করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যাতে না বাড়ে সেজন্য ঈদের আগে না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের অন্যতম সেরা শপিংমল বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক। বায়তুল মোকাররমসহ বেশ কিছু মার্কেটও বন্ধ থাকছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার নিশ্চিয়তা দিয়ে ১০ মে থেকে সীমিত আকারে খুলছে দেশীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘আড়ং’। এছাড়া সীমিত আকারে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের জুতা তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান এপেক্স। একইভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বহুজাতিক জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাটাও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু সরকার আগামী ১০ মে থেকে দোকান খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সে কারণে আমরা সেই সুযোগ নেবো। তবে শপিং মল বন্ধ থাকায় অথবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে কিছু স্টোর বন্ধ থাকতে পারে। সারা দেশে বাটা’র ২৬৪ স্টোর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সব কর্মচারী, ভোক্তা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সুরক্ষা ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি।
এদিকে, শর্তসাপেক্ষে শপিংমল খোলার বিষয়ে সরকারের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১০ মে থেকে সীমিত আকারে খুলবে দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘আড়ং’। প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশে থাকা ২১টি আউটলেটের মধ্যে ১৭টি আউটলেট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আড়ংয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, আউটলেট খোলার ক্ষেত্রে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি গ্রাহক ও বিক্রয়কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি। গ্রাহকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রথমত দূরত্ব মানার বিষয়টি নিশ্চিত করছি, তারপর কেনাবেচা।
তিনি বলেন, প্রতি ঘণ্টায় কয়জন গ্রাহককে আমরা সেবা দিতে পারবো তার একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। দূরত্ব সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করতে অগ্রিম বুকিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে কোনও গ্রাহক কোনও আউটলেটে প্রিবুকিং ছাড়া আসতেই পারবে না। প্রি বুকিং এর জন্য কয়েকটি পোর্টাল এর উদ্বোধন করা হবে। যে পোর্টালে ক্রেতাদের জন্য আউটলেট এবং সময় নির্ধারণ করে দিয়ে একটি এসএমএস দেওয়া হবে। সেই এসএমএস দেখানোর পরই কেবল ক্রেতারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রবেশের সময় প্রত্যেকটি গ্রাহকের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। কারও শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে তাকে ওই আউটলেটে কোনোভাবেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রত্যেক গ্রাহকের মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা আড়ং থেকে করা হবে। গ্রাহকরা যখন ভেতরে প্রবেশ করবেন তখন পরস্পর থেকে কমপক্ষে তিন ফিট দূরত্বে থাকা বাধ্যতামূলক করে গোল চিহ্ন করে দেওয়া হবে। আড়ংয়ের প্রত্যেক কর্মচারীকেও সর্বোচ্চ সর্তকতা মাধ্যমে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তাদের প্রত্যেককে বাসা থেকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা থাকছে।
তিনি বলেন, করোনার যেসব এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যেমন নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর বাসাবো-এসব এলাকার আউটলেট খুলবো না। এছাড়া যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের আউটলেট দুটিও মার্কেট খোলা না থাকায় বন্ধ থাকবে। সব মিলিয়ে সারাদেশে ২১টি আউটলেটের মধ্যে ১৭ আউটলেট খুলবো।
এ প্রসঙ্গে এপেক্সের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার জোহেব ইসলাম বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে ৯০ থেকে ১০০টির মতো আউটলেট খোলা থাকবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে যে গাইডলাইন দেওয়া আছে, তার পুরোটাই মেনে খোলা হবে। হ্যান্ড স্যানেটাইজার থাকবে ক্রেতাদের জন্য ও বিক্রয়কর্মীদের জন্য থাকবে হ্যান্ড গ্লাভস। ক্রেতাদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। একজন ক্রেতা সরে না যাওয়া পর্যন্ত আরেকজন ক্রেতা দূরে অবস্থান করবেন। প্রয়োজনে ক্রেতারা বাইরে থাকবেন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে যারা মার্কেট বা দোকান খোলা রাখতে পারবেন, তারা খোলা রাখবেন। যারা পারবেন না, তারা বন্ধ রাখলেও সমস্যা নেই। তিনি উল্লেখ করেন, যেসব মালিক দোকান বন্ধ রাখবেন তারা তাদের কর্মচারীদেরকে যেটুকু পারবেন বেতন দিয়ে দেবেন।
এর আগে গত সোমবার (৪ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় দোকানপাট ও শপিংমল খোলার সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আগামী ১০ মে থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খোলা যাবে। তবে তা বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারাদেশে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শপিংমলও বন্ধ রাখতে বলা হয়। সেই ছুটির মেয়াদ পর্যায়ক্রমে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার।