• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
শিশুদের ডেঙ্গু : ডা: জ্ঞানব্রত শুভ্র

শিশুদের ডেঙ্গু : ডা: জ্ঞানব্রত শুভ্র

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত স্বাস্থ্য সমস্যা হল ডেঙ্গু।  ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে দেখা দেয়া এই রোগে বেশ কিছু মেধাবী ডাক্তার সহ ইতিমধ্যে আমরা অনেককে হারিয়েছি। Ades egypt নামক মশাবাহিত এই রোগ যতটা বড়দের জন্য মারাত্নক,শিশুদের জন্য আরো বেশি প্রানঘাতী। বাচ্চাদের অপরিনত immune system ও hemodynamics তাদেরকে দ্রুত শকের দিকে ঠেলে দেয়। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় প্রতিবছর ডেঙ্গু ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র নিয়ে হাজির হয়। এই নতুন চরিত্র বুঝে উঠে সঠিক চিকিৎসা শুরু করার আগেই আমরা এ রোগের কমপ্লিকেশনে অনেককে হারিয়ে ফেলি। যেমন এবার ডেঙ্গু এসেছে অনেকটা ছদ্দবেশে।  অর্থাৎ Dengue NS1 Antigen অথবা Dengue IgG, IgM কোনটাতে ডেঙ্গু ধরা না পড়লেও ডেঙ্গু কিন্তু ঠিকই শরীরে বসবাস করে,বংশবৃদ্ধি করে। মা বাবা বাসায় রেখে সাধারন জ্বরের চিকিৎসা করতে করতে বাচ্চা খারাপ হয়ে যায়,শকে চলে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হতে না হতেই এই ফুটফুটে বাচ্চাগুলো না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়। এক্ষেত্রে ধারনা করা হচ্ছে ডেঙ্গুর ৪ টা স্ট্রেন ছাড়াও নতুন একটি স্ট্রেন DEN-5 আমাদের কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে অথবা বিদ্যমান স্ট্রেনগুলোর জেনেটিক মিউটেশন হয়েছে যেটা conventional পরীক্ষা নিরিক্ষা দ্বারা সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশার কথা এক্ষেত্রে regular CBC,SGPT, SGOT আমাদের কিছুটা guide করতে পারে। যদি CBC তে Leukopenia(decreased WBC count) অথবা border line low leukopenia(4k/5k),neutropenia(decreased neutrophil %),decreased neutrophil and lymphocyte ratio,thrombocytopenia(decreased platelet count), Raised hematocrit Raised hematocrit,Raised SGOT than SGPT.এই সবকিছুই ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রবল করে। তাই ল্যাব পরীক্ষাতে এই
জিনিসগুলো পেলে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চাকে বেশী বেশী তরল খাবার খাওয়াতে হবে,জ্বরের সাথে পেট ব্যথা, বমি,রক্তক্ষরন,কালো/লাল পায়খানা,পাতলা পায়খানা,শ্বাসকষ্ট,নেতিয়ে পড়া,প্রস্রাব কমে যাওয়া এসব লক্ষন দেখা দিলে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থূলকায় বাচ্চা, ১ বছরের কম বয়সি বাচ্চা,যাদের পূর্বে একবার ডেঙ্গু হয়েছে,যাদের thalassemia,nephrotic syndrome এর মত অন্য রোগ রয়েছে তাদেরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এসব বাচ্চারা দ্রুত Dengue Shock Syndrome এ চলে যেতে পারে। আরেকটা বিষয় ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে আমরা সবাই platelet count নিয়ে চিন্তিত থাকি।কিন্তু আসলে platelet count এর চেয়ে blood pressure, pulse volume এবং প্রস্রাবের পরিমান বেশী গুরুত্বপূর্ন। এসব প্যারামিটার কমে যাওয়ার অর্থ হল ক্রমাগত বাচ্চার রক্তের সব তরল অংশ (plasma) রক্তনালীর বাইরে চলে আসছে। যাকে আমরা plasma leakage বলি। এভাবে চলতে থাকলে লিভার, ব্রেইন, কিডনির মত মেজর অরগান অতি দ্রুতই রক্তের অভাবে অকেজো হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে রুগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। একে আমরা Dengue Shock Syndrome বলি। বিশেষ করে জ্বর পড়ে যাওয়ার পর থেকে পরবর্তী ৩/৪ দিন shock এ যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। অন্যদিকে platelet count ১০০০০ নিচে নেমে আসলেও সেটা অতি দ্রুতই আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে এবং Dengue hemorrhagic disease এ মৃত্যু হার অনেক কম। তাই ডেঙ্গুতে যাতে কোনরকমেই পানি স্বল্পতা না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চাকে বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার যেমন পানি, ডাবের পানি,স্যুপ,ফলের রস,খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। তাই এই রোগের কার্যকরী টিকা সহজলভ্য না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধই এই রোগ থেকে বাঁচার একমাএ উপায়। বাড়ির আশপাশ পরিস্কার রাখতে হবে,মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।বাচ্চাদের ফুল প্যান্ট,ফুল হাতা শার্ট,মোজা পড়িয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে mosquito repellent মলম অথবা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। কারন এডিস মশা দিনের বেলাতেও কামড়ায়। আসুন আমরা সবাই সচেতন হই,ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করি,নিজে সুস্থ থাকি,বাচ্চাদেরকেও সুস্থ রাখি।

লেখক-ডা:জ্ঞানব্রত শুভ্র
রেসিডেন্ট ডাক্তার,ঢাকা শিশু হাসপাতাল,শ্যামলী

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।