হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের নগরকান্দায় মহাসড়কে মুরগীর পিকআপ গাড়ী ঠেকিয়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছে থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ, লুট হওয়া মুরগী বিক্রির ২৬ হাজার ৫’শ টাকা ও একটি অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ফরিদপুরের ভাঙ্গার মুন্সীবাড়ী কুমারপাড় এলাকার মিকাত আলী খন্দকারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন দেলো (৩৩), কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির পুলের ঘাট এলাকার শুকুর আলীর ছেলে মো. মহসীন (২২), মাদারীপুরের রাজৈরের শংকরদী এলাকার হাবিবুর রহমান মাতুব্বরের ছেলে সুজন মাতুব্বর (২৪) ও গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর কুমিতপুর এলাকার মো. লাল মিয়ার ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২১)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম বলেন, গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) গাজীপুর টঙ্গীপূর্ব থানার মিরাশপাড়া এলাকা হতে প্রথমে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. মহসীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তার হওয়া মহসীন জানায় যে, ডাকাতির ঘটনায় তারা ৬ জন ডাকাতি করার জন্য একটি পিকআপ গাড়ী নিয়ে গাজীপুরের মাওনা বাঘের বাজার এলাকা হতে গত ১৩ জানুয়ারি রাত নয়টার দিকে রওনা করে প্রথমে মাদারীপুরের টেকেরহাট পৌঁছায় এবং সেখান থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানা এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরে তাদের পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাঙ্গা চৌরাস্তার মোড় হতে রাজবাড়ী জেলার উদ্দেশ্যে রওনা করে এবং রাস্তায় বিভিন্ন মুরগীর গাড়ী লক্ষ্য করতে করতে ফরিদপুর রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে পৌঁছে একটি মুরগীর গাড়ী ভাঙ্গার দিকে আসতে দেখতে পায় তারা।
এসপি জানান, তখন তারা দ্রুত তাদের গাড়ী ঘুরিয়ে মুরগীর গাড়ীর পিছু নেয়। একপর্যায়ে ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা (মানিকনগর) ব্রীজের গোড়ায় মহাসড়কের উপর পৌঁছে মুরগীর গাড়ীর সামনে তাদের পিকআপ গাড়ীটি চাপ দিয়ে থামিয়ে দেয়। এসময় দ্রুত ডাকাত দলের সদস্যরা গাড়ী থেকে নেমে মুরগীর গাড়ীর দুই পাশের গ্লাস ভেঙ্গে ড্রাইভার ও মুরগীর মালিককে টেনে নামায় ও তাদের মারপিট করে মাথায় আঘাত করে।
পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম বলেন, ডাকাতদের মধ্যে মহসীন ও দেলোয়ার মুরগীর গাড়ীতে উঠে এবং মহসিন গাড়ীটি চালিয়ে নিয়ে যায়। অন্যান্য ডাকাত সদস্যরা মুরগীর ব্যবসায়ী মোশারফের কাছে থাকা নগদ ৯ হাজার ২’শ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে তাদের গাড়ীতে উঠে দ্রুত ঢাকায় চলে যায়। পরে ঢাকার কাপ্তান বাজার এলাকায় গিয়ে ১,৭৭,০০০ টাকায় মুরগী বিক্রি করে। পরে পিকআপ গাড়ী দুইটি নিয়ে তারা গাজীপুর চলে যায়।
এসপি আরও জানান, মহসীন ডাকাতির লুণ্ঠিত মোবাইলটি আশরাফুলের নিকট বিক্রি করে। পরে মহসীনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জানুয়ারী মো. আশরাফুল ইসলাম’কে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে থেকে ডাকাতির লুণ্ঠিত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। মহসীনের দেওয়া তথ্যমতে গাজীপুরের জয়দেবপুরের বাঘের বাজার হতে আসামী সুজন মাতুব্বর একইদিন গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার নিকট হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি পিকআপ গাড়ী উদ্ধার করা হয়। অতঃপর সুজনের দেওয়া তথ্যমতে আসামী দেলোয়ার হোসেন’কে গত ২২ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নিকট হতে ডাকাতির লুণ্ঠিত মুরগী বিক্রির ২৬ হাজার ৫’শ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এসপি মোর্শেদ বলেন, সকল আসামীদের সঙ্গে নিয়ে বাকী ডাকাত সদস্যদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে গতকাল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ৯ টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা শেষে তাদেরকে নিয়ে ফরিদপুরের নগরকান্দা থানায় আনা হয়। ডাকাতির কাজে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত মুরগীর পিকআপ গাড়ীটি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান, কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান, ট্র্যাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) তুহিন লস্কর, ডিবির ওসি শেখ মো. নাসির উদ্দীন সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি রাত ১ টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা (মানিকনগর) এলাকায় মহাসড়কে মুরগী বহনকারী একটি পিকআপ ঠেকিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় পরদিন ১৫ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
প্রতিবেদক
হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি