দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়া খুনের মামলাসহ আরো বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট মামলায় দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমাম আবু ইবনে রজবকে গ্রেপ্তার করেছে দিনাজপুর কোতয়ালি থানা পুলিশ। একই সাথে আরো কয়েকটি মামলার আসামি দিনাজপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সুজনকেও গ্রেপ্তার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের বাহাদুর বাজার এলাকার নিজ মালিকাধীন আবাসিক হোটেল আফিয়া ইন্টারন্যাশনাল থেকে পুলিশের প্রায় ৫০ জনের একটি দল অভিযান চালিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজবকে গ্রেপ্তার করে।
এরপর দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশের একটি দল ঘন্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে শহরের সুইহারী এলাকার নিজ বাড়ি থেকে দিনাজপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সুজনকে গ্রেপ্তার করে।
আটকের পরপরই কোতয়ালি থানায় দুই আসামিকে নিয়ে আসা হলে থানা ঘেরাও করে দুই নেতার সমর্থকরা মুক্তির দাবিতে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে সবাইকে থানার সামনে থেকে বিতারিত করে। এ সময় পুরো শহর জুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
কড়া নিরাত্তায় বিকাল ৫টার দিকে কোতয়ালি থানা থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও ছাত্রলীগ নেতাকে জেলা জজকোর্টে প্রেরণ করা হয়। জেলা জজকোর্ট থেকে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দুই নেতাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়।
কোন মামলায় দুই নেতাকে আটক করা হয়েছে জানতে চাইলে দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুজন সরকার দেশ কালান্তরকে বলেন, ‘ইমাম আবু রজবের বিরুদ্ধে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়া খুনের একটি মামলা তদন্ত করত সিআইডি বিভাগ (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন বিভাগ)। ইমাব আবু জাফর রজব এর বিরুদ্ধে তারা আমাদের রিকুইজিশন দিলে আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করি।
তাছাড়াও ইমাম আবু জাফর রজব এর বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় ডাকাতির প্রচেষ্টা মামলা আছে দুইটা, বোচাগঞ্জ থানায় একটি মার্ডার মামলা আছে এবং ইমাম আবু রজবের বিরুদ্ধে আরো বেশ কয়েকটি মামলা আছে। মূলত এসব সুনির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করি। এছাড়াও সাব্বির আহমেদ সুজন এর বিরুদ্ধে লিচু বাগানকে কেন্দ্র করে একটি মামলাসহ আরো কয়েকটি মামলা আছে। এসব সুনির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতেই আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরণ করি। পরবর্তীতে কোর্ট তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।’
উল্লেখ্য, তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনরত অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখার ইসলাম রিয়েল ও সম্পাদক অরুণ কান্তি রায় গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। এতে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন নিহত হন।
খুনের ঘটনায় পরিবারের করা পৃথক দুটি মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়। নিহত মিল্টনের চাচা মকসুদার রহমান বাদী হয়ে ৩৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার এক নম্বর আসামি করা হয় তখনকার উপাচার্য রুহুল আমিনকে।
অন্যদিকে নিহত জাকারিয়ার বাবা গোলাম মোস্তফা একই বছর দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমাম আবু জাফর রজবকে এক নম্বর আসামি করে এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চনসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছিলেন।’