• ঢাকা
  • সোমবার, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে নামাজ বন্ধ বৈধ

সৌদি ওলামা পরিষদের ফতোয়া

নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার নামাজ আদায় স্থগিত করা প্রসঙ্গে ফতোয়া দিয়েছে সৌদি ওলামা পরিষদ। মানুষের জীবন রক্ষার অপরিহার্যতা-সংক্রান্ত পবিত্র কোরআনের কয়েকটি সুরার আয়াত এবং হাদিস ব্যাখ্যা করে তারা বলেছেন, বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে সব ফরজ এবং জুমার নামাজ বন্ধ করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। শুধু আজান দেওয়াই যথেষ্ট। তবে হারামাইন তথা মক্কা ও মদিনার দুই মসজিদ এর আওতামুক্ত থাকবে।

ওলামা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, মসজিদের দরজা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। এ সময় মসজিদগুলোতে আজান চালু থাকবে। আজানে বলা হবে- ‘সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম’ অর্থাৎ ‘আপনারা বাড়িতেই সালাত আদায় করুন’। বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) তার মুয়াজ্জিনকে আজানে এ কথা বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লাহর একটি অনুগ্রহ যে, ওজরের কারণে কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার নামাজ জামাতে আদায় করতে সক্ষম না হন, তবুও তাকে পূর্ণ সওয়াব দান করা হবে।

গত মঙ্গলবার রিয়াদে সৌদি কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারসের (সৌদি ওলামা পরিষদ) ২৫তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে তারা করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার এবং ব্যাপক প্রাণহানির বিষয়টি পর্যালোচনা করেন। পাশাপাশি তারা এ মহামারি-সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য মেডিকেল রিপোর্টও খতিয়ে দেখেন। সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে করোনার সংক্রমণ ও ভয়াবহতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এটি মানুষের জীবনের জন্য বিরাট হুমকি। সুতরাং এ বিষয়ে ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ঝুঁকি বহুগুণ বাড়বে। তিনি আরও স্পষ্ট করেন, গণজমায়েত সংক্রমণের প্রধান কারণ। এরপর ওলামা পরিষদের নেতারা কোরআন-সুন্নাহর বক্তব্যগুলো পর্যালোচনা করে এই ব্যাখ্যা দেন। ওলামা পরিষদ সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের জারি করা প্রতিরোধ ও সতর্কতামূলক নির্দেশনাগুলো পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে এবং তাদের সহযোগিতা করতে সবাইকে পরামর্শ দেন।
অধিবেশনে সিনিয়র স্কলাররা মানুষের জীবন রক্ষার অপরিহার্যতা সংক্রান্ত কোরআন-সুন্নাহর বক্তব্যগুলো পর্যালোচনা করেন। যেমন- আল্লাহতাআলা বলেন:’এবং তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা:১৯৫)
তিনি আরও বলেন:’এবং নিজেদের হত্যা করিও না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।’ (সুরা নিসা:২৯)
এ দুটি আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জীবননাশের কারণগুলো থেকে বেঁচে থাকা ওয়াজিব (অবশ্য কর্তব্য)।
এ ছাড়াও নবী (সা.) বিভিন্ন হাদিসে মহামারি বিস্তৃতি লাভের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়। যেমন:নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যেন তার অসুস্থ উটকে সুস্থ উটের কাছে না নিয়ে যায়।’ (বুখারি ও মুসলিম)
তিনি আরও বলেছেন, ‘কুষ্ঠরোগী থেকে সেভাবে পালাও যেভাবে সিংহ থেকে পলায়ন করো।’ (সহিহ বুখারি)
তিনি আরও বলেন:’যদি কোনো এলাকায় মহামারির কথা শোনো তবে সেখানে যেও না। আর যদি কোনো এলাকায় তোমাদের থাকা অবস্থায় মহামারি সৃষ্টি হয় তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আর শরিয়তের একটি সু সাব্যস্ত মূলনীতি হলো- ‘নিজের অথবা অন্যের কোনো ক্ষতি করা যাবে না।’
শরিয়তের আরেকটি মূলনীতি হলো, ‘যতটা সম্ভব ক্ষয়-ক্ষতি প্রতিহত করতে হবে।’
এ আলোচনার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, (বিশেষ প্রয়োজনে) মসজিদে সকল ফরজ এবং জুমার সালাত বন্ধ করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। কেবল আজান দেওয়াই যথেষ্ট। তবে হারামাইন তথা মক্কা ও মদিনার দু ই মসজিদ এর আওতামুক্ত থাকবে। মসজিদের দরজা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। এ সময় মসজিদগুলোতে আজান চালু থাকবে আর আজানে বলা হবে- ‘সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম।’ এর অর্থ- ‘আপনার বাড়িতেই সালাত আদায় করুন।’
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) তার মুয়াজ্জিনকে আজানে এ কথা বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারি ও মুসলিম)
জুমার দিন বাড়িতেই জোহরের চার রাকাত সালাত আদায় করতে হবে।
আল্লাহর একটি অনুগ্রহ, ওজরের কারণে কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমার সালাত জামাতে আদায় করতে সক্ষম না হয় তবুও তাকে তার পূর্ণ সওয়াব দান করা হবে। রাসুল (সা.) বলেন:’বান্দা যদি অসুস্থ হয় অথবা সফরে যায় তাহলে সে সুস্থ ও আবাস অবস্থায় যে আমল করত মহান আল্লাহ তাকে তার সমপরিমাণ সওয়াব দান করেন।’ (সহিহ বুখারি)
ওলামা পরিষদ সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের জারি করা প্রতিরোধ ও সতর্কতামূলক নির্দেশনাগুলো পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য সকলকে উপদেশ দিচ্ছে। আল্লাহতাআলা বলেন: ‘এবং তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করো না।’ (সুরা মায়িদা: ২)
এ সকল পদক্ষেপ ও নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা মূলত ‘সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত।’ অনুরূপভাবে আমাদের সুমহান দ্বীন আমাদের আল্লাহর ওপর ভরসা করার পর ‘পার্থিব উপায়-উপকরণ অবলম্বন’ করার যে নির্দেশ দিয়েছে এটি তা বাস্তবায়নের শামিল। পাশাপাশি আমরা সবাইকে আল্লাহকে ভয় করা, অধিকহারে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা এবং বিনীতভাবে দোয়া করার জন্য উপদেশ দিচ্ছি।
আল্লাহ বলেন: ‘(হুদ আলাইহিস সালাম বললেন) হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং তার কাছে তওবা কর। তিনি তোমাদের অঝোরধারায় বৃষ্টি দেবেন এবং তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন।’ (সুরা হুদ :৫২)
এখানে ‘শক্তি’ কথাটির মধ্যে জীবন-জীবিকার প্রাচুর্যতা, সার্বিক নিরাপত্তা এবং সব ধরনের সুস্থতা ও বিপদাপদ থেকে মুক্তির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত।
আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন তার বান্দাদের থেকে এ মহাবিপদ উঠিয়ে নেন এবং খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন, ক্রাউন প্রিন্স এবং আমাদের বিচক্ষণ সরকারকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি প্রতিরোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় উত্তম বিনিময় দান করেন। আরও দোয়া করি, তিনি যেন সকলকে হেফাজত করেন। কারণ আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ।

সংবাদসুত্রঃ দৈনিক সমকাল

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।