• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই মে, ২০২৪ ইং
অবহেলিত কৃষকই খাদ্য নিরাপত্তায় ভরসা

মহামারীর ধাক্কায় বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক শ্রমিক। প্রবাসীরাও কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। এ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে প্রাণিসম্পদ, পাট, শস্য খাতসহ সামগ্রিক কৃষি। এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ শেষ পর্ব

কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে টান পড়েছে বৈশ্বিক খাদ্যভাণ্ডারে। এ অবস্থায় খাদ্যশস্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা ও কোটা আরোপ করেছে খাদ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো। এসব দেশের খাদ্য সুরক্ষাবাদ বা ফুড প্রটেকশনিজম নীতির কারণে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষের। বাংলাদেশে এই ঝুঁকি এড়াতে অবহেলিত কৃষকই একমাত্র ভরসা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষককে উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করতে হবে, দিতে হবে প্রণোদনা। সেই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দামও নিশ্চিত করতে হবে।

অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের মানুষের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করলেও কৃষকের প্রতি অবহেলা বা বঞ্চনার কোনো শেষ নেই। বাজার ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে এখনো শস্যের ন্যায্যমূল্য পান না কৃষক। পণ্যের বিপণন সমস্যা ছাড়াও ক্ষুদ্র আয়তনের জমি, উন্নত বীজ ও প্রযুক্তিসহ কৃষি উপকরণের অভাব মোকাবেলা করতে হয় তাদের। এছাড়া জলবায়ুজনিত দুর্যোগ ও অর্থায়ন সমস্যা তো আছেই। মহামারীর এই সময়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষকের এসব সমস্যা গুরুত্বের সঙ্গে সমাধান করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএফপিআরআই) কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই ফুড প্রটেকশনিজমের মধ্যে আছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেটির প্রয়োজন রয়েছে। কেননা ২০০৭ ও ২০০৮ সালের বৈশ্বিক ফুড প্রটেকশনিজমের কারণে বেশ কয়েকটি দেশ ক্ষতির শিকার হয়েছিল, যার মধ্যে বাংলাদেশ ছিল অন্যতম। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র কৃষকই। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষক সেই অবদান রেখেছে, এখন কৃষককে প্রতিদান দিতে হবে। এবার উপকরণ সরবরাহে সরকার খুব ভালো সফলতা দেখিয়েছে। এখন বিপণন ও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। সরকারের নীতি ও আর্থিক প্রণোদনা যেন প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এর সঙ্গে কৃষিবিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মী ও বেসরকারি খাতকে যুক্ত করতে হবে।

দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত। কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভূমিহীন, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষী এবং নারী কৃষক। পুরুষদের কৃষিকাজ ছেড়ে দেয়ার প্রবণতা যেখানে বাড়ছে, সেখানে হাল ধরছেন নারীরা। দেশের ৩ কোটি ৫৫ লাখ খানার মধ্যে কৃষি খানার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬৬ লাখ। অন্যের জমির ওপর নির্ভরশীল এমন খানার সংখ্যা প্রায় ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার বা মোট খানার প্রায় ১৯ শতাংশ। ছোট কৃষকরাই মোট ধানের প্রায় ৫০ শতাংশ উৎপাদন করেন। যদিও সরকারি অর্থায়ন কার্যক্রমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই শ্রেণীর মানুষ প্রবেশের সুযোগ পান না।

দেশের কৃষকরা এখন দানাদার খাদ্য ও অর্থকরী শস্য, ফুল ও ফলমুল, সবজি, মসলা, আলু, তেল ও ডালজাতীয় ফসল উৎপাদন করছেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসব কৃষিপণ্যের মোট উৎপাদন ছিল ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার টন। এ সময়ে দেশে কৃষক ছিলেন ২ কোটি ৫৭ লাখ ৬৬ হাজার। ফলে জনপ্রতি কৃষকের গড় কৃষিপণ্যের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ৮৫৬ কেজি। উৎপাদনের পরিমাণ আরো বাড়ানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে কৃষককে আরো প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে।

গবেষণার তথ্য বলছে, কৃষককে সংগঠিত ও প্রশিক্ষিত করে আবাদ পদ্ধতি জানানো গেলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। পাশাপাশি তাদের উৎপাদন খরচ কমে যায় এবং কম সময়ে আবাদ করতে পারে। এছাড়া কৃষকের আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকে উন্নতি হয়।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রক্ষেপণ, দেশে বছরে চালের চাহিদা থাকবে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ এবং গমের চাহিদা থাকবে ৫৫ লাখ টন। সব মিলিয়ে দানাদার খাদ্যশস্যের চাহিদা তৈরি হবে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টন। এ চাহিদার বিপরীতে চলতি অর্থবছরে কৃষক উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন ৩ কোটি ৯৯ লাখ টন।

গত কয়েক বছরের কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে যতটা নজর দেয়া হয়েছে, ঠিক ততটাই অবহেলা রয়েছে কৃষিপণ্যের বিপণনে। উৎপাদন ও আবাদ এলাকা বাড়াতে পরিকল্পনা থাকলেও সরবরাহ বা বিপণন ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বেশ অদক্ষতা রয়েছে। কৃষক বর্তমানে কয়েকশ কৃষিপণ্য উৎপাদন করলেও সরকারিভাবে সংগ্রহ করা হয় মাত্র কয়েকটি পণ্য। সরকারের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ কার্যক্রম চলে ধান নিয়ে। সেই কার্যক্রমে কৃষকের চেয়ে মিলাররা বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন। কৃষকের পণ্যের বিপণন সহজ করতে কৃষি মার্কেট গড়ে তোলা হলেও সেগুলোর অধিকাংশই কাজে আসছে না যথাযথ স্থান ও সুবিধা না থাকার কারণে। আবার ফসলের দামের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। ফলে কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব।

কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেছেন, কৃষকদের কখনই অবহেলা বা বঞ্চনার মধ্যে থাকতে দেবে না সরকার। তাদের সবসময়ই উৎপাদনশীল ও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করতে সব ধরনের আর্থিক ও নীতিসহায়তা জোরদার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কৃষকের জন্য ভর্তুকি সহায়তা ৯ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আর্থিক প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হবে। আউশ ও আমনে আলাদাভাবে বীজ ও উপকরণ সহায়তা দেয়া হবে। আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনে কৃষককে উৎসাহিত করা হচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের অন্যতম কাণ্ডারিদের সঙ্গে সম্প্রসারণকর্মীদের দৃঢ় যোগসূত্র স্থাপন করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রযুক্তি ও ফসলের জাত উদ্ভাবন ও হস্তান্তরকাজ প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেজন্য বিপণন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা ছাড়াও কৃষিভিত্তিক শিল্পের সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সম্ভাবনার পুরোটাই কাজে লাগাতে সব পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।