আপনার শিশু যদি যৌন বিষয়াবলী নিয়ে প্রশ্ন করে তাহলে সে সেটির সঠিক জবাব পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। এটি নিয়ে কথা বলার জন্য কোন বয়সই খুব কম নয় – তাই এই বিষয়ে কীভাবে কথা বলবেন তা জেনে নিন।
ছোট বাচ্চারা তাদের শরীর এবং অন্য লোকেদের নিয়ে কৌতূহলী থাকে। তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে আপনি তাদেরকে তাদের শরীর, অনুভূতি এবং অন্যদের অনুভূতি বুঝতে সাহায্য করতে পারেন। এভাবে আপনি যৌনতা এবং মানবিক সম্পর্ক, বড় হয়ে ওঠা এবং বয়ঃপ্রাপ্তি ঘটার বিষয়ে তাদের সাথে খোলামেলা এবং সৎভাবে কথা বলার একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন।
বাচ্চাদের সাথে যৌনতা নিয়ে কথা বললেই তারা বাইরে গিয়ে সেটি করতে আগ্রহী হবে এমন নয়। যেসব শিশুর বাবা-মায়েরা তাদের সাথে যৌন বিষয়াবলী নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে তারা কারও সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে সময় নেয় এবং যখন তারা সেটি করে তখন জন্মনিরোধক () ব্যবহার করে বলে প্রমান পাওয়া গেছে।
আমার শিশুকে যৌনতা বিষয়ে কতটুকু জানাব?
এটি আপনার শিশুর ওপর নির্ভর করছে। যদি তারা আপনার উত্তরে সন্তুষ্ট থাকে এবং আরও প্রশ্ন না করে তাহলে আপনি সম্ভবত তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণে জানিয়েছেন। যদি তারা আরও প্রশ্ন করে তাহলে তাদেরকে এ বিষয়ে আরও কিছু তথ্য দিন।
আপনাকে বিশদ বর্ণনা দিতে হবে না। যেমন ধরুন, আপানার তিন বছর বয়সী মেয়ে জিজ্ঞেস করল যে তার ভাইয়ের মত তার পুরুষাঙ্গ নেই কেন। তার জবাবে আপনি বলতে পারেন যে ছেলেদের যেমন পুরুষাঙ্গ বাইরে থাকে আর মেয়েদের যোনি থাকে ভিতরে। এই জবাবে আপনার মেয়ের সন্তুষ্ট থাকার কথা।
আপনার শিশু ঠিক কী জানতে চাইছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। সে যদি জিজ্ঞেস করে যে “বাচ্চারা আসে কোথা থেকে?”, তাহলে সে আসলে কী জানতে চাইছে তা বের করার চেষ্টা করুন। এটি প্রয়োজনের চাইতে জটিল করে তুলবেন না। আপনি প্রশ্নটির জবাবে বলতে পারেনঃ “বাচ্চারা মায়ের পেটের ভেতর বড় হয়, তারপর যথা সময়ে পৃথিবীতে আসে।” এটুকুই তার জন্য যথেষ্ট হওয়ার কথা।
যদি তা না হয়, তাহলে সে জিজ্ঞেস করতে পারে “বাচ্চাটা ওখানে যায় কী করে?” তার জবাবে আপনি বলতে পারেন যে “একজন পুরুষ মানুষ সেখানে একটা বীজ বুনে দেয়।” অথবা আপানার শিশু হয়ত জিজ্ঞেস করল “বাচ্চাটা সেখান থেকে বেরিয়ে আসে কী করে”। তখন আপনি বলতে পারেন যে “সে সেখান থেকে মায়ের শরীরের বিশেষ একটা পথ, যাকে যোনিপথ বলে, সেটি দিয়ে বেরিয়ে আসে।”
যৌন বিষয়ে শিশুদের কী জানা দরকার?
