স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রদত্ত ২৬ জুন ২০২০–এর হিসাব অনুযায়ী দেশে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জন। তাঁদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৬৬১ জন। অর্থাৎ মোট শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহার ১.২৭%। অন্যদিকে সারা বিশ্বে বর্তমানে মোট আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৯৭ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৯ জন এবং তাঁদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭২ জন (প্রথম আলো অনলাইন, ২৭ জুন ২০২০)। অর্থাৎ বিশ্বে করোনায় শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহার ৫.০৫%। তার মানে, আক্রান্ত শনাক্তের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুহার বিশ্বের প্রাপ্ত হিসাবের তুলনায় প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ। বেশ কম।
তবে এর অর্থ এই নয় যে বাংলাদেশে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, বরং উল্টোটাই সত্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও আমাদের দেশে করোনায় সংক্রমণ চূড়ান্তের কাছে, তা সত্ত্বেও আগামী দিনগুলোতে সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর তা ছাড়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে করোনা টেস্টের সংখ্যা খুব কম। আরও বেশি টেস্ট দরকার। তাহলে হয়তো সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের প্রকৃত হিসাব পাওয়া যাবে। কিন্তু আপাতত আমাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষিত পরিসংখ্যান নিয়েই হিসাব করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যানেও এ ধরনের সমস্যা রয়েছ
যাক, আমরা আপাতত বলতে পারি, বিশ্বের মৃত্যুহারের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো অনেক কম মাত্রায় রয়েছে, যদিও আমাদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধা অনেক কম। এ অবস্থায় আমরা যদি ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি, তাহলে সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।
খুব সহজ তিনটি কাজ
প্রথমত, বাসার বাইরে যাওয়ার সময় আমাদের প্রত্যেকের মাস্ক পরতে হবে—মাস্ক, মাস্ক, মাস্ক।
এবং সঠিক নিয়মে মাস্ক পরা দরকার। দুই কানে ফিতা লাগিয়ে মাস্কটা থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রাখলে কাজ হবে না। নাক–মুখ পুরোপুরি ঢেকে রাখতে হবে, যত কষ্টই হোক। কারণ, এই কষ্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার চেয়ে শতগুণ ভালো। আর তা ছাড়া একজন আক্রান্ত হলে বাসার বাবা–মা–ভাই–বোন–নিজ পরিবারের সবাই আক্রান্ত হতে পারে। আশপাশের লোকজনের মধ্যেও করোনা ছড়াতে পারে। এভাবে সংক্রমণের হার বাড়বে। এটা দেশের জন্যও বিপজ্জনক। বেশি ভিড় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা দরকার। কারণ, ভিড়ের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি।
বারবার হাত ধোয়া
বাইরে থেকে বাসায় ফিরে জামাকাপড় ধুয়ে গোসল করে নেওয়া অথবা অন্তত হাতমুখ সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে ঘষে ঘষে ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া দিনে কিছুক্ষণ পরপর সাবান দিয়ে যথানিয়মে হাত ধোয়া দরকার। কারণ, চলাফেরার সময় বিভিন্ন বস্তুর উপরিতল স্পর্শ করতে হয়। বাসে চলাফেরার সময় হ্যান্ডেল ধরা, সিটে বসার সময় হাতল ধরা, অফিসে লিফটে ওঠার বোতাম টেপা বা ঘরে সুইচ টিপে লাইট–ফ্যান চালানো, পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সময়, বাজার–সদাইয়ের সময় এবং আরও হাজারোভাবে আমাদের হাতে করোনাভাইরাস লেগে যেতে পারে। এই ভাইরাস নিজে চলাফেরা করতে পারে না। কারও হাঁচি–কাশির সময় ড্রপলেটের আকারে বাতাসে তিন–চার ফুট যেতে পারে। এরপর স্পর্শের মাধ্যমে অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে পারে। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, স্পর্শের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের ছড়ানোর হার তুলনামূলক কম। হয়তো ৫–৭ শতাংশ ভয় থাকে। কিন্তু এর ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। দিনে বেশ কয়েকবার সাবানে হাত ধোয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ অভ্যাস করে তুলতে হবে। আর সাবান হলো সাধারণ সাবান। জীবাণুনাশক দামি সাবানের কোনো দরকার নেই। হাত ধোয়ার অভ্যাসের পাশাপাশি আরেকটি অভ্যাস আমাদের করতে হবে। মুখে বারবার হাত দেওয়া চলবে না। যদি মুখে হাত দেওয়া বন্ধ করতে পারি, তাহলে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক কমে যাবে।
প্রতিদিন ব্যায়াম
আমরা অনেক সময় মনে করি, কষ্ট করে ব্যায়াম করার দরকার কী। কিন্তু করোনার এই দুঃসময়ে প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা সাধারণ ব্যায়াম করলে করোনা ঠেকানো সহজ হবে। শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়ামই আসল। বুকভরে শ্বাস নিয়ে ছাড়তে হবে। আবার উপুড় হয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ বুক ভরে শ্বাস নিলে বেশি উপকার। কারণ, আমাদের ফুসফুসের বেশির ভাগ অংশ রয়েছে পিঠের দিকে। তাই উপুড় হয়ে শুয়ে শ্বাস নিলে ফুসফুসের বেশির ভাগ বায়ুথলি সচল থাকে। এটা খুব দরকার। এর পাশাপাশি পায়ের গোড়ালি, হাঁটু, কোমর, ঘাড়, হাতের কবজি, কনুইসহ শরীরের সব অস্থিসন্ধির ব্যায়াম এবং শারীরিক শ্রমের কিছু ব্যায়াম করতে হবে। এবং এটা প্রতিদিন করা দরকার। তাহলে শরীর সুস্থ থাকবে।
শরীর সুস্থ রাখার আরও অনেক নিয়ম ও পদ্ধতি আছে। এগুলো প্রতিদিন রেডিও টিভিতে প্রচার করা হয়। অনলাইনে, ফেসবুকে পাওয়া যায়। অন্তত এখানে আলোচিত তিনটি নিয়ম মেনে চললে রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। সুত্র; প্রথম আলো