করোনাভাইরাসঃ কিছু ভ্রান্ত ধারনা ও বাস্তবতা
বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার কারনে এখানকার মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্য যেকোন দেশের চেয়ে বেশি। চলুন জেনে নিই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত কিছু প্রচলিত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও এর বিপরীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রকৃত বাস্তবতা।
করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচলিত কিছু গুজব ও প্রকৃত বাস্তবতা
১. গুজবঃ গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করোনাভাইরাস ছড়ায় না।
বাস্তবতাঃ এখন পর্যন্ত এই ধারনার স্বপক্ষে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাস যেকোন এলাকায় ছড়াতে পারে। যেসব এলাকার আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র, সেসব এলাকায়ও।
২. গুজবঃ ঠান্ডা আবহাওয়া ও তুষারপাতে করোনাভাইরাস মারা যায়।
বাস্তবতাঃ ঠান্ডা আবহাওয়া নতুন করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে বা অন্য কোন রোগ সারিয়ে দিতে পারে, এমনটি বিশ্বাস করার কোন কারন নেই। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাহ্যিক তাপমাত্রা বা আবহাওয়ার কোন প্রভাব এর উপর পড়ে না।
৩. গুজবঃ গরম পানিতে গোসল করলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে।
বাস্তবতাঃ গরম পানিতে গোসল করলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে না। কারন, গোসলের সময় পানির তাপমাত্রা যাই হোক না কেন আপনার দেহের স্বাভাবিক তাপমতারা ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসই থাকবে। বরং, খুব বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আপনার শরীরের ক্ষতি হতে পারে, শরীর পুড়েও যেতে পারে।
৪. গুজবঃ মশার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায়।
বাস্তবতাঃ এখন পর্যন্ত এই ধারনার পক্ষে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি।
৫. গুজবঃ হাত শুকানোর যন্ত্র করোনাভাইরাসকে মারতে কার্যকর।
বাস্তবতাঃ না, হাত শুকানোর যন্ত্র করোনাভাইরাসকে মারতে কার্যকর নয়।
৬. গুজবঃ ইউভি ল্যাম্প নতুন করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে।
বাস্তবতাঃ না। বরং এটা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। কারন, ইউভি ল্যাম্প থেকে তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয়।
৭. গুজবঃ নতুন করোনাভাইরাস শনাক্তকরনে থার্মাল স্ক্যানার কাজে আসে।
বাস্তবতাঃ আংশিক সত্য। নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে জ্বর এসেছে, শুধু এমন লোকজনকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রেই থার্মাল স্ক্যানার কাজে আসে। কিন্তু আক্রান্ত হলেও জ্বর আসেনি, থার্মাল স্ক্যানার এমন কাউকে শনাক্ত করতে পারেনা।
৮. গুজবঃ সারাদেহে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন স্প্রে করলে নতুন করোনাভাইরাস মারা যায়।
বাস্তবতাঃ না, মারা যায় না। যেসব ভাইরাস ইতোমধ্যেই আপনার শরীরে প্রবেশ করেছে, সেগুলোকে মারার সক্ষমতা অ্যালকোহল বা ক্লোরিনের নেই। চোখমুখ বা কাপড়ে এসব স্প্রে করাটা বরং ক্ষতিকর হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সংক্রমণ রোধে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ভূমিকা রাখে ঠিকই, তবে সেটা যথাযথ নির্দেশিনা মেনে ব্যবহার করতে হবে।
৯. গুজবঃ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমন থেকে বাঁচায়।
বাস্তবতাঃ এটি সঠিক নয়। নিউমোনিয়া বা অন্য কোন রোগের ভ্যাকসিন নতুন করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচাবে না। এই ভাইরাসটা এতটাই নতুন এবং আলাদা যে, এর জন্য নতুন ভ্যাকসিন প্রয়োজন। গবেষকরা নতুন এই ভাইরাসের জন্য ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ব্যাপারে তাদের সাহায্য করছেন।
১০. গুজবঃ নাকে নিয়মিত স্যালাইন লাগালে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমন থেকে বাঁচা যাবে।
বাস্তবতাঃ এখন পর্যন্ত এই ধারনার পক্ষে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি।
১১. গুজবঃ রসুন খেলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে।
বাস্তবতাঃ রসুন স্বাস্থ্যকর খাবার। এর কিছু এন্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও আছে। কিন্তু বর্তমান প্রাদুর্ভাব থেকে এমন কোন প্রমান পাওয়া যায়নি যে, রসুন খেলে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো যাবে।
১২. গুজবঃ নতুন করোনাভাইরাসে শুধু বয়স্ক মানুষেরাই আক্রান্ত হবে।
বাস্তবতাঃ যেকোন বয়সের মানুষ নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ আছে, এমন বয়স্ক মানুষদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি এবং এরা সংক্রমিত হলে তীব্র অসুস্থতায় পড়তে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হচ্ছে, সব বয়সের মানুষের উচিৎ নিজেদেরকে এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখা। যেমন, নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত ভদ্রতা চর্চার ব্যপারে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
১৩. গুজবঃ অ্যান্টিবায়োটিক খেলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে এবং সংক্রমিত হলেও রোগ ভাল হয়ে যাবে।
বাস্তবতাঃ এটা সঠিক নয়। অ্যান্টিবায়োটিক এই নতুন ভাইরাসের ক্ষেত্রে কার্যকরি নয়। এগুলো শুধু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর।
১৪. গুজবঃ নতুন করোনাভাইরাস ঠেকানোর পদ্ধতি বা এর চিকিৎসা এসে গেছে।
বাস্তবতাঃ এটাও সঠিক নয়। নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বা চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোন ঔষধ তৈরি হয়নি।
নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের যথাযথ যত্নের প্রয়োজন। অসুস্থ মানুষদের প্রয়োজন সর্বোচ্চ সহায়তামূলক সেবা। কিছু সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পরীক্ষাধীন আছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ভেতর দিয়ে যাদের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার অংশীদারদের সাথে গবেষনা ও উন্নয়নের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক এরকম আরো তথ্য পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন।