• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
খাটিয়া না পেয়ে বাবা কাঁধে নিলেন সন্তানের লাশ

খাটিয়া না পেয়ে বাবা কাঁধে নিলেন সন্তানের লাশ

মঙ্গলবার রাতে (৭ এপ্রিল) মৃত্যু। বুধবার সকালে দাফন। বৃহস্পতিবার ভাইরাল হলো মৃত ব্যক্তির কাফনে মোড়ানো একটি আলোকচিত্র। শোকস্তব্ধ বাবা, ভাই কাঁধে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মৃতদেহ। মৃত ব্যক্তির জন্য নেই কোনো খাটিয়া। শেষ বিদায়ে নেই সামাজিক কোনো আয়োজন।

এই ছবিই বলে দিচ্ছে, ‘রক্তের বাঁধন’ যেমন এড়িয়ে যাওয়া যায় না, তেমনি করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমাজ আরো মানবিক না হয়ে ভ্রান্ত ধারণায় এড়িয়ে যেতে চাইছে কর্তব্য।

ঘটনায় প্রকাশ, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের আব্দুস সালাম (২২) মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরেন। তিনি ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন। বাবা জবলু মিয়ার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি মেজ। এলাকায় ফিরে হঠাৎ করেই আব্দুস সালাম সর্দি-জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় গত ৭ এপ্রিল তিনি মারা যান। স্থানীয়রা করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় পুলিশ ও প্রশাসনকে জানায়। পরে ওই এলাকা লকডাউন করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। বুধবার সকালে মৃতের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। একইসঙ্গে তারা দাফনের জন্য মৃতদেহ গোসল করিয়ে দেয়। এরপরেই বাধে বিপত্তি।

পরিবার থেকে মৃতদেহ বহনের জন্য স্থানীয় কান্দাপাড়া মসজিদে খাটিয়া চাওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনের অনুমতি না মেলায় তারা খাটিয়া পাননি। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আব্দুস সালাম মারা গেছেন জেনে প্রতিবেশী, সমাজের কেউ এ সময় এগিয়ে আসেননি। কিন্তু বাবার পক্ষে সম্ভব হয়নি প্রিয় সন্তানের লাশ ফেলে চলে যাওয়ার। শোককে শক্তিতে পরিণত করেন তিনি। অশ্রু মুছে উদ্যোগ নেন সন্তানের লাশ দাফনের। ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা কাটিয়ে বাবার পাশে দাঁড়ান আব্দুস সালামের ছোট দুই ভাই খালেক মিয়া এবং আলীনূর মিয়া। বাবার সঙ্গে তারা দুজন কাঁধে তুলে নেন আব্দুস সালামের মরদেহ।

ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এই সংকটে মানুষের সামাজিক দায়িত্ব লোপ পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে দাফনের সময় স্থানীয় থানা পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

প্রতিবেশীদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের লোকজন ঘটনা জানলেও কেউ এ বিষয়ে কথা বলেননি। কারণ করোনার ভয়। নিহতের প্রতিবেশী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাইরাস আরো ছড়িয়ে পড়বে মনে করে কেউ মুখ খোলেনি। মুসলমান হিসেবে এটা ঠিক কাজ হয়নি। মসজিদ থেকে অবশ্যই খাটিয়া দেওয়া উচিত ছিল। মানুষের মৃত্যুর পর এটা তার প্রাপ্য।’

লক্ষীপুর ইউনিয়নের ৯ নং সদস্য মোহাম্মদ শরিফুল্লাহ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়ে পঞ্চায়েত থেকে বলা হয়েছিল খাটিয়া না দেওয়ার জন্য। তবে লাশ কবরস্থানে নেওয়ার জন্য ডাক্তাররা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন যাতে কোনো জায়গা লিক না করে।’

এ প্রসঙ্গে দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, ‘মানুষ যতটা বলছে, আমার মনে হয় না ঘটনা এভাবে ঘটেছে। লাশ বহন করার জন্য পরিবার খাটিয়া চায়নি। চাইলে অবশ্যই মসজিদ কমিটি দিতো। মসজিদ কমিটি না দিলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ব্যবস্থা করতাম।’

এদিকে বৃহস্পতিবার আব্দুস সালামের করোনা নমুনা সংগ্রহের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সিলেট করোনাভাইরাস ল্যাব কর্তৃপক্ষ। সেখানে তার ফল নেগেটিভ এসেছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।