ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. খান আবুল কালাম বলেছেন,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. খান আবুল কালাম বলেছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। তবে এতে আত্মতৃপ্তির কিছু নেই।
আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিক যদি সচেতন হয় আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে মনে করি এই সংক্রমণ অনেকটা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। রোববার মোবাইল ফোনে সময়ের আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। প্রায় ১০ মিনিটের বেশি সময়ের আলাপচারিতায় বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত করোনাভাইরাস বিষয়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে। তার দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, একজন মানুষ যদি প্রতিদিন এক ঘণ্টা পরপর ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে ফেলে আর সতর্কতা অবলম্বন করে তা হলে অনন্ত কিছুটা হলেও সে নিরাপদ থাকবে। তবে যাদের বয়স বেশি আর অতীতের যদি কোনো রোগ থাকে তা হলে তাকে আরও সাবধান হতে হবে। বাসা থেকে তার বের হওয়া একেবারেই উচিত নয়। যদি কোনো জরুরি প্রয়োজনে যেতেই হয় তা হলে তিনি যেন অ্যাপ্রোন ও মাস্ক পরে বের হন। তবে এখন ১৪ দিন ঘরে থাকাই বেশি নিরাপদ।
আরও পড়ুনঃ চারটি বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি জানান, অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হয়। এসব গুজব থেকে দূরে থাকাই উত্তম। এক সময় আমরা পরাধীন দেশের বাসিন্দা ছিলাম। এখন আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগারিক। আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে আমরা কি মাত্র কয়েকদিন বন্দি জীবন থাকতে পারব না? দেশের স্বার্থে সবাইকে এখন এই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে শুদ্ধাচার প্রয়োজন রয়েছে। এই এখন প্রতিদিন কয়েকবার হাত ধোয়ার যে নিয়ম তা প্রতিদিনের জীবনের শুদ্ধাচারের একটি অংশ। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় নিজের মধ্যে সংযত রাখার বিষয়টিও জীবনের অন্যতম শুদ্ধাচারের অংশ।
অনেকের জ্বর হচ্ছে, সর্দি-কাশি হচ্ছে এ ক্ষেত্রে ডা. খান আবুল কালাম বলেন, এতে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কাছাকাছি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে। করোনাভাইরাস, এটি ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে হ্যাঁ, যে কয়েকটি উপসর্গ রয়েছে এর মধ্যে জ্বর অন্যতম। তবে এর সঙ্গে কাশি, গলাব্যাথা যুক্ত হচ্ছে। তবে যার জ্বর বেশ কয়েকদিন ধরে থাকবে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে পরীক্ষা করতে হবে।
বর্তমান সময়ে নিজেদের মধ্যে কোয়ারেন্টাইন অভ্যাসটি অত্যন্ত ভালো। এতে হয়তো নিজে যেমন নিরাপদ থাকা সম্ভব, অন্যদেরও নিরাপদ রাখার ব্যাপারে সহায়ক হয়।
থাই রাজার কোয়ারেন্টাইনে ২০ সুন্দরী!
পিপিই সবার জন্য প্রযোজ্য কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. খান আবুল কালাম বলেন, যারা রোগীর চিকিৎসা দেবেন তাদের জন্য অপরিহার্য। আর যারা ওষুধের দোকানে কাজ করেন তাদের জন্য পিপিই বাধ্যতামূলক না হলেও তাদের ক্রেতাদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো। যিনি ওষুধ কিনতে আসবেন তারা যদি দূরত্ব বজায় রেখে ওষুধ কেনেন তা হলে সবার জন্য নিরাপদ। এখন তো বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল দোকানে ক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রেখে তারা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন।
গ্রাম-গঞ্জে এখন আদা, কালিজিরা ও কমলালেবুর বিক্রির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ডা. খান আবুল কালাম বলেন, শুধু এখনকার কথা বলবেন কেন, অনেক আগে থেকে কারও কোনো জ্বর হলে কিংবা কাশি হলে অথবা গলা খুসখুস করলে আদার গরম গরম চা খাওয়ার প্রবণতা ছিল। এতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। সে ধারণা থেকে এখন মানুষ এই আদা চা খাচ্ছে। কালিজিরা ও লেবু খাচ্ছে । এর সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, এসব উপকরণ এখন মানুষের কাছে স্বস্তিদায়ক।
পড়লে জানতে পারবেনঃকরোনা পরীক্ষা হবে মাত্র ৫ মিনিটে
করোনাভাইরাস শনাক্ত করার ব্যাপারে দেশের হাসপাতালগুলো কতটুকু প্রস্তুত রয়েছে? এ প্রশ্নে তিনি অত্যন্ত সাবলীল ভঙ্গিতে জানান, এখন তো অনেক হাসপাতাল রোগ শনাক্ত করার জন্য যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে। তবে আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে যেহেতু বিভিন্ন রোগের রোগীরা আসে, সেজন্য একটু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাই বলে আমরা চুপচাপ বসে নেই। আমাদের কাছে সেই ধরনের কোনো রোগী এলে প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সহায়তা দিই।
দেশের তাপমাত্রার সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. খান জানান, তাপমাত্রার সঙ্গে করোনার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, আমাদের ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে আসবাবপত্র সব কিছু ভাইরাসমুক্ত রাখার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এই ভাইরাস কোনো স্থানে কত সময় অবস্থান নেয় তা ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে গবেষণা করা হয়েছে। সুতরাং সবকিছু জীবাণুমুক্ত রাখাই হবে এখন আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
দেশে করোনাভাইরাসের সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে একজন চিকিৎসক হিসেবে ডা. খান আবুল কালাম জানান, অনেক দেশের তুলনায় এখনও আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা কম। একই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও কম। তাই বলে আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চলাফেরা করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজেকে আরও কিছুদিন নিরাপদ রাখতে হবে। বাসায় বসে ও সবার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে এ কাজটি করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে যে ১৪ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে তা পর্যাপ্ত কি না, এ প্রসঙ্গে একজন চিকিৎসক হিসেবে তার অভিমত হচ্ছে, আরও কিছুদিন বাড়ানো হলে ভালো হয়। তবে এটি সরকারই নির্ধারণ করবে।