• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ব প্রদান করা হলে

ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।

ফাইল ছবি

করোনা ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সব দেশ যাতে এই ভ্যাকসিন সময়মতো এবং একই সঙ্গে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ব প্রদান করা হলে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ যেমন জাতিসংঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এই মহামারী আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। ’

গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনের মূল ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ভাষণের শুরুতেই স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় করোনা মহামারী ও মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট রোধে বাংলাদেশে প্রথম থেকেই ‘জীবন ও জীবিকা’ দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করার কথা তুলে ধরেন তিনি। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন। করোনাকালে খাদ্য উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের শিল্প কারখানা সচল রাখা এবং কৃষি ও শিল্পপণ্য যথাযথভাবে বাজারজাতকরণের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছে।
করোনা সংকটেও বাংলাদেশের জিডিপি ঊর্ধ্বমুখী জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯-এর কারণে বিশ^ব্যাপী উৎপাদনে স্থবিরতা সত্ত্বেও আমাদের ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশাবাদী।

অর্থনৈতিক প্রণোদনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্প, শ্রমিকদের সুরক্ষা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদান, রপ্তানি বৃদ্ধিতে ঋণ প্রদান, কৃষি ও কৃষকদের সহায়তা, কর্মসৃজনের জন্য ঋণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বীমা চালুকরণ ইত্যাদি খাত প্রণোদনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা মোট ১ হাজার ৩২৫ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।

করোনা নিয়ন্ত্রণে ৩১ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন,  কভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এ নির্দেশনা জারি করেছিলাম। করোনাভাইরাস যাতে ব্যাপকহারে সংক্রামিত হতে না পারে, তার জন্য আমরা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছি। যার সুফল হিসেবে আমরা লক্ষ করছি, ঋতু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশে যেসব রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, এবার সেসব রোগ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

অর্থনৈতিক সংকটে পড়া নাগরিকদের সহায়তা প্রদানের প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, কভিড-১৯ বিস্তারের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছি। এতে ১ কোটির বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছে। আমরা ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছি। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ ৫০ লাখ মানুষকে নগদ অর্থসহায়তা দিয়েছি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রামপর্যায়ের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনা মূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে তহবিল সংগ্রহ করে এতিম ও গরিব শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, স্কুলশিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ যারা সাধারণভাবে সরকারি সহায়তার আওতাভুক্ত নন, তাদের মধ্যে ২৫০ কোটিরও বেশি টাকা বিতরণ করি। ফলে সাধারণ মানুষকে করোনাভাইরাস খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি। দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করি। এ ছাড়া বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীাদের জন্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং সমাজের অনগ্রসর শ্রেণিসহ অন্যদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও ভাতার প্রচলন করেছি, যার মাধ্যমে প্রায় ৯১ লাখ পরিবার উপকৃত হচ্ছে।

ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ব-দ্বীপে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি। প্রযুক্তিগত বিভাজন নিরসন, সম্পদ আহরণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আমাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন কাজে লাগানো প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল এবং সদ্য উত্তরিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই আপৎকালীন, উত্তরণকাল ও উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি সহমর্মিতা ও ন্যায়সংগতভাবে বিবেচনা করার জন্য অন্যান্য দেশকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা স্বাগতিক ও নিজ দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রেখে চলেছেন। এই মহামারীর কারণে অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অনেককে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের প্রণোদনা বাবদ ৩০ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি। তবে কভিড-পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকা নিতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাঙালি জাতি অবর্ণনীয় দুর্দশা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হয়েছে। সেই কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সংগত দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছি। বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এই সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই ভাষণ তার ১৭তম ভাষণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে আমরা মানব ইতিহাসের এক অভাবনীয় দুঃসময় অতিক্রম করছি। জাতিসংঘের ইতিহাসেও এই প্রথমবারের মতো নিউ ইয়র্কের সদর দপ্তরে সদস্যদেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের অনুপস্থিতিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতিসংঘের এই সভাকক্ষটি আমার জন্য অত্যন্ত আবেগের। ১৯৭৪ সালে এই কক্ষে দাঁড়িয়ে আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সদ্য স্বাধীন দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে মাতৃভাষা বাংলায় প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিও এই কক্ষে এর আগে ১৬ বার সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিশ^ শান্তি ও সৌহার্দ্যরে ডাক দিয়েছি। সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এটি আমার ১৭তম বক্তৃতা।

এ ছাড়া জলবায়ু সমস্যা, লিঙ্গবৈষম্য নিরসন, শিশু উন্নয়ন, জাতিসংঘ শান্তিমিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণ, শান্তি ও নিরাপত্তায় নারীর ভূমিকা, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও বহুপাক্ষিকতাবাদ নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘আমরা ভবিষ্যৎ চাই, জাতিসংঘ আমাদের প্রয়োজন : বহুমুখিতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিতের মাধ্যমে’। বিশ^ব্যাপী কভিড-১৯-এর কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ^ নেতারা বিশে^র সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভার্চুয়াল অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।