আজম আমির আলী@
আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু ও সহপাঠী আজম আমীর আলী এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। একে একে সহপাঠী বন্ধুরা ইহলোক ছেড়ে পরলোকে চলে যাচ্ছে।
আমি ১৯৫৫সালে ফরিদপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হই।আমীর আলী সম্ভবত ১৯৫৬ সালে সিক্সে ভর্তি হয়।সেই থেকে আলাপ ও বন্ধুত্ব।
সে সময় আমারা প্রচুর ডিটেক্টিভ বই পড়তাম। এই বই পড়া গ্রুপের মধ্যে আমীর আলী একজন। আমরা বই বিনিময় করে বই পড়তাম। একে অপরের সাথে বই নিয়ে আলাপ করতাম। সে সময় থেকে আমীর আলীদের গোয়ালচামটের বাসায় আমার যাওয়া আসা।
প্রায় দিন বিকেলে আলিমুজ্জামান ব্রীজে দুজনে মিলিত হয়ে কুমার নদীর দৃশ্য দেখতাম ও গল্প করতাম। এই ছোট্ট শহরের আলিমুজ্জামান ব্রীজে অনেকেই হাঁটতে হাঁটতে এসে নদীর শীতল বাতাসে উপভোগ করতেন। গল্পের সঙ্গে থাকত চিনে বাদাম বা ঝুড়িভাজা। সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতাম আমাদের ঝিলটুলির বাসায়। আব্বার কড়া নিষেধ ছিল মাগরিবের আজানের পরে বাইরে থাকা যাবেনা। আমীর আলী ব্রীজের পশ্চিম দিকে হেঁটে রাস্তার ডানের একটি পুকুরের পাড় ঘেষে বাসায় পৌছত। এখানেই ওদের বাড়ীর উল্টোদিকে একটু পুবে জুলফিকার আলীর উদ্যোগে বড় একটি মসজিদ হয়েছে। ওদের বাড়ির পুব উত্তরে চুন্নু মিয়া চালু করে জোনাকি হোটেল।
আমি ফিরে যেতাম শহরের পূর্ব দক্ষিনে অবস্থিত আমাদের ঝিলটুলিস্থ বাস ভবনে। আমাদের বিল্ডিং ঘেষা পশ্চিমে ছিল জয়শ্রী কুটির। এখন এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ।
ফরিদপুর শহর আকারে একটি ছোট্ট শহর।সাইকেল ও রিক্সা ছিল যাতায়াতের ব্যবস্থা। ঘোড়ার গাড়ি তখন হ্রাস পেয়েছে। অল্পই ছিল ঘোড়ার গাড়ি। গরুর গাড়িতে মাল বহন করা হত। চর কমলাপুর থেকে ঘোড়ার পিঠে করে চালের বস্তা আসত শহরের চালের আড়তে।
আলিমুজ্জামান ব্রীজ শহরকে পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত করে রেখেছিল।
আমি পুবে থাকতাম আর আমীর আলী পশ্চিমে। আমরা প্রায় প্রতিদিন বিকেলে মিলিত হতাম আলিমুজ্জামান ব্রীজে।
আনম সোবহান – সাংবাদিক, লেখক,গবেষক।
(স্মৃতি চারণটি স্যারের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহিত)