করোনা ভাইরাসে থানকুনি পাতা!!
সারা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ভয়াল থাবা বসিয়াছে। চীনের উহান থেকে করোনা তার থাবা বসাতে বসাতে ইরান,জাপান,দক্ষিণ কোরিয়া,পুরো ইউরোপকে কাপিয়ে দিচ্ছে । ইউরোপের দেশ ইতালির অবস্হা খুব নাকাল । সেই সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশ আমেরিকাতোও করোনার থাবা । মরণ ঘাতী এই ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক এখনও আবিস্কার হয়নি। বিশ্বের সব বড় বড় চিকিৎসা – রিচার্স কেন্দ্র হিমশিম খাচ্ছে । চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোন সু- নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই কিভাবে এথেকে মানুষ পরিত্রাণ পাবে ।
করোনা আমাদের বাংলাদেশেও থাবা বসাতে শুরু করেছে । যেহেতু নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই, তারপরে আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী, চিকিৎসার অপ্রতুলতা সেই ক্ষেত্রে শেষ ভরসা হিসেবে কু- সংস্কারকেই মানুষ বেছে নেয়।সারাদেশে ভাইরাল হয়েছে ৩টি থানকুনি পাতা খেলেই করোনা ভাইরাস থেকে নিরাময় পাওয়া যাবে।করোনা ভাইরাস থেকে নিরাময় হবে কিনা তা ভবিষ্যতে চিকিৎসা ব্যাবস্হায় বলে দিবে।
কিন্তু এছাড়াও আয়ুর্বেদীয় মতে ভেষস সবুজ পাতা সদৃশ থানকুনি পাতার বহুবিধ গুণাগুন রহিয়াছে,যাহা অনেক রোগের নিরাময়যোগ্য।
তেতো স্বাদের এই পাতাটি আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। অনেকে এর উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না বলে ফেলে রাখেন অবহেলায়। বলছি থানকুনি পাতার কথা। অনেকে হয়তো জানেন এটি খেলে পেটের অসুখ সারে- ব্যস এটুকুই!
থানকুনি আমাদের শরীরের বেশিরভাগ সমস্যারই সমাধানে কাজে লাগে। ভেষজগুণে সমৃদ্ধ থানকুনির রসে রয়েছে শরীরের জন্য প্রচুর উপকারী খনিজ ও ভিটামিন জাতীয় পদার্থ।
উপকারী এই ভেষজ উদ্ভিদটি সাধারণত সঁ্যাতসেতে পরিবেশেই বেশি জন্মে। তাই পুকুরপাড় বা জলাশয়ের পাশে থানকুনির দেখা মেলে বেশি। গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আশপাশে, রাস্তার পাশে কিংবা ক্ষেতের আইলে ছোট ছোট তারার মতো খাঁজকাটা এই পাতাগুলো দেখতে পাওয়া যায়। এখন শহরের বাজারগুলোতেও পাওয়া যায় থানকুনি পাতা।
অঞ্চলভেদে এই পাতাটিকে টেয়া, মানকি, তিতুরা, থানকুনি, আদামনি, ঢোলামানিক, থুলকুড়ি, মানামানি, ধুলাবেগুন, আদাগুনগুনি নামে ডাকা হয়। থানকুনি পাতা শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়, বিশেষ করে ভর্তা বা কাঁচাপাতা সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। জেনে নিন থানকুনি পাতার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-
শরীর সুস্থ রাখতে
সারা দিন ধরে একাধিক ক্ষতিকর টক্সিন আমাদের শরীরে, রক্তে প্রবেশ করে। এসব বিষ যদি সময় থাকতে থাকতে শরীর থেকে বের করে দেয়া না যায়, তাহলে তা পরবর্তীতে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এই কাজটি করে থাকে থানকুনি পাতা। কীভাবে করে? এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলি বেরিয়ে যায়। ফলে একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায়
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান পেতে খেতে পারেন থানকুনি পাতা। সে জন্য আধা লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিছরি এবং অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর সেই মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়া শুরু করুন। এমনটা এক সপ্তাহ করলেই দেখবেন উপকার মিলবে।
হজম ক্ষমতা বাড়াতে
হজম ক্ষমতারও উন্নতি করে। কারণ থানকুনি পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান হজমে সহায়ক এসিডের ক্ষরণ যাতে সঠিকভাবে হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না।
আমাশয় দূর করতে
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে হবে। এভাবে টানা ৭ দিন খেলেই মিলবে সমাধান! এ ধরনের সমস্যা কমাতে আরেকভাবেও থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। প্রথমে পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটে নিন। তারপর সেই রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মেশান। এই মিশ্রণটি দু চামচ করে, দিনে দুবার খেলেই দেখবেন কষ্ট কমে যাবে।
জ্বর কমাতে
জ্বরে ১ চামচ থানকুনি এবং ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরা যায়। সেই সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতাও কমে।
থানকুনি পাতা শরীরে উপস্থিত স্পেয়োনিনস এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কোথাও কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অল্প করে থানকুনি পাতা বেটে লাগিয়ে দেবেন। দেখবেন কষ্ট কমে যাবে।
পেটের অসুখ কমাতে
অল্প পরিমাণ আম গাছের ছালের সঙ্গে ১টা আনারসের পাতা, হলুদের রস এবং পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা ভালো করে মিশিয়ে ভালো করে বেটে নিন। এই মিশ্রণটি নিয়মিত খেলে অল্প দিনেই যে কোনো ধরনের পেটের অসুখ সেরে যায়। সেই সঙ্গে কৃমির প্রকোপও কমে।
কাশি কমাতে
২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমে যায়। আর যদি এক সপ্তাহ খেতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। সে ক্ষেত্রে কাশি একেবারেই নির্মূল হয়ে যাবে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে
থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটাক্যারোটিন, ফ্য়াটি এসিডএবং ফাইটোকেমিক্যাল ত্বকে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে।
চুল পড়া কমায়
সপ্তাহে ২-৩ বার থানকুনি পাতা খেলে স্কাল্পের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে শুরু করে। চুল পড়ার হার কমাতে আরেকভাবেও থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পরিমাণমতো থানকুনি পাতা নিয়ে তা থেঁতো করে নিতে হবে। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সবশেষে পেস্টটা চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ১০ মিনিট পরে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ২ বার এভাবে চুলের পরিচর্যা করলে চুল আরও সুন্দর হবে।