• ঢাকা
  • সোমবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে মে, ২০২৪ ইং
ডায়ারিয়া ও প্রতিকার

ছবি প্রতিকী

ডায়ারিয়া কিঃ
প্রতিদিন তিন বা তার থেকে বেশিবার জলের মত পায়খানা হওয়ার রোগ হল ডায়রিয়া। পায়খানায় যদি শুধু মল ও পানি থাকে তাকে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া এবং পাতলা পায়খানার সাথে রক্ত আসলে তাকে আমাশয় বলে। ডায়রিয়া কয়েক দিন স্থায়ী হয় ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি ও লবণ বেরিয়ে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়। আবার ডায়রিয়ার সঙ্গে কখনো কখনো জ্বর, বমি অথবা পেটে ব্যথাও হতে পারে। বর্ষাকাল, বেশি গরম এবং যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়, বিশেষ করে বন্যার সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারন করে।
ডায়ারিয়ার কারণঃ
০মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ
০মুক্তজায়গা বা খোলা জায়গায় মলত্যাগ শিশু দের মধ্যে ডায়ারিয়ার এক অন্যতম কারণ। ডায়ারিয়া উন্নতশীল দেশগুলিতে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণগুলির মধ্যে
একটি। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার এটি গুরত্বপূর্ণ কারন।
ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত ডায়ারিয়া
বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া যেমন, সালমোনেলা (Salmonella, শিগেলা (Shigella flexneri), ব্যাসিলাস (Bacillus cereus), ইশ্চেরিচিয়া কোলাই (Escherichia coli), ভিব্রিও (Vibrio ) ইত্যাদি ডায়ারিয়া ঘটাতে পারে।
ভাইরাস ঘটিত ডায়ারিয়া
রোটাভাইরাস, হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস এর কারনে ডায়ারিয়া হতে পারে। এ ডায়রিয়া ভাল হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে।
ছত্রাক ঘটিত ডায়ারিয়া/কৃমি ঘটিত ডায়ারিয়া
প্রোটোজোয়া ঘটিত ডায়ারিয়া জিয়ার্ডিয়া, এন্টামিবা জাতীয় প্রোটোজোয়া ডায়ারিয়ার জন্য দায়ী।

