হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
দিনটি মঙ্গলবার। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১১টা ছুঁই ছুঁই করছে। আকাশটা প্রখর রোদের সঙ্গে সাদা মেঘেরা খেলা করছে। দখিনা মৃদু উদাস হাওয়ায় সবুজ গাছপালাগুলো দুলছিল।
ফরিদপুর শহর থেকে ২ কিলোমিটার পূর্বে দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ’। দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসের এক পাশে বিশাল খেলার মাঠ। মাঠের একপাশে শেখ কামাল মুক্তমঞ্চ। সেখানে গ্যালারিতে বসা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে কয়েকশত শিক্ষার্থী।
সবার দৃষ্টি সামনের তৈরি মুক্তমঞ্চের দিকে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তখন বিদায়ভাষণ দিচ্ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম কুমার সাহা। আগমীকাল ১৩ মার্চ তাঁর চাকরিজীবনের অবসান। তার একদিন আগেই কলেজটির শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ গণসংবর্ধনার আয়োজন।
নিবেদিতপ্রাণ একজন শিক্ষাগুরুর এমন বিদায়-বিশ্বাস করতে পারছিলনা উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। কলেজে বর্তমানে ১৯টি সম্মান কোর্সসহ ১৯টি বিভাগে পড়ছে ২৭ হাজার শিক্ষার্থী। প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী সাগর-নদী-পাহাড় পেরিয়ে ছুটে আসে ক্যাম্পাসে। বিদায়ের করুণ সুরে সবার অন্তর ভরাক্রান্ত, বিষন্নতায় আচ্ছন্ন তাদের হৃদয় মন। হাজারো চোখ সিক্ত অশ্রু-জলে।
কলেজটির অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সমাপ্তিতে বিদায় সম্মাননার এ আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকালে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শহর ক্যাম্পাসে আয়োজিত এ বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- কলেজটির উপাধ্যক্ষ প্রফেসর এস.এম. আব্দুল হালিম।।
বিদায় সম্মাননা কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর চন্দ্রমোহন হালদারের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও অধ্যক্ষের সহধর্মিণী রমা সাহা, রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।
বিদায়ী বক্তব্যে প্রিয়শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম কুমার সাহার বাণী, “তোমাদের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ-‘ভালো করে লেখাপড়া শিখে মানুষ হও। আত্মনির্ভলশীল এবং আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ হও। সৃজনশীল সৃষ্টিশীল সৎ মানুষ হও। দেশপ্রেমিক মানুষ হও, দেশ-জাতি উপকৃত হবে। মানুষ তোমাদের মনে রাখবে।’
বিদায় সম্মাননা অনুষ্ঠান শেষে একইদিন দুপুরে রাজেন্দ্র কলেজের রিপোর্টার্স ইউনিটি ও নাট্য সংসদের অফিস কক্ষের উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ। এর আগে বিদায় বেলায় তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন কলেজটির বিএনসিসি টিম। পরে
কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা বাবু অম্বিকাচরণ মজুমদারের ম্যুরাল এঁর উদ্বোধন করেন এ অধ্যক্ষ। একইসাথে রাজেন্দ্র কলেজের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সমৃদ্ধ বইয়ের ভাস্কর্যেরও উদ্বোধন করা হয়।
বিদায় অনুষ্ঠান শেষ। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে ঘিরে ধরলো। পা ছুঁয়ে সালাম করতে করতে কারো কারো চোখ ছলছল করছিল। প্রিয় স্যারের সাথে মুঠোফোনে সেলফি তুলতেও ভুলছেনা অনেকে। এমন বিদায় ক‘জনার হয়? অধ্যক্ষ তাঁর প্রিয়শিক্ষার্থীদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আবার বললেন, ‘সৃজনশীল-আলোকিত মানুষ হও, পৃথিবী তোমাদের মনে রাখবে’।
সন্ধ্যার আগে সবাইকে রেখে ক্যাম্পাস ত্যাগ করলেন প্রিয় অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা। এটা তাঁর অবসরজনিত বিদায়। তাঁর বিদায়ে আবেগপ্রবণ শিক্ষার্থীরা। শেষ মূহুর্তে হতাশ মনে সবার রওয়ানা বাড়ির পথে, পেছন পড়ে আছে স্মৃতির ফাঁকা ক্যাম্পাস। যেখানে চলছে অদ্ভুত এক নীরবতা।
প্রতিবেদক
হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি
মোবা : ০১৭৪৪৪৮৫৩০০
তাং: ১২-০৩-২০২৪ ইং