ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরাঞ্চলখ্যাত পাঁচটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গত ১২ঘন্টায় সদরপুর উপজেলার পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০৫সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রাবাহিত হচ্ছে। পানিতে নতুন করে আরও এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক,ব্রীজ,কালভার্ট এ ফাটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে।
পানি বৃদ্ধির ফলে সদরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে উপজেলার চরনাছিরপুর,দিয়ারা নারিকেল বাড়ীয়া, চরমানাইর ও আকোটেরচর,ঢেউখালীর আংশিক এলাকা প্লাবিত রয়েছে।
সরেজমিনে দেখাযায়, পানিবন্দিরা জানান, বর্তমানে নৌকায়, কলার ভেলাসহ ঘরের মাঝে বাশ দিয়ে চৌকি উচু করে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
আরও দেখা যায়, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। শত শত গ্রাম এখন বানের পানিতে ভাসছে। গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়িতে কোথাও হাঁটুসমান কোথাও বুকসমান পানি। এ অবস্থায় ঘরে চৌকি উঁচু করে, মাচা পেতে কেউবা নৌকায় বসবাস করছেন। সেইসঙ্গে পানির তোড়ে বাড়িঘর ভেসে যাওয়ার সংশয়ের পাশাপাশি খাদ্য আর বিশুদ্ধ পানির সমস্যা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। এ অবস্থায় থাকতে না পেরে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।
অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে রাস্তাঘাট ভেঙে উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বানভাসি মানুষের মাঝে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।
সদরপুর উপজেলার পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার প্রায় ১০হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। এছাড়াও আবারও নতুন করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ওঠায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বন্যা প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মালেক মিয়া জানান, পানিতে প্লাবিত রয়েছে ২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে এদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বন্যা প্রসঙ্গে, পানিতে হেলে পড়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্পকে সদরপুর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এর সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মোঃ বোরহান উদ্দিন জানান, পল্লী বিদ্যুৎয়িত এলাকাগুলো সংযোগ এখনো বন্ধ না হলেও ঝুকিতে রয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রয়েছে।
বন্যা প্রসঙ্গে, দিয়ারা নারিকেল বাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নাসির উদ্দিন সরদার জানান, ইউনিয়নের প্রায় পরিবারগুলো পানিবন্দি রয়েছে। তিনি আরও জানান প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এদের মধ্যে ২৩৩টি অসহায় পরিবারের মাঝে ৩০কেজি করে চাউল বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যা প্রসঙ্গে, চরনাছিরপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখ মোঃ আক্কাছ আলী জানান, ইউনিয়নের প্রায় পরিবারগুলো পানিতে বন্দি রয়েছে। আমি প্রতিনিয়ত তাদের খোজ খবর রাখাসহ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর তালিকা করছি। এ পর্যন্ত ২৫৫টি পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি করে সরকারি ত্রান হিসাবে দেওয়া হয়েছে। আশা করি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে শীর্ঘই ত্রান পৌছে যাবে।
বন্যা প্রসঙ্গে, সদরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার পূরবী গোলদার জানান, সরকারিভাবে ২৯মেট্রিক টন চাল ও ৮০ হাজার টাকা ও ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার রয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে এসব খাদ্রসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা তৈরী করে এসব সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। আমি প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের খোজ খবর রাখাসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে তাদের মাঝে ত্রান কার্যক্রম বিতরণ অব্যাহত রাখছি।