• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা মে, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরে কৃষককে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, একদিন পর উদ্ধার করল পুলিশ

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি:

‘বাড়ি থেকে ওষুধ কিনতে বের হন কৃষক ইউসুফ ব্যাপারী (৪৫)। ওষুধ কিনে অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছেলেন। পথেমধ্যে অটোরিকশা থেকে নামতেই দাড়ি-টুপি পরিহিত একজন ব্যক্তি মসজিদের জন্য কিছু সাহায্য চান। একটু সাহায্যের উদ্দেশ্যে পকেট থেকে ২০ টাকা বের করে তার হাতে দিতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন কৃষক ইউসুফ। এরপর তাকে চোখমুখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় বরিশালে।

সেখান একটি আবাসিক হোটেলের একটি অন্ধকার কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখে চেহারা পরিবর্তন করতে মুখের দাড়ি ও মাথার চুল কেটে ফেলা হয়। মুক্তিপণের দাবিতে করা হয় নির্যাতন। দেওয়া হয়নি কোনো খাবার। পরিবারের কাছে চাওয়া হয় দশ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ। পরিবার ভয়ে কয়েকদফায় ৫০ হাজার টাকা দেনও তাদের।’

কথাগুলো বলছিলেন অপহরণের পর মুক্তি পাওয়া ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঠাকুরডাঙ্গী এলাকার কৃষক ইউসুফ ব্যাপারী।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদককের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ভয়ে আঁতকে উঠছিলেন এ কৃষক। এর আগে বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১০ টার দিকে বরিশাল থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

অপহরণের শিকার হওয়া কৃষক ইউসুফ ব্যাপারী বলেন, ‘মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে গ্রামের বাড়ি ঠাকুরডাঙ্গী থেকে পাশের আটরশির একটি ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনতে যাই। এরপরই আমাকে বিশেষ কায়দায় অপহরণ করে। পরে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে গিয়ে রাখা হয় বরিশালের পোর্ট এলাকার ‘স্বাগতম’ নামক একটি আবাসিক হোটেলের ৩০২ নম্বর কক্ষে। যেখানে আমি তালাবদ্ধ ছিলাম। রুমটি ছিল অন্ধকার।’

ইউসুফ ব্যাপারী আরও বলেন, ‘এরপর আমার ব্যবহৃত ফোন বন্ধ করে রাখা হয়। আমাকে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। চেহারা পরিবর্তন করতে নির্যাতন করে মুখের দাড়ি-মাথার চুল কেটে দেয় তারা। পরে ওইদিন রাত দুইটার দিকে আমার ফোন খুলে বাড়িতে ফোন দিয়ে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাইতে বলেন। আমি বাড়িতে আমার স্ত্রীকে জানালে তারা ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেনও। সাথে আমাকে অভয় দেন যে তারা তাকে উদ্ধারে কাজ করছেন।’

অপহরণের শিকার ইউসুফ ব্যাপারীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, “আমাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেটা সৌদি থাকেন। আমার স্বামী দুপুরে ওষুধ কিনতে গিয়ে বের হওয়ার পর বিকাল পর্যন্ত বাড়িতে ফিরে না আসায় তাকে ফোন করলে ফোন বন্ধ পাই। এরপর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত সকল আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও না পাওয়াই কান্নাকাটি করি। পরে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতেই সদরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। পরে ডিবি ও সদরপুর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১০ টার দিকে আমার স্বামীকে উদ্ধার করেছেন। এতো দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন ভাবতেও পারিনি। পুলিশকে এসময় কৃতজ্ঞতা জানান এ নারী।’

ইউসুফ ব্যাপারীর মেয়ে জামাই সোয়েব হাসান বলেন, ‘আমরা পুলিশের সঙ্গে ওই আবাসিক হোটেলে গিয়ে আমার শ্বশুরকে তালাবদ্ধ অবস্থায় একটি রুমে দেখতে পাই। সে আমাদের দেখার পর চিনতেই পারছিলেন না। পরিচয় দেওয়ার পর ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে বারবার কেঁদে উঠছিলেন তিনি।’

জেলা গোয়েন্দা ডিবি পুলিশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ভাঙ্গা জোন) মোহাম্মদ সফর আলী বলেন, ‘ ফরিদপুরের এসপি মোর্শেদ স্যারের নির্দেশে ডিবি ও সদরপুর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করি। এ ঘটনায় সদরপুর থানায় একটি মামলা পক্রিয়াধীন রয়েছে।’

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘ইউসুফ ব্যাপারী ওষুধ কিনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন। পরে ডিবি ও সদরপুর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে বরিশালের স্বাগতম নামক একটি আবাসিক হোটেলের ৩০২ নম্বর কক্ষ থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সদরপুর থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এর সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। আশা করছি, অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো। ‘

প্রতিবেদক
হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি
মোবা : ০১৭৪৪৪৮৫৩০০

তাং: ১৮-০৪-২০২৪ ইং

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।