নওগাঁর মান্দায় গত কয়েকদিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে হু-হু করে বাড়ছে আত্রাই নদীর পানি। এ নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে এখন কিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে।
এতে আত্রাই ও ফকির্ণি নদীর উভয়তীরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত: ৫০ টি পয়েন্ট ঝুঁকিপর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এ দুই নদীর উভয়তীরের সাতটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই সহস্রাধিক মানুষ। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দুর্গত এলাকার মানুষ বন্যানিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এসব এলাকার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে।
ভাঙনকৃত বেড়িবাঁধগুলো হচ্ছে পারনুরুল্লাবাদ, পারনুরুল্লাবাদ মন্ডলপাড়া, জোকাহাট, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, বাইবোল্যা ও পাঁজরভাঙা। মঙ্গলবার রাতে ও গতকাল বুধবার সকালে এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ধান, পাট ও সবজির ক্ষেত। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের বন্যায় চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আর মেরামত করা হয়নি। এতে করে নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ভাঙনস্থান দিয়ে পানি ঢুকে দুই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে পানির প্রবল চাপে আত্রাই ও ফকির্ণি নদীর উভয় তীরের বনকুড়া, দক্ষিণ চকবালু, জোকাহাট, চকরামপুর, উত্তর চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া, নিখিরাপাড়া, করাতিপাড়া, জোতবাজার, বাগাতিপাড়া, পশ্চিম নুরুল্লাবাদ, শামুকখোল, লক্ষ্মীরামপুরসহ অন্তত: ৫০ টি পয়েন্ট চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দিনরাত কাজ করছেন স্থানীয়রা। বাঁধে রাতে বসানো হয়েছে পাহারা।
গতকাল বুধবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আত্রাই নদীর ডান তীরে পারনুরুল্লাবাদ থেকে মিঠাপুর পর্যন্ত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাত্র এক ফুট নিচে পানি অবস্থান করছে। কোথাও কোথাও মূল বাঁধ টপকে পানি পার হচ্ছে। বালুর বস্তা ফেলে পানি ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, এ দুর্যোগ মুহুর্তে সহযোগিতা করছে না পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন। রাস্তায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে আত্রাই নদীর পানি হু-হু করে বাড়ছে। আগামি ২৪ ঘন্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া পরিস্কার হলে দু’একদিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে। পানি বাড়তে থাকায় বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো তদারকি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন।
এদিকে মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোল্লা এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলামসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে বস্তাসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করে বাঁধ টিকিয়ে রাখার কাজে স্থানীয়দের সহযোগিতা করছেন। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন ইউএনও আব্দুল হালিম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিমসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হালিম বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।