথ এবং আইসোলেশন সেন্টারে কেবলমাত্র স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ঢাকা ও সাভারের কারখানাগুলোতে কর্মরত শ্রমিকগণই সেবা গ্রহন করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।