তাদের জানা দরকার যে যৌনতা এবং মানবিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলাটা স্বাভাবিক একটা বিষয় এবং আপনি এতে অস্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। সে এটি আপানার গলার স্বর আর কথার ভঙ্গি থেকেই বুঝতে পারবে তাই যৌনতা নিয়ে কথা বলার সময় আর দশটা বিষয় নিয়ে যেভাবে কথা বলেন তেমন ভঙ্গিতেই কথা বলুন।
যৌনতা ছাড়াও নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার শিশুর জানা দরকারঃ
বয়ঃপ্রাপ্তি (puberty)-এর সময় তার শরীরে কী কী পরিবর্তন ঘটবে
বাচ্চা তৈরি হয় কীভাবে
কীভাবে গর্ভধারণ ঘটে এবং গর্ভনিরোধক কীভাবে তা প্রতিরোধ করতে পারে
নিরাপদ মিলনের উপায় এবং কনডম কী করে যৌনবাহিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
যৌনতা এবং সম্পর্ক বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব ও এ বিষয়ে পরামর্শ কোথায় পাওয়া যায়।
বয়ঃপ্রাপ্তি ঘটার আগেই আপনার শিশুর এ বিষয়ে তথ্য জানাটা জরুরী, তা না হলে তারা এ সময়ের পরিবর্তনগুলোর কারনে ভীত-শঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে। মেয়েদের বয়স ১০ বছর হওয়ার আগেই তাদের মাসিক সম্পর্কে এবং ছেলেদের বয়স ১২ হওয়ার আগেই তাদের সম্ভাব্য পরিবর্তন গুলোর বিষয়ে জানা থাকা দরকার। ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই মাসিক এবং পুরুষাঙ্গ দৃঢ় (erection) হওয়ার বিষয়ে না জানার কোন কারন নেই।
আপনার শিশু যদি তার বয়ঃপ্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু এবিষয়ে প্রশ্ন না করে তাহলে, প্রতিদিনকার স্বাভাবিক কথাবার্তায় সে বিষয়গুলো নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। যেমন, টিভির কোন অনুষ্ঠানের গল্প বা স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন থেকে আপনি এই প্রসঙ্গে যেতে পারেন।
আপানার শিশুকে বলুন যে সে বড় হচ্ছে, এবং সবারই ঘটে এমন কিছু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হবে এবং আপনি তাকে এর জন্য প্রস্তুত করতে চান।
যৌন বিষয়ে আপনার শিশুর জানা প্রয়োজন কেন
কোন ধরনের যৌন কার্যকলাপ শুরুর আগেই আপনার শিশুর যৌনতা, গর্ভধারণ, গর্ভনিরোধ, এবং নিরাপদ মিলনের বিষয়ে জানা জরুরী। এতে করে তারা নিরাপদ মিলনের উপায় বা কী করা উচিত নয় সে বিষয়ে সচেতন থাকবে। এভাবে তারা যখন উপযুক্ত সময় আসবে তখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
বিয়ের আগে আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীরা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়না বলে আমরা মনে করলেও ‘মায়া আপা কী বলে’ এই বিভাগের প্রশ্নগুলো থেকে ভিন্ন একটি চিত্র পাওয়া যায়। ১৪/১৫ বছরের ছেলেমেয়েরাও যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়। আমরা কম বয়সে যৌনমিলনে কাওকে আগ্রহী করে তুলছি না, কিন্তু এমনটি যে ঘটছে তা দেখে আমরা জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হচ্ছি যে “আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার ছেলে-মেয়ে কী ভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয় সেটা তারা জানে?”
আপনার সন্তান মাধ্যমিকে পড়ার সময় তার বয়ঃপ্রাপ্তি ঘটবে এবং এসময় সে অন্যান্য বাচ্চাদের কাছ থেকে ভুল তথ্য পাবে। নিরাপদ যৌন মিলন সম্পর্কে সবারই জানা উচিত।
বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্য জবাব তৈরি রাখুন
আপনি যৌনতা বিষয়ে যত খোলাখুলি আলোচনাই করুন না কেন, মার্কেটে বা বাসের ভিড়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন এবং তার মোকাবেলার জন্য একটা তাৎক্ষনিক জবাব তৈরি রাখুন। যেমনঃ “ভাল প্রশ্ন করেছ, আমরা বাসায় গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলব” বা “ভাল কথা জিজ্ঞেস করেছ, কিন্তু এবিষয়ে আমাদের নিরিবিলি কথা বলা দরকার।” এবং অবশ্যই পরে মনে করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।