• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরে বর্ণাঢ্য উত্তরণ উৎসব উদ্বোধন

আলমগীর জয় ০

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেছেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্থানীরা যখন বুঝতে পারল বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের দাবায়ে রাখা যাবে না, তখন তারা এই বাংলাদেশটাকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস স্তুপে পরিনিত করার জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করল। তারা একের পর এক ব্যবসা বানিজ্য-শিল্প কলকারখানা, ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা শুরু করল। এভাবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের সকল সম্ভাবনার খাতকে ধ্বংস করে দিল। সেই ধ্বংস স্তুপ থেকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি স্বাধীনতার মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে উদ্ধার করে স্থিতিশীল অবস্থায় এনে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করলেন। তার হাত দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকলো। বঙ্গবন্ধুর সেই উন্নয়নের সূচনাকে এগিয়ে নিয়ে দেশকে উন্নয়নের শিখরে পৌছে দিচ্ছেন তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রদান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলশ্রুতে আজ দেশ শিক্ষা, কৃষি, খাদ্য, যোগযোগ, বিদ্যুৎ, সামাজিক সুরক্ষায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।  উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে দেশের প্রত্যেকটি খাতে। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী সেই সব দেশ প্রেমিক শহীদদের রক্তেই আমাদের আজকের এই উন্নয়নের বীজ রোপিত ছিল। শনিবার, ২৭ মার্চ ২০২১ খ্রিস্টাব্দ বাংলাদেশ এক অনন্য অর্জন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী “স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, স্বাধীনতার অর্জনের পর এক কুচক্রি ভেবেছিলো দেশ ভেঙ্গে পড়বে। সেটা সম্ভব হয়নি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেমের কারনে। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটি স্থিথিশীল জায়গায় নিয়ে এসেছিলো। আজও সেই কুচক্র রয়ে গেছে। তারপরও বঙ্গবন্ধু কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের বিস্ময়। আজ আমরা যে পরিমান মানুষকে সুরক্ষা দিয়ে আসছি পৃথিবীর অনেক দেশে সে পরিমান জনসংখ্যাও নেই। আজ এদেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষের মধ্যে ৬ কোটি মানুষ সুরক্ষা সুবিধা পাচ্ছে। করোনাকালীন সময়েও এদেশের একটি মানুষ না খেয়ে থাকেনি। আজ এদেশের মানুষের গড় আয়ূ বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, দারিদ্রতার হার কমেছে ও এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে আগামী কয়েক বছরে সব সেক্টরে বাংলাদেশ এক নম্বরে যাবে।

ফরিদপুরে কর্মরত সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা পেয়েছি, আর কেউ পাবে না। সে মোতাবেক আমাদের কাজ হবে। সেবা প্রত্যাশীদের সম্মানজনক সেবা দিতে হবে, তাদের বুঝাতে হবে। সম্ভব হলে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে দিবেন। আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গিকার হোক, আমরা যেন সঠিকভাবে সেবা দিতে পারি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাহ উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মোশাররফ আলী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্যা,  জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ হযরত আলী, প্রাণী সম্পাদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.নুরুল্লা মোঃ আহসান,  পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আবুল হাসান প্রমুখ। সভায় পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজভী জামান।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা। এ সময় ফরিদপুরের সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার সহ অতিথিবৃন্দ উত্তরণ উৎসবের প্রতিটি স্টল পরিদর্শন করেন। এ উত্তরণ উৎসবে জেলার ৫০ টি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং আগত দর্শনার্থীদের মাঝে উন্নয়নের চিত্রি তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক অম্বিকা ময়দানে বেলা সাড়ে ১০ টায় বেলুন উড়িয়ে আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। এ উপলক্ষে একই মেয়দানে ২ দিন ব্যাপী উত্তরণ মেলাওে শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য , এবারে ৫০ বছরে পৌছল বাংলাদেশ; নতুন নতুন অর্জন ও প্রাপ্তির উল্লাস আর প্রত্যাশাগুলোকে সামনে রেখে।  নতুন এক পরিবেশের সঙ্গেই বাঙালি সুবর্ণজয়ন্তীর আমেজ অনুভব করছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। জাতি সুবর্ণজয়ন্তীতে এদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে দেখতে চায়, যাতে বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা না করতে পারে। এ সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। বিজয় অর্জনের পেছনে ত্যাগের যে প্রেক্ষাপট; তা আজ সবার মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বজন হারানো, সম্ভ্রম হারানোর শোক, লজ্জাকে শক্তিতে পরিণত করে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে বাঙালি জাতি। স্বাধীনতা-পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশের যে করুণ চিত্র ছিল, তা আজ পরিবর্তন হয়েছে- দেশের অগ্রগতির দিকে লক্ষ করলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

বর্তমানে দেশের উন্নয়নের দিকে তাকালে আমরা যে অগ্রগতি ও অগ্রগতির ছোঁয়া দেখতে পাই; তার মূল সূচনা হয়েছিল ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর দেশে প্রত্যাবর্তনের পর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে। বর্তমানে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ও চাকরিজীবী মানুষের সংখ্যাও অনেক। শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নিজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের দেশে নিজেদের প্রতিভার পরিচয় দিচ্ছে। নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে পুরো বিশ্বকে। নতুন নতুন পরিকল্পনা সঙ্গে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন ও মানসম্মত শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর যে দেশকে ‘তালাবিহীন ঝুড়ি’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল, সেই দেশের অগ্রগতি আজ সবার কাছে প্রশংসনীয়। অনেকের কাছে রোল মডেল। সবুজের মাঝে রক্তিম আভার যে পতাকা, সেই পতাকার সম্মান ৫০ বছরে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়; অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ সব ক্ষেত্রে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ হবে একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ।

এদিকে ২৮শে মার্চ সকাল ১০ টায় ‘রূপকল্প ২০৪১: উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ বিষয়ে সেমিনার, দুপুর ১২ টায় শিক্ষার্থী ও তরুনদের জন্য উন্নয়ন বিষয়ক কুইজ ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, দুপুর আড়াই টায় স্থানীয় বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র প্রদর্শনী এবং বিকেল ৪ টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। একই দিন বিকেল ৫ টায় অনুষ্ঠান সমাপনী হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।