অনলাইন সংস্করণে নিউজটি তৈরি করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক – জিল্লুর রহমান রাসেল
চীনের উহান থেকে উৎপত্তি করোনাভাইরাস এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল ও আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে দেশে এ নিয়ে আতংক শুরু হয়েছে। তবে চীন বর্তমানে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলেও বিশ্বের অনেক দেশ হিমশিম খাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশও বেকায়দায় পড়েছে এ নিয়ে। এর মধ্যে ইতালি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশও।
করোনা সংক্রমণের কারণে লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন বস্তু ধরার বিষয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। সারা বিশ্বেই এখন দেখা যাচ্ছে যে লোকজন তাদের কনুই দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করছেন, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা বা নামার সময় রেলিং ধরছেন না এবং বাসে ট্রেনে চলার সময় হ্যান্ডল না ধরেই তারা দাঁড়িয়ে আছেন, অফিসে পৌঁছেই লোকজন জীবাণুনাশক দিয়ে তাদের ডেস্ক ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন।
যে সব এলাকায় এই ভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণ ঘটেছে সেখানে পরিবহন, রাস্তা-ঘাট ও পার্কে স্প্রে করে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। একই উপায়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে অফিস-আদালত, হাসপাতাল, দোকানপাট, রেস্তোরাঁও।
সারা বিশ্বে আতংক সৃষ্টিকারী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস কোথায়, কতক্ষণ বেঁচে থাকে এবং এটি নির্মূলের উপায় কী- এ নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় তার নাক ও মুখ দিয়ে যে জলীয় কণা বা ড্রপলেট বাতাসে বের হয়ে আসে তার মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্র একবারের কাশি থেকেই বের হতে পারে এরকম ৩০০০ ড্রপলেট। ড্রপলেটের এই কণা গিয়ে পড়তে পারে আরেকজনের গায়ে, কাপড়ে এবং আশপাশের জিনিসের উপর। তবে কিছু ক্ষুদ্র কণা থেকে যেতে পারে বাতাসেও।
দেখা গেছে, এই ভাইরাস মল-মূত্রের মধ্যে আরও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। টয়লেট থেকে ফিরে ভালো করে হাত না ধুলে তার হাতের স্পর্শের সাহায্যে আরও অনেক কিছুতেই এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন বলছে, ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম কোনো বস্তু স্পর্শ করার পর হাত দিয়ে যদি মুখ স্পর্শ করা হয় তাহলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। তবে এটিই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান উপায় নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য কর্তৃপক্ষও বলছে যে, বারবার হাত ধুয়ে এবং একই সঙ্গে যে সব জিনিস ধরা হচ্ছে সেগুলো বারবার জীবাণুমুক্ত করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে, করোনাভাইরাসের জন্য দায়ী কোভিড-১৯ মানবদেহের বাইরে কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আরও যে সব করোনাভাইরাস আছে, যেমন সার্স ও মার্স, সেগুলো লোহা, কাঁচ এবং প্লাস্টিকের গায়ে ৯ (নয়) দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আবার কোনো কোনো ভাইরাস ঠাণ্ডা জায়গায় ২৮ দিনও বেঁচে থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথের একজন ভাইরোলজিস্ট নিলৎজে ফান ডোরমালেন তার সহকর্মীদের নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন কোভ-২ বা সার্স ভাইরাস কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে।
তাতে দেখা গেছে, কাশি দেয়ার পর থেকে ড্রপলেটের মধ্যে এই ভাইরাসটি তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ক্ষুদ্র ড্রপলেটে, যার আকার ১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার (মানুষের চুলের ৩০ গুণ চিকন) সার্স ভাইরাস কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে কোভ-২ ভাইরাস কার্ডবোর্ডের মতো শক্ত জিনিসের ওপর ২৪ ঘণ্টা আর প্লাস্টিকের জিনিসের গায়ে দুই থেকে তিন দিনও বেঁচে থাকতে পারে।
গবেষণা বলছে, ভাইরাসটি দরজার হাতল, প্লাস্টিক ও লেমিনেটেড ওয়ার্কটপ ও কঠিন বস্তুর ওপর দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। আর কপারের কোনো জিনিসে পড়লে এর মৃত্যু হতে চার ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসকে এক মিনিটেই নিষ্ক্রিয় করে ফেলা যেতে পারে। ৬২-৭১% এলকোহল মিশ্রিত তরল পদার্থ দিয়ে কোনো জিনিসকে করোনামুক্ত করা যায়। ০.৫ শতাংশ হাইড্রোজেন প্রিঅক্সাইড এবং ০.১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট মেশানো ব্লিচ দিয়েও করোনাভাইরাস নির্মূল করা সম্ভব।
উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণেও অন্যান্য করোনাভাইরাসের দ্রুত মৃত্যু হতে পারে। দেখা গেছে, সার্সের জন্য দায়ী করোনাভাইরাস ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড-১৯ কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে তা নির্ভর করে এটি কোন্ ধরনের বস্তুর গায়ে পড়েছে তার ওপর। দরজার শক্ত হাতল, লিফটের বাটন এবং কিচেন ওয়ার্কটপের মতো শক্ত জিনিসের গায়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। তবে এর আগের গবেষণায় দেখা গেছে সহায়ক পরিবেশে সব ধরনের করোনাভাইরাস এক সপ্তাহও বেঁচে থাকতে পারে।
তবে কাপড়ের মতো নরম জিনিসের গায়ে এটি এত লম্বা সময় বেঁচে থাকতে পারে না। ফলে আপনি যে কাপড়টি পরেছেন এবং তাতে যদি ওই ভাইরাসটি থাকে, জামাটি একদিন কিংবা দু’দিন না পরলে সেখানে ভাইরাসটি জীবিত থাকার আর সম্ভাবনা নেই। মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম জিনিসে শুধু স্পর্শ করলেই আপনি আক্রান্ত হবেন না।
শুধু স্পর্শ করার পর আপনি যদি হাত দিয়ে মুখ, নাক অথবা চোখ স্পর্শ করেন তাহলেই এই ভাইরাসটি আপনার শরীরে ঢুকে পড়বে। তাই এই ভাইরাসটি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ একটি করণীয় হচ্ছে হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ না করা।