অসংক্রমিত ডায়ারিয়া/অজানা কারণের ডায়ারিয়া
অনেক সময়ই কোন এলাকায় বা ব্যক্তির ডায়ারিয়ার কারণ জানা যায় না। দেখা যায় কোন কারণ না থাকা সত্ত্বেও (Unknown etiology) ডায়ারিয়া ঘটেছে। এরুপ একটি ঘটনার উদাহরন ব্রেইণার্ড ডায়ারিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের মেনিসোটার ব্রেইণার্ড নামক অঞ্চলে এই ডায়ারিয়ার প্রোকোপ দেখা যায়। কোন ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়া বা অন্য কোন কারণই খুঁজে পাওয়া যায় নাই।
ডায়ারিয়া কিভাবে ঘটে?
ডায়রিয়া একটি উপসর্গ যা ঘন ঘন, শোষক মলের পাশে সংজ্ঞায়িত করা হয় | এটি আপনার শরীর থেকে পানি এবং ইলেকট্রোলাইটের (যেমন, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম) ক্ষতির সাথে যুক্ত। ডায়রিয়া রোগীদের প্রায়ই অন্ত্র আন্দোলনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়রিয়াটি প্রতি দিন 3 টি আলগা বা পানির স্টুলের পাশাপাশি সংজ্ঞায়িত করা হয়। তীব্র ডায়রিয়া 14 দিন কম থাকে। বেশিরভাগ মানুষ এক সময় বা অন্য সময়ে তীব্র ডায়রিয়া অনুভব করে। স্থায়ী ডায়রিয়া 14 দিনের বেশি কিন্তু এক মাসের কম। দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া একটি মাস আর দীর্ঘ স্থায়ী হয়। স্থায়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া উভয় চিকিৎসা অবস্থার মতো আরো গুরুতর সমস্যাগুলির একটি চিহ্ন হতে পারে।
ডায়রিয়া তখন ঘটে যখন আপনার পাচক সিস্টেমের সামগ্রীগুলি পাচক পদ্ধতির মাধ্যমে এত দ্রুত সরানো যায় যে অন্ত্রের তরল শোষণ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই, বা পাচক সিস্টেম অতিরিক্ত তরল উত্পাদন করে। ফলে স্টিলগুলি অতিরিক্ত তরল থাকে, যা তাদের আলগা এবং পানির মতো করে তোলে।
ডায়ারিয়া প্রতিরোধ ও প্রতিকার
সাধারণ ডায়ারিয়া ঘটলে এটা নিজে নিজেই সেরে যায়। রোগ যতদিন চলে তত দিন রোগীকে স্যালাইন খাওয়াতে হয়। স্যালাইন শরীরে পানিশুন্যতা রোধ করে। কলেরা জীবানু দ্বারা ডায়ারিয়া হলে প্রতিদিন শরীর থেকে ২০-৩০ লিটার পানি বের হয়ে যায়। যা শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। তার যত দিন রোগ চলে ততদিন রোগীকে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। UNICEF এর মতে মলত্যাগ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ডায়ারিয়ার সম্ভবনা ৪০% হ্রাস করে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়ারিয়া প্রতিরোধের জন্য ভ্যাক্সিন আবিস্কার হয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে উল্লেখ্যযোগ্য হল কলেরা ভ্যাক্সিন। রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধেও ভ্যাক্সিন আবিস্কার হয়েছে।
ডায়রিয়া হলে করণীয়
স্যালাইন শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করে। কলেরার জীবাণু দ্বারা ডায়রিয়া হলে প্রতিদিন শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি বের হয়ে যায়, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ডায়রিয়া যত দিন থাকবে, তত দিনই রোগীকে স্যালাইন খেতে দিতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি কর্তৃক সরবরাহকৃত স্যালাইন পাওয়া যায়। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে স্যালাইন, ভাতের মাড় অথবা অন্য কোনো বিশুদ্ধ পানীয় পান করালে শরীরের লবণ ও পানির যে ঘাটতি তৈরি হয় সেটা কমে যাবে আবার ঘাটতি বেশি হলে সে ক্ষেত্রে কলেরা স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
স্যালাইন বানানোর নিয়ম
সম্পূর্ণ এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে ঢেলে দিতে হবে অতঃপর সম্পূর্ণ স্যালাইন পানিতে ভালভাবে না মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে হবে। আবার ঘরে চিনি (না থাকলে গুড়) ও তিন আঙ্গুলের এক চিমটা লবণ এক মগ পানিতে মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করা যায়।
স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম
· একটি প্যাকেট খোলার পর সেটা থেকে বানানো স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ভাল থাকে।
· ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকবার পাতলা পায়খানার পর ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
· ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকবার পাতলা পায়খানার পর ২০ থেকে ৪০ চা চামচ পরিমান খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে বা শিশুর চাহিদা অনুযায়ী খেতে দিতে হবে।
শিশুর ডায়রিয়া হলে করণীয়
শিশুর ডায়রিয়া হলে কিছু বিশেষ যত্ন নিতে হবে। যেমন:
· বারবার খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
· ছয় মাসের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ ও খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
· বেশি করে তরল জাতীয় খাবার যেমন- ভাতের মাড়, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে দিতে হবে।
· শিশুকে অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে এবং অল্প অল্প করে বারবার খেতে দিতে হবে।
· যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ খায়, তাদের ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
· স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক খাওয়াতে হবে।
· খাবার তৈরীর আগে এবং শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
· সম্ভব হলে শিশুকে অসুস্থ লোক অথবা রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে।
· বোতলের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
· সিদ্ধ করা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে।
· ছোট শিশুদের খাওয়ানোর জন্য চামচ ব্যবহার করতে হবে।
ডায়রিয়া হলে যা যা করা যাবে না
· কোনভাবেই খাবার বন্ধ করা যাবে না।
· চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না।
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নিতে হবে
· শিশুর বেশি বেশি পাতলা পায়খানা অথবা বমি হলে।
· শিশুর পাতলা পায়খানার সাথে রক্ত বের হলে।
· শিশু খাবার খেতে না পারলে।
· শিশুর চোখ বসে গেলে।
· খিঁচুনী হলে।
· শিশু অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে গেলে অথবা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে।
শিশুর ডায়রিয়া সারছে না?
শিশুদের ডায়রিয়া সাধারণত বেশিদিন স্থায়ী হয় না। স্যালাইন (পানিশূন্যতা পূরণের জন্য), ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ এবং স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো হলে সাধারনত আর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। ১ সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রায় সব বাচ্চাই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, ডায়রিয়া ভাইরাসজনিত হয় বলে অ্যান্টিবায়োটিকেরও খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু দুই সপ্তাহেও যদি ডায়রিয়া না সারে তবে ডাক্তারের পরামর্শ মত প্রয়োজনে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।