• ঢাকা
  • রবিবার, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মে, ২০২৪ ইং
বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের দ্বন্দ্ব চরমে!

কৃষক লীগের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান। যেখানে স্থানীয় কোন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের দেখা যায় না।

এন কে বি নয়ন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ বনাম কৃষক লীগ। কারো সাথে নেই কোন সম্পর্ক। মূল দল আর সহযোগী সংগঠন হলেও দুই দল দুই দিক। সব মিলিয়ে দুই দলের দ্বন্দ্ব এখন চরমে। আর দ্বন্দ্বের রুপ নিয়ছে প্রকাশ্যে। মূল দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৃষক লীগের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। কৃষকলীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হলেও মূল দলের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। আওয়ামী লীগের ধার ধারে না কৃষক লীগ। মূল দলের প্রধান নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে দলটি এককভাবে চালাচ্ছে তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডসহ সকল প্রকার অনুষ্ঠানাদি সম্পর্কে অভিভাবক সংগঠন হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেন না স্থানীয় কৃষক লীগ। এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের।

আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, আমরা তাদের কোন কর্মকান্ড সম্পর্কে অবগত নই। তারা জানানোর প্রয়োজন মনে করে না। তাই কৃষক লীগের ‘মনগড়া’ ওই কমিটি ও তাদের কোন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেই। আর স্থানীয় কৃষক লীগ নেতাদের দাবি আওয়ামী লীগের এক নেতাকে দাওয়াত দিলে আরেক নেতা অসন্তুষ্ট হন। তাই আওয়ামী লীগের কোন নেতাকেই আমরা কোন প্রোগ্রামে দাওয়াত দেই না।

সুত্রমতে, ২০১৬ সালে অনুমোদিত আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫-এর ২ ধারার (ক) উপধারায় সহযোগী সংগঠন হিসেবে কৃষক লীগসহ সাতটি সংগঠনের নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বোয়ালমারী কৃষক লীগ চলছে তাদের নিজস্ব ভাবধারায়।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দীর্ঘদিন ধরে দুই দলের মধ্যে দুরত্ব সম্পর্ক বিরাজ করছে। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পৌর কৃষক লীগের এক কর্মী সমাবেশের মাধ্যমে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন নিয়ে এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে জানানো হয়নি এবং দাওয়াতও দেননি। এর আগে চলতি বছরের ২২ মার্চ উপজেলা কৃষক লীগের ৩১ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে ওই কমিটি করা হয়। এছাড়াও এ পর্যন্ত সকল ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বাদ রাখা হয়েছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবী। তাই আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ডে কৃষকলীগকে ডাকা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

কৃষক লীগের দলীয় সূত্রে জানায়, পৌর শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন উপলক্ষে শহরের ওয়াপদা মোড় সংলগ্ন উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মো. আকরামুজ্জামান মৃধা রুকুর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।(যদিও কৃষক লীগের নেতাদের দাবী এটা কৃষক লীগের দলীয় কার্যালয়) এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী।

সমাবেশে চতুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুনীর হোসেনকে আহ্বায়ক ও শফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে মোট ৩১ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়। জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরযুক্ত ওই প্রস্তুতি কমিটিকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে পৌর কৃষক লীগের আহবায়ক মো.মুনীর হোসেন বলেন, কর্মীসভা ও সন্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বিধায় আওয়ামী লীগের নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। পুনাঙ্গ সন্মেলনের সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হবে।

মূলদল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ব্যাপক ক্ষোভ, অভিযোগ ও দুই দলের দ্বন্দ্ব বিষয়ে উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মো. আকরামুজ্জামান মৃধা রুকু বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেও ফাঁক রয়েছে। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব আছে। কতজনকে দাওয়াত দেওয়া সম্ভব। এক নেতাকে দাওয়াত দিলে আরেক নেতা রাগ হন। অসন্তুষ্ট হন। তাই পৌর কৃষক লীগের ওই প্রোগ্রামে জেলা কৃষক লীগ নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন নেতাকেই দাওয়াত দেইনি।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার দাস(লক্ষ্মণ) বলেন, আমাদের সঙ্গে কারো দুরত্ব নেই। বিষয়টি জানার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা হয়েছে। এটা যাস্ট একটা মিস্টক হয়েছে। পরবর্তীতে আর এমন হবে না।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি শেখ শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো পরামর্শ বা নির্দেশনা উপজেলা কমিটিকে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশ কাটিয়ে এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অবহিত না করাটা ঠিক না। কৃষক লীগের নেতারা কাজটি সঠিক করছে না। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরোধ থাকায়, কোন্দল এড়াতে এমনটি করে থাকতে পারেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মুন্না বলেন,এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি ব্যাক্তিগতভাবে অবগত নই। খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি জানাতে পারবো। তবে তিনি আরো বলেন আমরা যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম সে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে দেখিনি এটা ঠিক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকীর মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করে বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মো. মিজানুর রহমান মৃধা মিলন বলেন, আমি বোয়ালমারী উপজেলা কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। কিন্তু পৌর কৃষক লীগের কমিটি গঠনসহ তাদের কোন কর্মকান্ডে আমাদের জানানো হয় না। তাই এ ব্যাপারে অবগত নই।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, বোয়ালমারীতে কৃষক লীগ গড়ে উঠেছে সাবেক সাংসদ ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলামকে কেন্দ্র করে। যা তার মুষ্টিমেয় কয়েকজন অনুসারীদের একটা সিন্ডিকেট। এর পর পাল্টাপাল্টি কমিটিও হয়েছে। এখন যারা কমিটিতে আছেন এবং বর্তমান কৃষক লীগের কমিটির স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই কথাটি সত্য। যা আওয়ামী লীগের কোন কাজেকর্মেও আসে না। এ কমিটি মুলতঃ কাজী সিরাজের ব্যাক্তিগত গুনগান আর কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। আর এভাবেই মূল দল আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে তাদের ব্যাক্তিগত ও ইচ্ছামতো কর্মকান্ড করে চলছেন।

এ প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এমএম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া বলেন, স্থানীয় কৃষক লীগ সম্পর্কে কোন বিষয়ে আমরা অবগত নই। কৃষক লীগের কমিটি গঠন থেকে শুরু করে কোনো কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আওয়ামী লীগকে জানানো হয় না।মূল দল আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে তারা সবকিছু তাদের ইচ্ছামতো এককভাবে করে। তাই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হলেও কৃষক লীগের মনগড়া এ সব কমিটিকে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকাণ্ডে ডাকা হবে না। এক কথায় স্থানীয় কৃষক লীগের ‘মনগড়া’ ওই কমিটির সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন যোগাযোগ অথবা কোন সম্পর্ক নেই।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।