• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা মে, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরে প্লাস্টিকের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্প
সনতচক্রবর্ত্তী : প্লাস্টিকের পন্যের কদর বেড়ে যাওয়ার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্প। সাধারণত গ্রামের লোকেরাই বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত। তাই এ শিল্পকে  গ্রামীণ লোকশিল্প বলা হয়। কালের বিবর্তনে এবং প্রযুক্তির বদৌলতে পুরনো এ শিল্পের ঐতিহ্য আজ আমাদের মাঝ থেকে বিলুপ্তির পথে। তার স্থানে দখল করে নিচ্ছে প্লাস্টিকের  তৈরি আসবাবপত্র। এর মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের কদর বেশী। বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিতে না পেরে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।
উৎপাদিত সামগ্রীর ন্যায্যমূল্য না থাকায় এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা। বাঁশের তৈরি সামগ্রীর কারিগররা এখন অস্তিত্ব সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। বাঁশের অভাব, প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে তাদের দুর্দিন দেখা দিয়েছে।এক সময় ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায়   বাঁশ দিয়ে ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। আর এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালো। একসময় গ্রামের ঘরে ঘরে বাঁশ শিল্পের দেখা মিললেও এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্লাস্টিক পণ্য। প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতায় বাঁশ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ শিল্পের ঠিকানা এখন জাদুঘরে।
একসময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামীণ পল্লিতে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খালই, ঝুড়ি ও হাঁস-মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। আর হাটবারে স্থানীয় বাজারে এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ-বেতের পণ্য বিক্রি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ-বেতের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ বাঁশ-বেতের কারিগররা। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।
একসময় ফরিদপুরে বিভিন্ন এলাকায়  বড় বড় বাঁশ বাগান দেখা গেলেও এখন আর বাঁশ বাগান চোখে পড়ে না। সম্প্রতি বোয়ালমারী,আলফাডাঙ্গা, মধুখালি,সালথা এলাকায় বিভিন্ন  মানুষের সাথে  কথা বলে জানা গেছে,  একসময় বিভিন্ন জাতের বাঁশ জন্মাতো। এ বাঁশ দিয়েই বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খালই, ঝুড়ি ও হাঁস-মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো।
এ-সব বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো স্থানীয়রা। নির্বিচারে বাঁশ- ঝাড় ধ্বংসের কারণে বাঁশের বংশ বিস্তার কমেছে।
বোয়ালমারী উপজেলার কামারগ্রামের  বাঁশ শিল্প কারিগর নিমাই বিশ্বাস  বলেন, ‘বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্যের উপর ঝুঁকছে লোকজন। ফলে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঁশ-বেত শিল্পের দুর্দিন কাটিয়ে সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি- বেসরকারি  উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
বাঁশ-বেতে তৈরি জিনিসের স্থানীয় পাইকারী বিক্রেতা  সাধন বিশ্বাস  বলেন, ‘একসময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল ব্যাপক। বর্তমান প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প।’
মধুখালি  এলাকার বাঁশ শিল্পের কারিগর তপন কুমার   বলেন, ‘কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় আমরা এখন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। শত প্রতিকূলতার মধ্যে পুরোনো পেশা ধরে রাখতে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় পুঁজি আর উপকরণের অভাবে সে প্রচেষ্টা থমকে গেছে। আমরা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে  ঋণ সহায়তা কামনা করছি।’

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।