ধোয়ার পর হাত শুকানোর বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। হাত ধোয়া নিয়ে চারদিকেই হইচই চলছে। তবে ধোয়ার পর তা শুকানো নিয়ে তেমন আলোচনা নেই বললেই চলে। ধোয়ার পর হাত মুছতে বা শুকাতে তোয়ালে, গামছা, রুমাল, হ্যান্ড ড্রায়ার, টিস্যু ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার হয়। অনেকেই আবার কোনোটারই তোয়াক্কা না করে এমনিতেই শুকিয়ে যাবে সে ভরসায় ছেড়ে দেন। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের এই দিনগুলোতে হাত শুকানোর নিরাপদ উপায় নিয়ে হয়েছে গবেষণা, সঙ্গে ছিল যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ লিডস’য়ের গবেষক দল। খবর বিডিনিউজের।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন ধরনের হাত শুকানোর পদ্ধতি অবলম্বনে শৌচাগার থেকে হাসপাতালের ভেতর পর্যন্ত ভাইরাস বা সকল জীবাণু ছড়ানোর মাত্রায় কতটা পরিবর্তন পাওয়া যেতে পারে সেটা বের করা। এজন্য চারজন সেচ্ছাসেবক তাদের গ্লাভস পরা হাতে ‘ব্যাক্টেরিওফেইজ’ নামক একটি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটান। এই ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়াকে আক্রমণ করে এবং মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারেনা।
সংক্রমণ ঘটানোর পর কেউই হাত পরিষ্কার করেননি। পর্যাপ্ত পরিমাণ না ধোয়া হাতের নমুনা হিসেবে ব্যবহারের জন্যই এমনটা করা হয়। আর তাদের হাত শুকানো হয় ‘পেপার টাওয়াল’ এবং ‘জেট এয়ার ড্রায়ার’ দিয়ে। এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয় একটি হাসপাতালের গনশৌচাগারে। প্রত্যেক সেচ্ছাসেবক অ্যাপ্রন ব্যবহার করেন, যা থেকে পরিমাপ করা হবে হাত শুকানোর সময় জামা-কাপড়ে কতটা সংক্রমণ হতে পারে তার মাত্রা। আর নমুনা সংগ্রহ করা হয় ওই গনশৌচাগার থেকে ‘ওয়ার্ড’ পর্যন্ত। সেচ্ছাসেবকরা যেসব স্থান স্পর্শ করেছেন সবখান থেকেই নমুনা নেওয়া হয়। গবেষকরা দেখেন, ‘পেপার টাওয়াল’ ও ‘জেট এয়ার ড্রায়ার’ দুটোই হাত থেকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভাইরাস সংক্রমণ কমিয়েছে।
গবেষকরা বলেন, ১০টির মধ্যে ১১টি স্থানের নমুনাতেই ‘জেট এয়ার ড্রায়ার’ ব্যবহারের পর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি সংক্রমণ দেখা গেছে। তুলনা করা হয়েছে অবশ্যই ‘পেপার টাওয়াল’ ব্যবহারের পর কতটা সংক্রমণ দেখা গেছে তার সঙ্গে।
‘জেট এয়ার ড্রায়ার’ ব্যবহারের পর নমুনা সংগ্রহ করা সকল স্থানেই ‘ফেইজ’ সংক্রমণ পাওয়া যায়। তবে ‘পেপার টাওয়াল’ ব্যবহারের পর ‘ফেইজ’ সংক্রমণ মেলে মাত্র ছয়টি স্থানে। এছাড়াও ‘পেপার টাওয়াল’য়ের তুলনায় ‘জেট এয়ার ড্রায়ার’ ব্যবহারের পর সবখানেই ১০ গুন বেশি মাত্রায় সংক্রমণ পাওয়া যায়। আবার জামা-কাপড়েও সংক্রমণের মাত্রাও ‘পেপার টাওয়াল’য়ের তুলনায় ‘জেট এয়ার ড্রায়ার’য়ের ক্ষেত্রে পাঁচগুণ বেশি। ব্যবহারের পর ‘অ্যাপ্রন’গুলো যে চেয়ারের হাতলে রাখা হয় সেই হাতলে সংক্রমণ দেখা গেছে শুধু যেটায় ‘জেট এয়ার ড্রায়ার’ ব্যবহারকারীর ‘অ্যাপ্রন’ রাখা হয়েছিল সেটাতেই।
এথেকে বোঝা যায়, হাত শুকনো থাকার পরও যদি তাতে ‘মাইক্রোবস’ থেকে যায় তবে সেখান থেকেও তা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। শুধু তাই নয়, হাত শুকানোর সময় কাপড়ে তা ছড়িয়ে গেলে সেই কাপড় থেকেও ছড়িয়ে পড়া সম্ভব।
গবেষকরা বলেন, কীভাবে হাত শুকানো হচ্ছে তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে হাতে কতটা ‘মাইক্রোবায়াল’ সংক্রমণ রয়ে যেতে পারে, সেকথা এখানে স্পষ্ট। আর ‘পেপার টাওয়াল’য়ের তুলনায় ‘জেট এয়ার ড্রায়ার’ ব্যবহারে সংক্রমণের মাত্রা যে বেশি সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই হাত ধোয়ার পর তা মুছতে বা শুকাতে ‘পেপার টাওয়াল’ ব্যবহার করাই বেশি নিরাপদ হবে। আর এই গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রুখতে সামান্য হলেও উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।