• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
দেশের ৭০ শতাংশ চাহিদা মেটায় ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর >>

দেশের ৭০ শতাংশ পেঁয়াজের বীজের চাহিদা মেটায় ফরিদপুরের পেঁয়াজের বীজ। এবারও ফরিদপুরে মাঠের পর মাঠ আবাদ হচ্ছে পেঁয়াজ বীজের। প্রতিটি খেতে শোভা পাচ্ছে সাদা রঙের ফুল। আর এই গোলাকৃতি কদম ফুলের মতো সাদা ফুলের মধ্যে লুকিয়ে আছে মুল্যবান পেঁয়াজের বীজ। পেঁয়াজ বীজের ক্ষেত যা দুর থেকে মনে হয় ভিন্ন কোন সাদা রঙের ফুল। আর সাদা ফুলের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। রঙিন স্বপ্ন। শুধু কি তাই। কেবল জেলা নয়, জেলার গন্ডি পেরিয়ে দেশজুড়ে পেঁয়াজ চাষিদের স্বপ্ন দেখায় ফরিদপুরের বীজ চাষিরা। জেলার চাহিদা মেটানোর পর এই পেঁয়াজ বীজ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

কৃষি বিভাগ জানায়, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজ দানা রোপণ শুরু করা হয়। মার্চ ও এপ্রিলে দানা থেকে ফুল পেকে কালো বীজে রুপান্তর হয়।
পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের দিক দিয়ে ফরিদপুর জেলা দেশের সেরা। সারাদেশে পেঁয়াজের বীজ সারা দেশে উৎপাদন হয় শতকরা ২৫ ভাগ। আর শুধু মাত্র ফরিদপুরে এর উৎপাদন হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। গত মৌসুমের মতো ভালো দর পেলে এবারও বিক্রয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এমন দাবি চাষিদের।

জানাগেছে, এ বছর জেলায় ১৭ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৯ শত থেকে এক হাজার মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার এখনকার বাজার মূল্য প্রায় ৬ শত কোটি টাকা।সব উপজেলায় কম বেশি বীজ উৎপাদন হয়। তবে সদরের অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নেই দেশের ৫০ শতাংশ বীজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজের রাজধানী বলা হয় সালথা উপজেলাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পেঁয়াজ বীজ চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। বীজ ঘরে তোলার জন্য চাষীদের অপেক্ষা আর প্রস্তুতি চলছে। ভালোভাবে বীজ ঘরে তুলতে পারলে বিঘা প্রতি পৌনে তিন লাখ টাকা লাভের আশা করছেন বীজ চাষিরা। ফরিদপুরের সদরপুর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সালথা ও সদর উপজেলাতে পেঁয়াজের বীজের চাষাবাদের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হবে এমনটাই আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে চাষিরা।

সদর উপজেলার চাষি জামাল তালুকদার, জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এবার আবহাওয়া ছিল অনুকূলে।বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা। বীজ ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে বিঘা প্রতি গড়ে সাড়ে তিন মণের মতো পেঁয়াজ বীজ পাওয়া যাবে। যার বর্তমান বর্তমান বাজার দর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো। যদিও সামনে বাড়তে বা কমতে পারে।

শেখ সেলিম, শেখ হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের দাবি প্রতি বছরের মতো এবারও যেন সরকার বিএডিসির মাধ্যমে চাষীদের কাছ থেকে এই বীজ সংগ্রহ করেন।

সদর উপজেলার গোবিন্দুপুর গ্রামে আরেক পেয়াজ বীজ চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন,আমাগো আবহাওয়া বীজ উৎপাদনে জন্য খুবই উপযোগী। আগামীতে আরও জমিতে ‘কালো সোনার’ চাষ করব। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো শুধু জমির মালিকদের লোন দেয়, আমার মতো বর্গা চাষিদের লোন দেওয়া হয় না। আমরা বাধ্য হয়ে এনজিও থেকে অধিক সুদে লোন নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ করি।

সদর উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষি ইনতাজ মোল্লা বলেন, প্রচণ্ড রোদ থাকার পরও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের ভাল ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিঘা প্রতি তিন থেকে পাঁচ মণ বীজ উৎপাদন হবে। গত বছরের বাজার মূল্যে ছিল প্রতি মণ এক লাখ টাকার মতো। আর খরচ প্রতি বিঘায় প্রায় ১ লক্ষ টাকা। সেই হিসাবে বিঘা প্রতি ভালই আয় হবে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের ফাহিম হোসেন, সোহরাব শেখ বলেন, এই বছর আড়াই বিঘা জমিতে বীজের চাষ করছি। খুব ভালো হইছে ক্ষেত। আশা করছি, দশ মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে।

একই গ্রামের পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন লাভলি বেগম ও ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, পেঁয়াজের বীজের কালো দানা আমাদের এলাকার ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মত। আমাদের এই অঞ্চলের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সরবরাহ করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সব চাষিদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে না। আমাদের কথা হলো, সরকারের যেহেতু বীজের দরকার তবে কেন সকলের কাছ থেকে নিবে না।

এদিকে গোবিন্দুপুর গ্রামে আরেক পেয়াজ বীজ চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকার আবহাওয়া বীজ উৎপাদনে জন্য খুবই উপযোগী। আগামীতে আরও জমিতে ‘কালো সোনার’ চাষ করবো। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ব্যাংকগুলো শুধু জমির মালিকদের লোন দেয়, আমার মতো বর্গা চাষিদের লোন দেওয়া হয় না। আমরা বাধ্য হয়ে এনজিও থেকে অধিক সুদে লোন নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ করি।

দেশ সেরা পেঁয়াজ বীজ চাষী, নারী কৃষক ফরিদপুরের সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের শাহিদা বেগম। তিনি প্রায় দেড় যুগের বেশি পেঁয়াজ বীজের চাষ করছেন। তিনি নানা পদকে ভূষিত হয়েছেন। পেঁয়াজ বীজ চাষে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করা শাহিদা বেগমের পেঁয়াজ বীজের নাম “খান বীজ”। তিনি এ বছর সেরা নারী কৃষক হিসেবে পেয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড চ্যানেল আই এগ্রো অ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও তিনি ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।

নারী কৃষক সাহিদা বেগম বলেন, দেশের মোট চাহিদার পেঁয়াজ বীজের ৪ ভাগের ১ ভাগ বীজ আমার জমি থেকে উৎপাদিত হয়। ২০২১ সালে আমার চাষ করা প্রায় দুইশত মন পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করে পেয়েছি প্রায় ৪ কোটি টাকা।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় প্রায় ৯ শত মেট্রিক টনের অধিক পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সরকারের বিএডিসির সংগৃহীত মোট পেঁয়াজ বীজের ৭০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকে উদপাদিত হয়ে থাকে। এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষিরা অধিক মুনাফা অর্জন করে থাকেন। ফলনও ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের জায়গা থেকে চাষিদের সবরকম সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবকরা তাদের কর্মস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ করার সহজ উপায় হলো পেঁয়াজ বীজ চাষ। আর পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্যও ফরিদপুরে মাটি, আবহাওয়া বেশ ভালো। ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য বেশ ভালো। আর বীজ উৎপাদন করে এসব এলাকার চাষিদের এখন আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।