মোঃ রমজান সিকদার, ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি -২৪/৬/২০২৩
ঢাকা-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম ফ্লাইওভারে শনিবার বেলা ১১ টার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স রেলিং এ ধাক্কা খায়। এ সময় গ্যাস চালিত অ্যাম্বুলেন্সটির সিলিন্ডার বিস্ফোরণে গাড়ির চতুর্দিক থেকে আগুন ধরে যায়। অ্যাম্বুলেন্সটির চালক মৃদুল মালো লাফ দিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারলেও ভেতরে থাকা সকলেই শত শত জনতার চোখের সামনেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ এনে অ্যাম্বুলেন্সটির ভিতর থেকে সাত জনের কঙ্কাল বের করে।
দুর্ঘটনার নিহতরা হলো, মোছাম্মৎ বিউটি বেগম ( ৩২), তার ছেলে-মোস্তাফিজুর রহমান রিফাত( ১১), তার মা তাসলিমা বেগম (৫০), তার বড় বোন-মোসাম্মৎ নাসরিন বেগম ( ৩৮), বড় বোনের ছেলে-মো:আরিফ হোসেন (১৩), মোঃ হাসিব হোসেন (৮), মেয়ে-মোছা: রাফসানা খাতুন (০১) এবং ড্রাইভার মৃদুল মালো
জানা গেছে, রাজেন্দ্রপুরে কর্মরত সেনা সদস্য মাহামুদ হাসান তার শাশুড়ী তাছলিমা বেগমকে ঢাকা ইসলামিয়া হাসপাতালে হার্টের সমস্যা জনিত কারণে চিকিৎসা শেষে ঢাকা হতে অ্যাম্বুলেন্স যোগে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা নিজ বাড়িতে স্ত্রী সন্তান সহ পরিবারের লোকজনকে এম্বুলেন্সে তুলে দেন। অ্যাম্বুলেন্সটি মালিগ্রাম ফ্লাইওভার এসে দুর্ঘটনা কবলে পড়ে পরিবারের সকলেই মারা যায়।
দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। মাদারীপুর জেলার হাইওয়ে পুলিশ সুপার ও ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফনের জন্য প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
নিহতদের লাশ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ পরীক্ষার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়।
দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা থেকে দক্ষিণ অঞ্চলের প্রবেশ গামী সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় সার্ভিস লেন দিয়ে শত শত গাড়ির যানজট নিরসন করা হয়।
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৈমুর আলম জানান, অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা থেকে একই পরিবারের সাতজনকে নিয়ে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে দুর্ঘটনাস্থল মালিগ্রাম ফ্লাইওভার উপরে ওঠার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে রেলিং এ ধাক্কা খায়। এ সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে অ্যাম্বুলেন্সটির চতুর্দিক থেকে আগুন লেগে যায়। চালক বের হতে পারলেও বাকিরা ভেতরে আটকা পড়ে। স্থানীয় জনতা আগুনের তীব্রতার কারণে এ্যাম্বুলেন্সটির কাছে যেতে পারেনি। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস ও ভাঙ্গা থানা পুলিশ স্থানীয় জনতা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। অ্যাম্বুলেন্সটি থেকে মোট সাতজনের পুড়ে যাওয়া কঙ্কাল বের করা হয়। গুরুতর আহত অ্যাম্বুলেন্স চালক মৃদুল কে উদ্ধার করে প্রথমে ভাঙ্গা ও পরবর্তীতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ড্রাইভার মারা যায়।