বুধবার করোনার টিকা কার্যক্রম উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ এখনও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। আমরা এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে শুরু করেছি। এটা ঐতিহাসিক দিন। ইনশাআল্লাহ আমরা করোনার এ স্থবির অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাব’।
বুধবার বিকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধনের সময় একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনও আমরা দ্রুততার সঙ্গে নিয়ে এসেছি। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে আমরা তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা পাব। ইতোমধ্যে ৭০ লাখ প্রস্তুত। এক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দেও কার্পণ্য করিনি। এক হাজার কোটি টাকা আগেই বরাদ্দ দিয়ে রেখেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার তো মন চাইছে, আমরাও গিয়ে টিকা নিয়ে আসি। না থাক। শেষে আগে আগে নিলে (সমালোচকরা) বলবে, নিজেরাই আগে নিয়ে নিছে।
সবাইকে না দিয়ে। সবাইকে দিয়ে নিই, তারপর নেব। ’ গতকাল বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা প্রয়োগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন, যেকোনো ভ্যাকসিন আসলে টেস্ট করার পর দেওয়া হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, কিছু লোক থাকে নেতিবাচক সমালোচনা করে। তারা নিজেরা কাউকে সাহায্য করে না, অন্যের কাজের বিরূপ সমালোচনা করে। মানুষকে ভয়ভীতি দেখায়। পত্রিকা খুললেই দেখবেন, তারা সবকিছুতে দোষ খোঁজে। ভ্যাকসিন আসবে কিনা, আসলে এত দাম কেন? কাজ করবে কিনা? তাদের ‘কিছুই ভালো লাগে না’ রোগ। অবশ্য এ রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমরা তাদেরও করোনা টিকা দেব। তাদের বলব, তারা যেন সাহস করে আসে। কারণ তাদের কিছু হলে আমাদের সমালোচনা করবে কে? তাদের সমালোচনা যতই হয়েছে, ততই কাজে আমরা উৎসাহ পেয়েছি’।
তিনি আরো বলেন, ‘করোনায় সব স্থবির হয়ে গেছে। এই করোনা চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ছেলে পর্যন্ত মায়ের লাশ স্পর্শ করেনি। আত্মীয়স্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি। এমন সংকটে আমরা মানুষের পাশে ছিলাম। আর্থসামাজিক গতিশীলতা রক্ষায় বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছি। ভ্যাকসিনও অনেক দেশের আগে আমরা দিচ্ছি। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, প্রশাসন, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন কমিটি করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার ভিডিপিও মানুষের পাশে ছিল। যারা এগিয়ে এসেছিল, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই’।
এর আগে সকালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলামের (টিটু) এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৩ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এছাড়া বাফার, ইমার্জেন্সি ও আউটব্রেক মোকাবেলায় ১ লাখ ৭০ হাজার টিকা সংরক্ষণ করা হবে। সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৬ মাসের মধ্যে মোট ৩ কোটি ডোজ টিকার সরবরাহ পাওয়া যাবে। এর বাইরে প্রয়োজন অনুযায়ী আরো টিকা কেনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের আওতায় বিশ্বের ৯২টি দেশের মতো বাংলাদেশও মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য টিকা পাবে। তাতে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসতে পারে। প্রথম পর্যায়ে দেশের জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ (মোট ১ কোটি ৫০ লাখ) মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই টিকাদানের অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে’। সুত্রঃ দেশ রুপান্তর