• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
করোনা:অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে পাট রফতানি বড় ভূূমিকা রাখতে পারে 

ছবি : সংগৃহিত

মহামারীর ধাক্কায় বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক শ্রমিক। প্রবাসীরাও কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। এ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে প্রাণিসম্পদ, পাট, শস্য খাতসহ সামগ্রিক কৃষি। এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব আজ

দেশের রফতানি বাণিজ্যের ৮৪ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতনির্ভর। কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে ধস নেমেছে পোশাক রফতানিতে। তবে এই দুঃসময়েও রফতানিতে আশা জাগাচ্ছে পাট খাত। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনের দিনে রফতানিতে আরো বড় অবদান রাখতে পারে পাট খাত।

সারা বিশ্ব এখন সবুজায়নে জোর দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো পলিথিন ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ইইউতে বিপুল পরিমাণে পাটের ব্যাগের চাহিদা সৃষ্টি হবে। পাটবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে বছরে পাঁচ হাজার কোটি পিস শপিং ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। আর আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক আঁশ সমিতির হিসাব বলছে, ২০২০ সালের পর শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই দেড় হাজার কোটি ডলারের শপিং ব্যাগের বাজার তৈরি হবে। এছাড়া পাটের শপিং ব্যাগ, শৌখিন ও আসবাবসামগ্রী তৈরির কাঁচামাল উৎপাদনেরও সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববাজারে শুধু পাটের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে ৫০০ বিলিয়ন পিস। এতে পাটের তৈরি পণ্যের বড় ধরনের চাহিদা তৈরি হবে। ফলে রফতানির অন্যতম খাত হতে পারে পাট। তবে সেজন্য এখনই এ খাতকে ঘিরে পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ দরকার।

বাংলাদেশ জুট ডাইভারসিফায়েড প্রডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাশেদুল করীম মুন্না এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের কারণে পাটের সম্ভাবনা অফুরন্ত। সম্ভাবনাময় আন্তর্জাতিক বাজারের ১০ শতাংশ দখল করতে পারলেও শুধু এই পাট দিয়েই বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। আগামী বছর থেকে পাট শিল্প থেকে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার আয় করা মোটেও কোনো স্বপ্ন নয়। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কারখানা স্থাপন করতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য প্রবেশের জন্য গবেষণা বাড়ানো ও বাজারের চাহিদামাফিক পণ্য তৈরিতে দেশে দক্ষ জনবল তৈরি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি যান্ত্রিক সুবিধা বাড়াতে বড় বিনিয়োগ দরকার। এজন্য বেসরকারি খাতকে যেমন সহযোগিতা করতে হবে, তেমনি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ঢেলে সাজাতে হবে।

কয়েক বছর ধরে রফতানি পণ্যের শীর্ষ তিন অবস্থানে রয়েছে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রফতানি তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি প্রায় ১৯ শতাংশ কমেছে। চামড়াজাত পণ্যের রফতানি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। তবে উল্টোটা ঘটেছে পাট ও পাটপণ্যের ক্ষেত্রে, এ খাতে রফতানি বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ।

রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ৯৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের। পাট খাতের রফতানি পণ্যের মধ্যে কাঁচা পাটের রফতানি বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। জুট ইয়ার্ন ও টোয়াইনের রফতানি ৭ দশমিক ৫, পাটের বস্তা ও ব্যাগ রফতানি প্রায় ২৩ এবং কার্পেট রফতানি ৪ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের রয়েছে গৌরবময় অতীত। ১৯৫১ সালে নারায়ণগঞ্জের দি বাওয়া জুট মিলস স্থাপনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে বড় আকারে পাট শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকলের স্থান নেয় আদমজী জুট মিলস। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পাটকল স্থাপনের মাধ্যমে রফতানি আয়ের প্রধান খাত ছিল পাট। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এখানে পাটকলের সংখ্যা ৭৭টিতে উন্নীত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেশের পাট খাতে বেসরকারি খাত যুক্ত হলেও গত কয়েক দশকে রফতানিতে নিজের অবস্থান হারায় পাট খাত। কারখানাগুলো সংস্কার কিংবা পুনর্গঠন ছাড়াই চলে উৎপাদন। রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলোতে নতুন নতুন প্রযুক্তি না আসা, পণ্যের বহুমুখিতা না থাকা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি এবং অবকাঠামোগত ভঙ্গুরতার কারণে শীর্ষ রফতানি খাতের মর্যাদা হারায় পাট। বর্তমানে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএসএ) অধীন ৮১টি, বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) অধীন ৯৭টি এবং বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন ২৭টি পাটকল রয়েছে। পাট পণ্যের রফতানিতে ২০৫টি বড় কারখানা কাজ করছে। এছাড়া পাটের বহুমুখী পণ্যের উৎপাদন ও রফতানিতে জুট ডাইভারসিফায়েড প্রডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবেষণাহীনতা ও পুরনো মেশিন দিয়ে বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। দেশের কারখানাগুলোয় মাত্র পাঁচ-সাত ধরনের ইয়ার্ন তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ভারতের কারখানাগুলোতে ১১০টির বেশি ইয়ার্ন তৈরি করছে। ফলে সুতাভিত্তিক পণ্য তৈরিতে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। একসময় পাট দিয়ে শুধু দড়ি, চট, ছালা তৈরি হতো। কিন্তু পাট দিয়ে এখন শত শত ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে। ঘরের দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকে শুরু করে বিশ্বের নামিদামি গাড়ির ভেতরের কাপড়, বডি, কাপড়, বিছানার চাদর, টুপি, ফার্নিচার, শার্ট, প্যান্ট এমনকি জিনসও এখন তৈরি হচ্ছে পাট থেকে। তৈরি হচ্ছে পাট পাতার চা। সামনের দিনে যদি হোম টেক্সটাইল, হোম ফার্নিশিং বিশেষ করে পর্দার কাপড়, কাভার ও শৌখিন কাপড় তৈরি করতে পারি তাহলে এ খাতে রফতানি আরো বাড়বে। এক কথায় বহুমুখী পণ্য দিয়ে সামনের দিনে পাট শিল্পকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, মহামারী পরিস্থিতিতে দেশের রফতানি খাতকে জাগিয়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে পাট। রফতানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পাট উৎপাদন থেকে শুরু করে বহুমুখী পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বেসরকারি খাতকেও রফতানি বাজারে সহযোগিতা করা হচ্ছে। পাট চাষীদের পাট আবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, পাট ক্রয়-বিক্রয় সহজীকরণের জন্য এসএমএসভিত্তিক পাট ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাকরণ, কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পাট শিল্পের সম্প্রসারণে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে। পাটজাত পণ্য রফতানিতে প্রণোদনা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা নিচ্ছে। সুত্র: বণিক বার্তা

## করোনা:গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখবে প্রাণি ও কৃষিখাত

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।